-->
শিরোনাম

ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে ৬০০ বিঘা ফসলের ক্ষতি

রিপন দাস, বগুড়া
ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে ৬০০ বিঘা ফসলের ক্ষতি
বগুড়ার দুঁপচাচিয়ার সদর ইউনিয়নের ঘাটমাগুড়া গ্রামের একটি ধানক্ষেত

খোলাশ গ্রামের কৃষক মো. মাহবুব আলম তালুকদার। চলতি বোরো মৌসুমেও করেছেন ধানের চাষ। এ ফসলের ওপর নির্ভর করে সংসার চলে তার। তবে প্রতি বছরের ন্যায় এবারো ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার ধানক্ষেত।

তিনি বলেন, ‘প্রতি বছরের মতো এ বছরও বোরোক্ষেতের ক্ষতি হলো। ইটভাটার এ প্রভাব থেকে বাঁচতে তারা প্রশাসনের কাছে বারবার অভিযোগ জানালেও কোনো সমাধান মেলেনি।’

একই অবস্থা নিমাইকোলা গ্রামের মো. কালাম প্রামাণিকের। তার পাঁচ বিঘা জমির সবটাই পুড়ে গেছে বিষাক্ত গ্যাসে। আর কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি। কালাম প্রামাণিক বলেন, ‘প্রতি বিঘা জমি থেকে গড়ে ১৮ মণ করে ধান পাওয়া যায়। কিন্তু এবার সেখানে ৫ মণও হবে না। এর ক্ষতিপূরণ না দেওয়া হলে অনেক চাষিরা বড় ঋণে পড়ে যাবে।’

দ্দধু খোলাশ ও নিমাইকোলা গ্রাম নয়, বগুড়ার দুঁপচাচিয়ার সদর ইউনিয়নের ঘাটমাগুড়া, পাঁচতিতা ও যোগীপোথা গ্রামের অবস্থা করুণ। চারটি ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে এ পাঁচ গ্রামের অন্তত ৬০০ বিঘা জমির বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কৃষকরা জানান, বোরো মৌসুমে এসব গ্রামের একমাত্র আয়ের অন্যতম উৎস চাষাবাদ। তবে ইটভাটার কারণে প্রতি বছর তাদের জমির বেশিরভাগ ফসল নষ্ট হয়। বারবার অভিযোগ করলেও প্রশাসনের কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

গত শুক্রবার রাতে ইটভাটাগুলো থেকে ক্ষতিকর গ্যাস ছেড়ে দেওয়া হয়। এতে ভাটার পার্শ্ববর্তী ধানের জমির পাশাপাশি পুড়ে গেছে বিভিন্ন ধরনের ফলের গাছ ও সবজিক্ষেত।

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, গরম আবহাওয়ার পাশাপাশি ইটভাটার নির্গত গ্যাসের কারণে যেসব ধানের শীষ বের হয়েছে সেসব ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে যেসব জমিতে এখনো ধান বের হয়নি বা ধানের সামান্য অংশ পুড়ে গেছে, সেসব ধানের তেমন ক্ষতি হবে না।

বিভিন্ন ফসল উৎপাদনকারী এসব জমি তিন ফসলি হওয়ায় সারাবছর নানা ধরনের চাষাবাদ করা হয়। কিন্তু ধানসহ অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি আম, লিচু ও কাঁঠালসহ বিভিন্ন ধরনের ফলের গাছও পুড়ে গেছে এই ক্ষতিকর গ্যাসের কারণে।

এদিকে ক্ষতিপূরণ ও অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদের দাবিতে উপজেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেছেন ওই পাঁচ গ্রামের কৃষক। এরপর ইটভাটর পাশে ধানের জমিতে দাঁড়িয়ে দীর্ঘসময় অবস্থান করেন তারা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মো. সাজেদুল আলম বলেন, ‘ইটভাটার কারণে এ এলাকার কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা এখনো সঠিকভাবে নির্ধারণ করা হয়নি। তবে মাঠপর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কাজ করছেন। তাদের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করা হবে।’

মন্তব্য

Beta version