-->

‘কলার রাজ্য’ জলছত্র

জুয়েল রানা, টাঙ্গাইল 
‘কলার রাজ্য’ জলছত্র
টাঙ্গাইলের মধুপুর জলছত্র এলাকায় বসা কলার হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়

টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার জলছত্র এলাকায় সপ্তাহের সাত দিনই বসে কলার হাট। প্রতিদিন ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। এ সময় কলা ক্রেতা ও বিক্রেতাদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।

রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য জেলার ব্যাপারীরা এ হাট থেকে কলা কিনে বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ করে থাকেন। এ হাটে প্রতি সপ্তাহে প্রায় কোটি টাকার কলার কাঁদি বিকিকিনি হয়ে থাকে। এ যেন কলার রাজ্য!

সম্প্রতি জলছত্র কলার হাট ঘুরে দেখা গেছে, জেলার মধুপুর, ঘাটাইল, সখীপুর উপজেলার চাষিরা বিক্রির উদ্দেশ্যে কলার কাঁদি নিয়ে জলছত্র হাটে এসেছেন। সাইকেল, ভ্যান, অটো, পিকআপে করে কলার কাঁদিগুলো নিয়ে আসা হয়েছে। নানা জাতের এসব কলা কিনতে দূর-দূরান্তের ব্যাপারীরাও ভিড় করেছেন। চাষিদের সঙ্গে দরদামে মিলে গেলে এসব কলা বিভিন্ন পরিবহণে করে চলে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের নানা প্রান্তে।

জলছত্র কলার হাটে আসা আপন নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘কলা কিনতে বগুড়া থেকে এসেছি। এখানকার কলা খুব ভালো। এই কলার চাহিদা অনেক বেশি। এ কারণে আমরা পাইকাররা এখানে এসে কলা কিনি।’

ব্যাপারীরা জানান, প্রতি কাঁদি কলা ১৫০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে কাঁদি, স্বাদ ও মানভেদে দাম ওঠানামা করে। ছোট আকারের কলা প্রতি কাঁদি ১৫০ টাকা, মাঝারি আকারের কাঁদি ৩০০ টাকা, বড় আকারের কাঁদি সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। প্রতি সপ্তাহে কলার হাট থেকে ১০০ ট্রাক কলা দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে।

জলছত্র বাজারের ইজারাদার বারেক মিয়া জানান, এ অঞ্চলের কলার সুনাম থাকায় দূর-দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এসে কলা কিনে নেন। সপ্তাহে প্রতি হাটে প্রায় কোটি টাকার কলা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। মূলত কলাচাষি ও ছোট ব্যবসায়ীরা এ হাটে কলা আমদানি করে থাকেন। এরপর তাদের কাছ থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা সেগুলো কিনে ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে বিক্রি করেন।

জলছত্র বাজার বণিক সমিতির সভাপতি আব্দুল হামিদ জানান, রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের সব জেলার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় দিন দিন এ হাট জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এই হাটে প্রায় কোটি টাকার কলা বিক্রি করা হয়। সপ্তাহে ১০০ ট্রাক কলা দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়। প্রতি ট্রাকে ৮০০ থেকে এক হাজার কাঁদি কলা থাকে। এ ছাড়াও অটোভ্যান ও পিকআপে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কলা যাচ্ছে। মাঝারি সব গাড়িতে ৩০০ থেকে ৫০০ কাঁদি কলা যায়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চলতি মৌসুমে পাঁচ হাজার ৩৮৮ হেক্টর জমিতে কলার আবাদ হয়েছে। জেলায় এক লাখ ৫৬ হাজার মেট্রিক টন কলা উৎপাদন হয়েছে। এসব জমিতে সাগর কলা, সরবি কলা, হিম সাগর, মিহির সাগর ও অমৃত সাগরসহ নানা জাতের কলার চাষ করা হয়ে থাকে। মধুপুর, ঘাটাইল, সখীপুর, কালিহাতীসহ পাহাড়ি এলাকায় এসব কলার আবাদ বেশি হয়।

টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আহসানুল বাসার জানান, উর্বর মাটি ও অনুকূল পরিবেশ থাকায় জেলার মধুপুর, ঘাটাইল, সখীপুরসহ অন্যান্য উপজেলাতেও কলার আবাদ হয়ে থাকে। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে কলাচাষিদের উন্নত প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।

মন্তব্য

Beta version