-->
শিরোনাম

‘বাঁধ রক্ষা করব নাকি হাওরের ফসল’

মো. জিয়াউর রহমান, নেত্রকোনা
‘বাঁধ রক্ষা করব নাকি হাওরের ফসল’

‘যেভাবে পানি বাড়ছে, কির্তনখলা বাঁধটি কখন ভেঙে যায় তা বলা যায় না। এখন বাঁধ রক্ষা করব নাকি হাওরের ফসল, কোনোটাই ভেবে পাচ্ছি না। তাই একদিকে বাঁধ পাহারা দিচ্ছি এবং পাশাপাশি হাওরের কাঁচা ও আধা পাকা ধানও কেটে ফেলছি।’

কথাগুলো বলছিলেন নেত্রকোনা জেলার খালিয়াজুরী উপজেলার চাকুয়া গ্রামের কৃষক মৃদুল মিয়া।

ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ভারী বর্ষণের কারণে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে দ্বিতীয় দফায় নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলের প্রধান নদী ধনুর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি জেলার সোমেশ্বরী, কংস ও মগড়াসহ অন্য নদীগুলোতেও পানি বাড়ছে।

মঙ্গলবার দুপুর ১টা পর্যন্ত জেলার খালিয়াজুরী পয়েন্টে ধনু নদীর পানি বিপদসীমার ২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল বলে জানায় স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড।

এদিকে গত কয়েকদিন ধরে একটানা পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ধনু নদী সংলগ্ন কির্তনখলা ফসল রক্ষা বাঁধটি চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। অতিরিক্ত পানির চাপে সাত কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ বাঁধটির বিভিন্ন স্থানে ফাটল ও ধস দেখা দিচ্ছে। এ অবস্থায় যেকোনো মুহূর্তে কির্তনখলা ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে বাঁধ সংলগ্ন হাওরে পানি ঢুকে ১২ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমির বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা।

বাঁধে ফাটল ও ধস দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় কৃষকদের সহায়তায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা বাঁধ মেরামত করলেও হাওরের বোরো ধান ঘরে তোলা নিয়ে আশঙ্কা যেন কিছুতেই কাটছে না হাওরপাড়ের কৃষকদের। তাই তারা ফসল হারানোর ভয়ে যে যেমনি পারছেন হাওরের অবশিষ্ট কাঁচা ও আধা পাকা ধানই কেটে ঘরে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছেন। নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত বলেন, ‘আমরা স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে নিয়ে দিনরাত বাঁধে অবস্থান করছি এবং ধস ও ফাটল দেখামাত্রই তা মেরামত করে বাঁধটিকে ঝুঁকিমুক্ত রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

এ বিষয়ে নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এফএম মোবারক আলী বলেন, ‘মঙ্গলবার পর্যন্ত নেত্রকোনা হাওরাঞ্চলের শতকরা ৭০ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে এবং যেসব ধান এখনো কাটার বাকি আছে তা ৮০ ভাগ পাকলেই কেটে ফেলার তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। আর সপ্তাহখানেক সময় পেলে কৃষকরা শতভাগ ধান ঘরে তুলতে পারবেন বলে আশা করছি।’

এ বছর জেলার ১০টি উপজেলার ১ লাখ ৮৮৩ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘এর মধ্যে ৪০ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে।’

মন্তব্য

Beta version