রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ রুট দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট। বর্ষায় তীব্র স্রোত, শীতে ঘন কুয়াশাসহ কখনো ঘাট সংকট, ফেরি সংকট ও নদীতে নাব্য সংকটসহ নানা কারণে সারা বছরই দুর্ভোগের শিকার হন এই রুট ব্যবহারকারীরা।
স্বাভাবিক সময়ে তিন থেকে চার হাজার যানবাহন পারাপার হলেও ঈদের আগে এই রুটে গাড়ির চাপ বেড়ে যায় কয়েক গুণ। সে সময় যানবাহনের বাড়তি চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় ঘাট কর্তৃপক্ষকে।
ফলে ঘাট এলাকায় সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। ভোগান্তিতে পড়েন চালক ও যাত্রীরা। সেই সঙ্গে ঘাট এলাকায় বেড়ে যায় অজ্ঞান পাটি, মলমপাটি, ছিনতাইকারীর দৌরাত্ম্য। এসব দুর্বৃত্তের কবলে পড়ে সব কিছু হারিয়ে খালি হাতে বাড়িতে ফিরতে হয় অনেক যাত্রীকে।
এদিকে ঘাট সংকট, ফেরি সংকট ও নদীতে নাব্য সংকটে এক মাসের বেশি সময় ধরে যানজট লেগেই আছে। তার ওপর ঈদ যাত্রায় যানবাহনের বাড়তি চাপে এই নৌরুটে দুর্ভোগের মাত্রা তীব্র আকার ধারণ করবে।
ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের দুর্ভোগ কমাতে এখনই ব্যবস্থা নেওয়া দরকার বলছেন এই রুট ব্যবহারকারীরা। ঘরে ফেরা মানুষের দুর্ভোগ কমাতে এরই মধ্যে বিআইডব্লিউটিসি ও জেলা পুলিশ নিয়েছে নানা উদ্যোগ। তবে পদ্মায় পানি বাড়ায় স্রোতে ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় শঙ্কায় বিআইডব্লিউটিসি।
সাতক্ষীরা থেকে আসা ট্রাক চালক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘ঘাটে জ্যাম লেগেই আছে। এখনই দুই তিনদিন বসে থাকতে হয়। ঈদে তো ভয়াবহ অবস্থা হবে। একটা গাড়ি পার হতে তিন চার দিন সময় লেগে যাবে। ঈদের আগে ফেরি বাড়াতে হবে। ঘাট বাড়াতে হবে। তাহলে যদি মুক্তি মেলে।’
ঈগল পরিবহণের চালক ইকরাম মোল্লা বলেন, ‘এখনই প্রতিটি যাত্রীবাহী পরিবহণগুলোকে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। ঈদের সময় চাপ বাড়বে কয়েক গুণ। তখন কি পরিস্থিতি হবে সেটা জানি না, তবে ধারণা করতে পারছি সে সময় প্রতিটি যানবাহণকে কমপক্ষে ১২ ঘণ্টা অপেক্ষায় থেকে ফেরিতে উঠতে হবে।’
যমুনা লাইনের যাত্রী নূরে আলম বলেন, ‘ঈদ যাত্রায় প্রতি বছরই ফেরি পার হতে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। সেটা ঈদের আগে বাড়িতে ফেরা বা ঈদের পর কর্মস্থলে ফেরার সময়। দীর্ঘ যানজটে আটকে থাকতে হয়। ছেলেরা কষ্ট সহ্য করে থাকতে পারলেও নারী ও শিশুদের জীবণের ওপরে উঠে যায়।’
তিনি আরো বলেন, ‘চলতি বছর পদ্মা সেতু চালু হলে এই ভোগান্তি থাকবে না দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের। হয়তো আসন্ন ঈদুল ফিতর বা ঈদুল আযহা হবে দক্ষিণবঙ্গের মানুষের ফেরিতে শেষ যাত্রা। শেষ যাত্রায় কর্তৃপক্ষের উচিৎ ভোগান্তি ছাড়া ঈদ উপহার দেওয়া।’
বিআইডব্লিউটিসি মানিকগঞ্জ জেলার আরিচা বন্দরের উপ-পরিচালক খালেদ নেওয়াজ বলেন, ঈদে যাত্রী ও যানবাহন নির্বিঘ্নে পারাপারের জন্য এরই মধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ২২টি ফেরি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এরই মধ্যে বিকল ফেরিগুলো মেরামত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, দৌলতদিয়াতে চারটি এবং পাটুরিয়াতে চারটি ঘাট আছে। ঈদের আগে দুই পাড়ে পাঁচটি করে ঘাট সচল রাখা হবে। এ ছাড়া যানবাহনের বাড়তি চাপ কমাতে ঈদের তিন দিন আগে ও পরে বন্ধ থাকবে পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার।
খালেদ নেওয়াজ আরো বলেন, নদীতে নাব্য সংকট অনেকাংশে কমে গেছে। যে ফেরি আছে সেটা দিয়ে ঈদ যাত্রায় যানবাহনের চাপে যানজট পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারবেন- আশাবাদি তিনি।
‘তবে সব থেকে বড় বাধার কারণ হতে পারে পদ্মার স্রোত। কারণ এখন নদীতে পানি বাড়ছে ,ধীরে ধীরে স্রোতও বাড়বে’ বলেন খালেদ নেওয়াজ।
রাজবাড়ী পুলিশ সুপার এম এম শাকিলুজ্জামান বলেন, ঈদকে সামনে রেখে ঘাট এলাকায় বিভিন্ন অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যায়। অজ্ঞান পার্টি, ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে বাড়ি ফিরতে হয় অনেক যাত্রীকে। এবারের ঈদ যাত্রায় যাত্রীদের এমন পরিস্থিতিতে যেন না হয় সে জন্য তৎপর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
তিনি বলেন, মহাসড়কে থাকবে পুলিশের টহল টিম। ঘাট এলাকায় পুলিশের পাশাপাশি থাকবে র্যাব, সাদা পোশাকে পুলিশ ও আনসার সদস্য। মোটকথা আসন্ন ঈদুল ফিতরে মানুষ যেন নিবিঘ্নে এই ঘাট পারাপার হতে পারেন সে চেষ্টা করবো।
মন্তব্য