ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ভারী বর্ষণের ফলে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে আবারো বৃদ্ধি পেয়েছে নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলের নদ-নদীর পানি। বিশেষ করে জেলার খালিয়াজুরী উপজেলার ধনু নদীর পানি বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
রোববার (১৭ এপ্রিল) সকাল থেকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ধনু নদীর পানি খালিয়াজুরী পয়েন্টে বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
রোববার বেলা ১২টার দিকে নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাইবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত ভোরের আকাশকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ধনু নদীর পানি বিপদসীমার দুই সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে কীর্তণখোলা ফসল রক্ষা বাঁধ অতিক্রম করে মূল হাওরে পানি প্রবেশ করার তেমন কোনো আশঙ্কা আপাতত দেখছি না।’
স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন কীর্তণখোলা ফসল রক্ষা বাঁধে অবস্থান করছেন জানিয়ে তিনি দাবি করেন, ‘এরই মধ্যে হাওরাঞ্চলের তিন উপজেলা মদন, মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরীর শতকরা ৬২ ভাগ বোরো ধান কাটা হয়ে গেছে।’
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, জেলার ১০ উপজেলায় এ বছর এক লাখ ৮৪ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে শুধু হাওরাঞ্চলে বোরো আবাদ করা হয় ৪০ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে।
নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এফএম মোবারক আলী বলেন, ‘৩৩২টি কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন ও ১০ হাজারের মতো কৃষি শ্রমিক হাওরাঞ্চলের বোরো ধান কাটার কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। এরই মধ্যে হাওরাঞ্চলের শতকরা ৬২ জমির বোরো ধান কাটা হয়ে গেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলে দ্বিতীয় দফায় ধনু নদীসহ হাওরের অন্যান্য নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা কৃষকদের ৮০ ভাগ পাকা ধান কেটে ফেলার তাগিদ দিয়ে আসছি। আশা করছি দ্রুত কৃষকরা তাদের হাওরের ফসল ঘরে তুলতে পারবেন।’
এর আগে প্রথম দফায় নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে জেলার খালিয়াজুরী ও মদন উপজেলার কয়েকটি হাওরের অন্তত ৫০০ একর নিচু জমির বোরো ধান পানিতে তলিয়ে যায়।
এ তথ্য দিয়ে এফএম মোবারক আলী বলেন, ‘তখন ধনু নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় খালিয়াজুরীর কীর্তণখোলা ফসল রক্ষা বাঁধের কয়েকটি স্থানে ফাটল ও ধস দেখা দেয়। এতে চরম ঝুঁকিতে পড়েছিল হাওরের ফসল রক্ষার বিষয়টি।
তবে জেলা প্রশাসন, জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা কৃষি বিভাগ স্থানীয় উপজেলা, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে নিয়ে বাঁধ মেরামত করে ঝুঁকি মোকাবিলা করে।’কথা হলো খালিয়াজুরী উপজেলার কীর্তণখোলা ফসল রক্ষা বাঁধ সংলগ্ন চাকুয়া গ্রামের কৃষক মৃদুল মিয়ার সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘প্রথম পর্যায়ে ধনু নদীর পানি বেড়ে আমাদের নিচু এলাকার অনেক বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাঁধেও ফাটল দেখা দেওয়ায় আমরা দিনরাত কাজ করে বাঁধ মেরামত করেছি। এরই মধ্যে ফসল হারানোর ভয়ে আমরা কাঁচা ও আধা পাকা ধান কেটে ঘরে তুলছি।’
তিনি বলেন, ‘আবারো ধনু নদীর পানি বাড়ছে। এ অবস্থায় যেকোনো সময় বাঁধ ডিঙিয়ে পানি হাওরে ঢুকতে পারে। এতে যেসব ধান এখনও কাটা বাকি রয়েছে- সেগুলো পানিতে তলিয়ে যেতে পারে।’
মন্তব্য