-->
শিরোনাম

ময়মনসিংহে লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ জীবন

কামরুজ্জামান মিন্টু, ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহে লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ জীবন
একজন দোকানী গরমে দোকানের সামনে বসে আছে। মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং এর কারণে দোকানের ভিতরের ফ্যান ঘুরছে না

ময়মনসিংহে বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। একদিকে প্রচণ্ড গরম; অন্যদিকে রমজানের সাহরি, ইফতার ও তারাবিতে মাঝেমধ্যে বিদ্যুতের দেখা মিললেও বেশিরভাগ সময় থাকে লোডশেডিং। এতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চলছে সমালোচনা। যদিও এর কারণ হিসেবে বিদ্যুতের উৎপাদন ঘাটতিকে দায়ী করছে ময়মনসিংহ বিদ্যুৎ বিভাগ।

নাগরিকরা জানান, গত বছর গরমকালজুড়েই ছিল ব্যাপক লোডশেডিং। এ বছর গরম পড়তেই আগের বছরের মতোই লোডশেডিং শুরু হয়েছে। এতে মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে। লোডশেডিংয়ের কারণে মানুষের স্বাভাবিক জীবন ও ব্যবসা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে শ্রমজীবীদের অবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে। অব্যাহত লোডশেডিংয়ের কারণে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরের ব্যস্ততম এলাকা গাঙ্গিনারপাড়, নতুন বাজার ও চরপাড়া এলাকায় রয়েছে অসংখ্য বিপণিবিতান। এ ছাড়া ছোট বাজার ও বড় বাজার এলাকা ময়মনসিংহের পাইকারি ব্যবসার কেন্দ্রস্থল। এসব এলাকায় প্রতিদিনই লোডশেডিং চলছে।

এতে ব্যবসায়ীরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। নগরীর প্রায় সব এলাকায় সমানতালে চলছে লোডশেডিং। এ ছাড়া জেলার প্রত্যেকটি উপজেলায় অন্তত ২০ দিন ধরে মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিংয়ে নাজেহাল জনজীবন। বিশেষ করে পল্লিবিদ্যুতের অধীনে গ্রামগুলোতে এ লোডশেডিংয়ের মাত্রা আরো বেশি।

শহরের গাঙ্গিনাড়পাড় এলাকার ইলেকট্রনিক ব্যবসায়ী রবীন্দ্রনাথ আচার্য দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, ‘দিনের বেশিরভাগ সময় বিদ্যুৎ থাকে না। কিছুক্ষণের জন্য এলেও আবার চলে যায়। মাত্রাতিরিক্ত গরমের মধ্যে লোডশেডিংয়ের কারণে ঠিকমতো ব্যবসা করতে পারছি না।’

গত শুক্রবার সকালে নগরীর জয়নুল আবেদীন পার্কে বসে ছিলেন ফয়সাল, হাসিফ ও শাহীন নামে আনন্দ মোহন কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী।

তারা জানান, আমরা মেসে থেকে পড়াশোনা করি। প্রচণ্ড গরমে ঠিকমতো পড়াশোনা করা যাচ্ছে না। কিছুক্ষণের জন্য বিদ্যুৎ উঁকি দিলেও আবার চলে যাচ্ছে। ফ্যানের পাখা না ঘোরার কারণে কক্ষে দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। পার্কে সার্বক্ষণিক বাতাস থাকার কারণে এসেছি। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের দাবি জানান তারা।

সিটি করপোরেশনের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের একাধিক বাসিন্দা জানান, এই ওয়ার্ডে বিদ্যুৎ নেই বললেই চলে। দিনে অন্তত দশবার বিদ্যুৎ থাকে না। সাহরি, ইফতার ও তারাবির সময়ও বিদ্যুৎ চলে যায়। মাঝেমধ্যে বিদ্যুৎ এলেও ভোল্টেজ থাকে না। এতে ফ্রিজে রাখা খাবার নষ্ট হচ্ছে।ওই ওয়ার্ড স্থানীয় সূত্র জানায়, এ ওয়ার্ডের কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুতের তারগুলো অনেক পুরানো। সারাবছরই বিদ্যুতের সমস্যা দেখা দেয়। সামান্য বাতাস এলে তার ছিঁড়ে পড়বে এমন অজুহাতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। নতুন তার দেওয়ার দাবি দীর্ঘদিনের। পাশাপাশি এবার মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিংয়ে এ ওয়ার্ডের বাসিন্দারা চরম ক্ষিপ্ত। যে কোনো দিন বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও করার আশঙ্কা রয়েছে।

ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি শংকর সাহা দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, গত বছর লোডশেডিংয়ের কারণে ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। আমরা চাই না এবারো গত বছরের ধারাবাহিকতা বজায় থাকুক। সবার ভোগান্তির কথা চিন্তা করে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

যদিও বিদ্যুৎ বিভাগের ভাষ্য, ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলায় প্রতিদিন সর্বোচ্চ বিদ্যুতের চাহিদা ৭৮০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে ময়মনসিংহ জেলার চাহিদা ৩৬০ মেগাওয়াট। এই চাহিদার বিপরীতে ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলায় সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ সরবরাহ রয়েছে ৬৪০ মেগাওয়াট। এতে ঘাটতি ১৪০ মেগাওয়াট। যে কারণে ময়মনসিংহ জেলাসহ বিভাগের বাকি নেত্রকোনা, জামালপুর ও শেরপুর জেলায় লোডশেডিং হচ্ছে।

ময়মনসিংহ বিতরণ কেন্দ্রীয় অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, ‘বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ড থেকে গ্যাসের সরবরাহ কম এবং ময়মনসিংহের রুরাল পাওয়ার কোম্পানি (আরপিসিএল) থেকে প্রতিদিন ২১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা থাকলেও গ্যাসস্বল্পতার কারণে ১০০ মেগাওয়াটের বেশি দিতে পারছে না। এ ছাড়া জামালপুরে শিকদার গ্রুপের ৯৫ মেগাওয়াটের পাওয়ার প্ল্যান্ট বন্ধ থাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে না। মূলত এ কারণেই ময়মনসিংহে বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘ময়মনসিংহের বিদ্যুৎ ঘাটতি নিয়ে আমরা মন্ত্রণালয়কে বলেছি- যেন ময়মনসিংহের জন্য বিদ্যুতের সরবরাহ বাড়ানো হয়। তবে, কবে নাগাদ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়া যাবে তা সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়।’

রমজানের সাহরি, ইফতার ও তারাবির সময় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়া যায় কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি জানি বিদ্যুতের অভাবে মানুষ অনেক ভোগান্তিতে পড়েছেন। তবে এ জন্য আমাদের দোষারোপ করে লাভ নেই। কারণ বিদ্যুৎ দেওয়াই আমাদের কাজ। অন্তত সাহরি, ইফতার ও তারাবির সময় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে।’

মন্তব্য

Beta version