ইতিহাস ও ঐতিহ্য ধরে রেখেছে রাজশাহীর সিল্কশিল্প। দেশের পোশাক খাতে রাজশাহী সিল্ক একটি ব্র্যান্ড। রাজশাহী সিল্ক এখন বাংলাদেশের জিআই পণ্য। এদিকে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাজশাহীর শোরুমগুলোতে মানসম্পন্ন সিল্কের কাপড় কিনতে ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে।
বৃদ্ধি পেয়েছে সিল্কের শাড়ি, পাঞ্জাবিসহ অন্যান্য কাপড়ের চাহিদাও। গত দুই বছর করোনার ধাক্কা কাটিয়ে এবার ব্যবসার মুখ দেখছেন বিক্রেতারা। সিল্কের শোরুমগুলোতে প্রতিদিন বিকিকিনিতে জমজমাট হয়ে উঠেছে।
গত সোমবার (১৮ এপ্রিল ) রাজশাহী সপুরা সিল্কে গিয়ে দেখা যায়, নতুন নতুন শাড়িতে সাজানো হয়েছে শোরুম। বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, সকালে ক্রেতাদের আগমন কম থাকে। ইফতারের পর জমে উঠে বেচাবিক্রি। আর শুক্রবার ও ছুটির দিনে জমজমাট হয়ে উঠে।
শুধু রাজশাহী নয় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসেন ক্রেতারা। ক্রেতাদের চাহিদা থাকায় এবার আগে থেকেই সংশ্লিষ্টরা সব পণ্য পর্যাপ্ত পরিমাণে তৈরি করেছেন বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। রমজানের শুরু থেকেই বিক্রি ভালো হচ্ছে। নরম সিল্কগুলো ২ হাজার ১০০ থেকে ৮ হাজার ও ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সাপুরা সিল্কের শোরুমের ম্যানেজার সাইদুর রহমান বলেন, ‘ক্রেতাদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে মুসলিমের কাতোয়ার শাড়ি। এই পণ্যগুলোয় হাতের কাজ করা। থ্রিপিস ও শাড়ির কাজে নতুনত্ব এসেছে। মুসলিমের শাড়িগুলো সর্বোচ্চ ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে’।
তিনি আরো বলেন, ‘শোরুমগুলোতে সিল্কের তৈরি শাড়ি, পাঞ্জাবি, থ্রিপিস ও শিশুদের পোশাক একসঙ্গে পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের এখানে সব থেকে বেশি বিক্রি হয় সিল্কের শাড়ি ও থ্রিপিস।’
সপুরা সিল্কের ক্রেতা ওহেদুজ্জামান স্ত্রী ও সন্তানদের ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন। তিনি জানান, প্রতি বছর এখান থেকে আমার পরিবার ও আত্মীয় স্বজনদের জন্য শাড়িসহ অন্য পণ্যগুলো কিনি। এবার নতুন নতুন কিছু কালেকশন দেখছি। আজ শাড়িসহ বাচ্চাদের কিছু পোশাক কিনব।
সামিয়া আকতার নামে আরেক ক্রেতা জানান, মাঝে মাঝে সিল্কের শাড়ি কেনা হয়। ঈদের সময় পরিবার ও ঢাকার আত্মীয়দের জন্য শাড়ি কিনতে হয়। গত দুই বছর করোনার জন্য কালেকশন কম ছিল, এবার অনেক নতুন ডিজাইনের কালেকশন এসেছে। নতুন শাড়ি আমরা দেখতে পাচ্ছি। কিছু কেনাও হয়েছে। আরো কেনা লাগবে।
এদিকে নতুন ডিজাইনের উষা সিল্কের শাড়ি ১ হাজার ৯০০ থেকে ৮ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান বিক্রেতারা। সিল্কের ব্যাপক চাহিদার কারণে বিএসসিআইসি শিল্প ব্যবস্থাপনার ফ্যাক্টরিগুলো ব্যস্ত সময় পার করছে। বাজারে চাহিদা মেটাতে সারা রাত জেগে কাজ করছেন শ্রমিকরা।
সকল শোরুমে ক্রেতা আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন ধরনের সিল্ক যেমন বলাকার চুপি, সুঁই-সুতাকাতান, কটিসিল্ক, জয়শ্রি, সিল্ক কাতান, ওয়াটার কাতান, জামদানি কাতান, বরকাতান, ধুপিয়ানা, ঝর্ণাকাতান শাড়ি, থ্রিপিস, ওরনা, পাঞ্জাবি, শার্ট, ফতুয়া ও স্কার্ফ পাওয়া যাচ্ছে।
এবার ঈদে সিল্কের তৈরি নতুন ডিজাইনের ও রঙের কাপড় আনতে রাজশাহী নগরীর সপুরা এলাকায় সাপুরা সিল্ক, উষা সিল্ক, রাজশাহী সিল্ক ফ্যাশন, আমেনা সিল্ক এবং মহানন্দা সিল্কসহ সিল্ক উৎপাদনকারীরা তাদের ব্যবসার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে।
বাংলাদেশ রেশম শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি লিয়াকত আলী বলেন, শুধু ঈদ নয়- সব সময় রাজশাহীর সিল্ক মানুষের কাছে প্রিয়। সিল্কের পণ্য সবাই পচ্ছন্দ করে।
‘এই খাত রক্ষা করতে স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। আর তার জন্য প্রয়োজন দক্ষ শ্রমিক। বিশেষ করে পেশাদার তাঁতী ও প্রিন্টার্স ধরে রাখা। তথ্য প্রচারসহ উচ্চ ফলনশীল তন্তগাছ ও সিল্ক-গুটিসহ এ সংক্রান্ত আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে কৃষকদের আকৃষ্ট করতে হবে। বিনা সুদে ঋণের ব্যবস্থা করে দেশে তুত গাছের চাষ বাড়াতে হবে। ১৬ থেকে ১৮টি জেলা রশম চাষের জন্য খুব উপযোগী সেই জেলাগুলোতে রেশমের চাষের জন্য বিভিন্ন ভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে’, যোগ করেন তিনি।
মন্তব্য