-->

বোরো ধান তুলে হয় হালখাতা

আছাদুল আসাদ, জয়পুরহাট
বোরো ধান তুলে হয় হালখাতা
প্রতীকী ছবি

বাংলা নববর্ষের পহেলা বৈশাখের চিরাচরিত প্রথা বাঙালি ব্যবসায়ীদের হালখাতা। নতুন বছরের হিসাবের খাতা খোলেন তারা। বৈশাখের হালখাতায় ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের মিষ্টিমুখ করিয়ে বাকি টাকা আদায় করেন। এমন চিত্র ফুটে ওঠে গ্রাম বাংলার হালখাতায়।

যুগ বদলেছে, এখন হালখাতা হয় বোরো ধান কাটা মাড়াইয়ের পর। বৈশাখ মাসে আর ব্যবসায়ীরা লাল কাপড়ে মোড়ানো নতুন খাতায় বাকি আদায়ের আঁচড় পড়ে না। ব্যবসায়ীরা চেয়ে থাকেন বোরো ধান কাটা মাড়াইয়ের দিকে। কবে উঠবে কৃষকের ঘরে সোনার ফসল বোরো ধান। আসলে পরিবর্তন তো সবখানে। এ পরির্তনেরও ছোঁয়া লেগেছে বোরো ধানের হালখাতাতেও।

বোরো চাষিরা বলছেন, বোরো চাষের সময় অধিকাংশ কৃষকের হাতে টাকা পয়সা থাকে না। বোরো চাষে অনেক টাকা খরচ করতে হয়। তাই বাধ্য হয়ে মহাজনের ঘরে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় মালামাল বাকিতে কিনতে হয়।

বোরো ধান চাষে নলকূপের পানি সেচ, সার, কীটনাশক ওষুধ, হাল চাষসহ সংসারের অনেক প্রয়োজনীয় জিনিস স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কিনতে হয় বাকিতে। ধান কাটা মাড়াই শেষে, সেই ধান বিক্রি করে বাকি পরিশোধ করেন দেনাদাররা।

ব্যবসায়ীরা হালখাতার নিমন্ত্রণ পত্র ছাপিয়ে, তাতে দিনক্ষণ আর সময় উল্লেখ করে বাকি টাকার অঙ্ক লিখে পৌঁছে দেন পাওনাদারের নিদিষ্ট ঠিকানায়। অ্যাপ্যায়নে কেউ বিরিয়ানি, বুন্দিয়া, গরম গরম পুড়ি, মিষ্টি, কেউ আবার নিমকি মিষ্টি দিয়ে পার করেন হালখাতা।

বোরো ধান কাটার পর জয়পুরহাটের বিভিন্ন হাট বাজার এমনকি গ্রামের ছোট দোকানগুলোতে হালখাতার সাজ সাজ রব পড়ে যায়। কৃষকরা বৈশাখ মাসে ব্যবসায়ীদের বাকি পাওনা টাকা পরিশোধ করতে পারেন না। তাই জয়পুরহাটে হালখাতার প্রচলন শুরু হয়েছে বোরো ধান কাটা মাড়াইয়ের পর।

জয়পুরহাট সদর উপজেলার পালী গ্রামের কৃষক শাহ আলম জানান, জয়পুরহাট জেলা কৃষিনির্ভর জেলা। এ জেলায় সব কৃষি ফসলে সমৃদ্ধ জেলা। বোরো ফসল কৃষকের প্রাণ। সারা বছরের খাবার চাল আসে বোরো ফসল থেকে।

‘বোরো ধানকে ঘিরে ছেলে মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। জেলার গ্রামগঞ্জে ধান কাটা মাড়াইয়ের পর। আর হালখাতার দিন সাউন্ড বক্সে গান বাজিয়ে দোকানে দোকানে তোরণ (গেট) বানিয়ে হালখাতা তো চলে উৎসবের মতো।’

শহরের ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগের মতো বৈশাখ মাসে হালখাতা করে বাকি আদায়ের দিন আর নেই। এখন সব কিছু নির্ভর করছে কৃষি অর্থনীতির প্রধান ফসল বোরো ধান। এ ধান কাটা মাড়াইয়ের দিকে চেয়ে থাকে ব্যবসায়ী মহল। বোরো ধান বিক্রির পর বেচা-বিক্রি প্রতিবছর কমবেশি চাঙা থাকে বাজার। তাই ব্যবসায়ীরা বোরো ধানের দিকে চেয়ে থাকেন বৈশাখের শেষ সপ্তাহ আর জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ অবধি।

জয়পুরহাট শহরের কলেজ রোডের মুদি ব্যবসায়ী সাহা ট্রেডার্সের মালিক সীতারাম সাহা জানান, তার দোকান থেকে সারা বছরই জেলার বিভিন্ন এলাকার ক্ষুদ্র ও মাঝারি মুদি ব্যবসায়ীরা প্রয়োজনীয় মালামাল নগদ ও বাকিতে কিনে নিয়ে যান। তারা আবার কৃষক পরিবারে বাকিতে জিনিসপত্র বিক্রি করে থাকেন।

গ্রামের কৃষকরা বোরো ধান কাটা মাড়াইয়ের পর ওই সব ব্যবসায়িরা হালখাতা করে বাকি টাকা আদায় করেন। এরপর তারা আবার মহাজনের হালখাতায় বাকি পরিশোধ করেন।

জয়পুরহাট শহরের মাড়োয়ারি পট্টি সড়কের কাপড় ব্যবসায়ী তনুশ্রী বস্ত্রালয়ের স্বত্বাধিকারী সুজন কুমার মন্ডল জানান, বাকি আদায়ের যে হালখাতা তা আর বৈশাখ মাসে হয় না। বৈশাখে হালখাতায় বাকিদাররা বাকি পরিশোধ করতে পারে না। তাই জেলা জুড়ে কৃষকরা বোরো ধান কাটা মাড়াইয়ের পর ধান বিক্রির টাকায় বাকি পরিশোধ করতে আসে হালখাতার দিনে। এমন প্রচলন শুরু হয়েছে বোরো ধান চাষের পর থেকে।

ক্ষেতলাল উপজেলার জিয়াপুর বাজারের গভীর নলকূপের মালিক শফিকুল ইসলাম বোরো আবাদে জমিতে পানি সেচ দিয়েছেন কৃষকের। কৃষকের কাছে পানি সেচের টাকা বাকি রয়েছে। এ টাকা আদায়ে কৃষকের বোরো ধান কাটা মাড়াইয়ের পর হালখাতা করবেন। কৃষকরা হালখাতায় মিষ্টিমুখ করে খুশি মনে টাকা দিয়ে যান।

 

মন্তব্য

Beta version