-->

কৃষকের ৫ টাকার শসা বাজারে ৪০

কামরুজ্জামান মিন্টু, ময়মনসিংহ ব্যুরো
কৃষকের ৫ টাকার শসা বাজারে ৪০
তারাকান্দা উপজেলার কাকনি ইউনিয়নের গোয়াতলা শসার বাজার

ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলায় শসার বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকরা পাঁচ টাকা কেজি দরে এই শসা বিক্রি করছেন। তবে শসাগুলো পাইকারি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিভিন্ন বাজারে ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এভাবে দামের কারসাজি করে পাইকাররা মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষকসহ ক্রেতারা।

গতকাল রোববার সকালে উপজেলার কাকনি ইউনিয়নের গোয়াতলা বাজারে পাইকারদের কাছে সর্বোচ্চ পাঁচ টাকা কেজিতে শসা বিক্রি হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, সিন্ডিকেট করে পাইকাররা কৃষক পর্যায়ে দাম কমিয়েছেন। এ কারণে কম দামে শসা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা।

কাকনি ইউনিয়নের মধ্যপাড়া এলাকার কৃষক বিল্লাল হোসেন ৬০ শতাংশ জমিতে শসার চাষ করেছেন। তিনি দৈনিক ভোরের আকাশকে জানান, রমজানের শুরু থেকে এক মণ শসা এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন।

তবে গত তিনদিন ধরে পাইকারদের কাছে সর্বোচ্চ পাঁচ টাকা কেজি দরে শসা বিক্রি করছেন। সে হিসাবে এক মণ শসার দাম পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ২০০ টাকা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তিনি।

একই এলাকার কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ২০ শতাংশ জমিতে শসা চাষ করেছি। শনিবার (১৬ এপ্রিল) ৪ টাকা কেজিতে ও রোববার ৫ টাকা কেজিতে শসা বিক্রি করেছি। আমাদের কাছ থেকে শসা কিনে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা উপজেলায় সরবরাহ করেন পাইকাররা।’

তিনি বলেন, ‘পাইকাররা দাম কমিয়ে দিলে আমরা খুব কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হই। এতে লোকসান হলেও বিক্রি করতে হয়। কারণ বিক্রি না করলে জমিতেই নষ্ট হবে শসা।’

পশ্চিম তালদিঘি এলাকার কৃষক আব্দুস সালাম ৫০ শতাংশ জমিতে শসা চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘পাইকারদের শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। তারা কিছুদিন ভালো দাম দেয়, এরপর হঠাৎ করে দাম তলানিতে নিয়ে আসে। আমাদের মতো কৃষকদের কিছু করার থাকে না। এজন্য বাধ্য হয়ে মণ হিসেবে শসা দিয়ে দিচ্ছি।’

গোয়াতলা বাজারে কৃষকদের থেকে নিয়মিত শসা কিনেন পাইকার মোস্তফা। শসার দাম এতো কম হওয়ার কারণ কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ শসা টঙ্গী, গাজীপুর, ঢাকার কারওয়ানবাজারে পাইকারি বিক্রি করি। কিছুদিন আগে শসার বাজার ভালো ছিল। তখন বেশি দামে কিনেছি। আমরা যেসব পাইকারদের কাছে বিক্রি করি বর্তমানে তারা জানিয়েছেন শসার বাজার মন্দা। এজন্য আমরা কৃষকদের কাছ থেকে পাঁচ টাকায় কিনে নিচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘এই শসা ঢাকায় পাঠাতে পরিবহণ ও সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে টাকা দেওয়া বাবদ আরো চার টাকা খরচ হয়। ঢাকায় পাঠাতে প্রতি কেজিতে মোট খরচ হয় ১০ টাকা। আমরা প্রতি কেজি দেড় থেকে দুই টাকা লাভ করে ঢাকার আড়তে পাঠিয়ে দেই।’

এতে কৃষকরা ঠিকছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘দাম উঠানামার জন্য আমাদের কারসাজি নেই। দূর-দূরান্তের পাইকাররা দাম কম দিলে আমরাও কম দামেই ক্রয় করি।’

সরেজমিনে শহরের গাঙ্গিনাড়পাড় এলাকার সবজি বাজার ও নগরীর শম্ভুগঞ্জ সবজি বাজার ঘুরে জানা যায়, বর্তমানে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে শসা বিক্রি হচ্ছে। যদিও খুচরা বিক্রেতাদের দাবি, আড়ত থেকে তারা প্রতি কেজি শসা ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে কেনেন। বাজারে ইজারাদারের খরচ আছে। এজন্যই এমন দামে বিক্রি করছেন।

তবে বিক্রেতাদের এমন অযুহাত মানতে নারাজ ক্রেতারা। গাঙ্গিনাড়পাড় সবজি বাজারে আসা ক্রেতা সাইফুল ইসলাম দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, ‘সবকিছুতে আমরা ক্রেতারাই ঠকছি। শক্তিশালী পাইকারি সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে না।’

ময়মনসিংহ কৃষি বিভাগের খামারবাড়ির উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মতিউজ্জামান দৈনিক ভোরের আকাশকে জানান, জেলায় চলতি মৌসুমে এক হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে শসা আবাদ হয়েছে। রমজানের শুরুতে কৃষকরা বেশ ভালো দাম পেয়েছেন।

তিনি জানান, জেলার ১৩টি উপজেলার মধ্যে তারাকান্দা, ফুলপুর ও গৌরীপুরে শসা আবাদ হয় বেশি। তবে সবচেয়ে শসার আবাদ হয় তারাকান্দায়। এ উপজেলায় এবার ২৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। সবমিলিয়ে লোকসান হলে শসা আবাদে কৃষকরা আগ্রহ হারাবে। ফলে আগামীতে কম আবাদ হলে শসার দাম অনেক বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

মন্তব্য

Beta version