দীর্ঘ দেড় বছর পর শুরু হলো সিলেটে ‘পুলিশি’ নির্যাতনে নিহত যুবক রায়হান আহমদ হত্যা মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রম। সোমবার দুপুরে মামলার প্রধান আসামি এসআই আকবরসহ (বরখাস্ত) ছয় জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ প্রক্রিয়া শুরু হলো। আগামী ১০ মে সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ দিয়েছেন আদালত।
এর আগে গত ১২ এপ্রিল অভিযোগ গঠনের তারিখ ধার্য ছিল। তবে আসামিদের পক্ষে ডিসচার্জ পিটিশন দাখিল করায় ওই দিন চার্জ গঠন হয়নি। পরবর্তী দিন ডিসচার্জ পিটিশনের শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেন মহানগর দায়রা জজ মো. আব্দুর রহিম।
বাদী পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম এ ফজল চৌধুরী ভোরের আকাশকে বলেন, সোমবার সকালে কড়া নিরাপত্তায় সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতে হাজির করা হয় বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক ইনচার্জ এসআই (বরখাস্তকৃত) আকবর হোসেন ভুইয়াসহ পাঁচ পুলিশ সদস্যকে। দুপুর ১২টার দিকে বিচারক আব্দুর রহিমের আদালতে আসামিদের হাজির করা হয়। এ সময় আসামিদের পক্ষে ডিসচার্জ পিটিশনের (খারিজ আবেদন) শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। বিজ্ঞ বিচারক এ সময় পিটিশন নামঞ্জুর করে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন।
তিনি বলেন, ‘ছয় আসামির মধ্যে চারজনের পক্ষে ডিসচার্জ পিটিশন (খারিজ আবেদন) দেওয়া হয়েছিল আদালতে। সেটি নামঞ্জুর হয়েছে। আগামী ১০ মে সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য করেছেন আদালত। ওই দিন রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা বেগমসহ আরও দু-একজন সাক্ষ্য দেবেন।
২০২০ সালের ১০ অক্টোবর দিবাগত মধ্যরাতে সিলেটের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে নগরীর আখালিয়া নেহারিপাড়ার যুবক রায়হান আহমদকে নির্যাতন করে পুলিশ। ১১ অক্টোবর সকালে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে রায়হানের স্ত্রীর করা মামলার পর মহানগর পুলিশের একটি অনুসন্ধান কমিটি তদন্ত করে ফাঁড়িতে নিয়ে রায়হানকে নির্যাতনের সত্যতা পায়। ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চারজনকে ১২ অক্টোবর সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়।
এরপর পুলিশি হেফাজত থেকে কনস্টেবল হারুনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তবে প্রধান অভিযুক্ত আকবর ১৩ অক্টোবর পুলিশি হেফাজত থেকে পালিয়ে ভারতে চলে যান। ৯ নভেম্বর সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
২০২১ সালের ৫ মে আলোচিত এ মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয় মামলার তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই। বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির বরখাস্ত হওয়া এসআই আকবর হোসেন ভূইয়া, সাময়িক বরখাস্ত হওয়া সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আশেক এলাহী, হারুন অর রশিদ, টিটু চন্দ্র দাস, ফাঁড়ির টুআইসি পদে থাকা হাসান উদ্দিন ও এসআই আকবরের আত্মীয় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার আবদুল্লাহ আল নোমানের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
অভিযোগপত্রভুক্ত ছয় আসামির মধ্যে পাঁচ পুলিশ সদস্য কারাবন্দী। অভিযোগপত্রভুক্ত ৬ নম্বর আসামি আব্দুল্লাহ আল নোমান পলাতক। গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর সিলেটের চিফ মেট্রোপলিটন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার নথি পর্যালোচনা শেষে অভিযোগপত্র গ্রহণ করা হয় এবং একমাত্র পলাতক আসামি নোমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। পরে তার মালামাল ক্রোক ও সর্বশেষ পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পর ১২ এপ্রিল চার্জ গঠনের তারিখ নির্ধারণ করেন আদালত। তবে আসামিদের পক্ষে ডিসচার্জ পিটিশনের (খারিজ আবেদন) জন্য চার্জ গঠনের তারিখ গড়ায় ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত।
এদিকে ছেলে খুন হওয়ার দীর্ঘ দেড় বছরে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু না হওয়ায় অনেকটা হতাশ হয়ে পড়েছিলেন রায়হানের মা সালমা আক্তার। তবে একটু দেরিতে হলেও শেষ পর্যন্ত বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেনে তিনি। আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছেন রায়হানের মা।
মন্তব্য