-->
শিরোনাম

ক্রেতার অপেক্ষায় টাঙ্গাইলের তাঁতপল্লি

জুয়েল রানা, টাঙ্গাইল
ক্রেতার অপেক্ষায় টাঙ্গাইলের তাঁতপল্লি
তাঁতযন্ত্রে তৈরি হচ্ছে শাড়ি

গত দুই বছর করোনার কারণে ঈদ, দুর্গাপূজা ও পহেলা বৈশাখে আশানুরূপ ব্যবসা করতে পারেননি টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্পাঞ্চলের মালিকরা।

তবে চলতি বছর গেল দুই বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তাঁত শ্রমিক ও মালিকরা। কিন্তু মাত্র কয়েকদিন পরেই ঈদ হলেও এখনো বিক্রি বাড়েনি তাঁতের শো-রুমগুলোতে। তাইতো ক্রেতার অপেক্ষায় রয়েছেন টাঙ্গাইলের তাঁতপল্লির দোকান মালিক ও কর্মচারীরা।

মূলত টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্পে জড়িত মালিক-শ্রমিকরা সারা বছরে দুটি ঈদ, দুর্গাপূজা ও পহেলা বৈশাখের জন্য অপেক্ষা করেন। এই উৎসবগুলোই তাদের ব্যবসায়িক লাভের প্রধান উৎস। কিন্তু করোনার কারণে গত দুই বছর বন্ধ ছিল অধিকাংশ তাঁত। ব্যবসা হয়নি আশানুরূপ। উল্টো গুনতে হয়েছে লোকসান।

জানা গেছে, টাঙ্গাইলের তাঁতশিল্পের শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা, চাঁদরের কদর রয়েছে অনেক। তাইতো পাইকারি ক্রেতারা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে এখানকার কাপড় কিনে বাজারজাত করে থাকেন। জেলার করটিয়া, বাজিতপুর, পাথরাইল, বল্লা, রামপুর, জোকারচর হাট কাপড়ের জন্য বিখ্যাত।

যদিও জেলায় ইতোমধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ তাঁত কমে গেছে। তবে এখনো টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ধুলটিয়া, বাজিতপুর, সুরুজ, বার্থা, বামনকুশিয়া, তারটিয়া ও দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল, চন্ডি, নলুয়া, দেওজান, নলশোধা, বিষ্ণুপুর, মঙ্গলহোড়, কালিহাতী উপজেলার বল্লা-রামপুর, আকুয়া গ্রামে তাঁতযন্ত্রগুলো সচল রয়েছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিযোগিতা ধরে রাখতে এই তাঁতপল্লিতে মনোমুগ্ধকর হাইব্রিড, সুতি ও সিল্ক জামদানি, বালুচুরি, ধানসিঁড়ি, আনারকলি, সফট সিল্ক, রেশম, তশর, কাতান, একতারি, দোতারি প্রভৃতি টাঙ্গাইল শাড়ি তৈরি হচ্ছে।

পাথরাইলের তাঁত শ্রমিক যতীন রায় জানান, সফট সিল্ক শাড়ি তৈরি করছেন তিনি। সপ্তাহের মাত্র দুটি শাড়ি তৈরি করা সম্ভব হয়। প্রতিটি শাড়ি তৈরিতে মজুরি পান ৯০০ টাকা। এতে কোনো রকমে তার সংসার চলে।

টাঙ্গাইল কুটিরের বিক্রেতা সোহান জানান, বেচাকেনা একদমই কম। এতে লাভ তো দূরের কথা, লোকসান হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। মালিক ছাড়াও তারা দুইজন কর্মচারী কাজ করছেন এই দোকানে।

টাঙ্গাইল কুটিরের মালিকের ছেলে জুনায়েদ হোসেন আমান জানান, তীব্র গরম আর দাম বৃদ্ধির ফলে তাঁতপল্লিতে ক্রেতা শূন্যতা দেখা দিয়েছে।

শাড়ি বিক্রেতা আলমগীর জানান, টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি হাতে তৈরি হয়। এ কারণে শ্রমিকের মজুরি একটু বেশি। এছাড়া সুতা ও প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম বেশি হওয়ায় শাড়ির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। শাড়ির দাম বেশি আর কম যাই হোক না কেন, দোকানে তো ক্রেতাই আসছে না।

পাথরাইলের শাড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও যজ্ঞেশ্বর অ্যান্ড কোং-এর মালিক রঘুনাথ বসাক জানান, গেল দুই বছর সঞ্চিত টাকায় সংসার পরিচালনার ফলে সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে ব্যবসা বাণিজ্যে।

এর ফলে ক্রেতা শূন্য হয়ে পড়ছে তাঁতপল্লি। এছাড়া করোনার প্রভাবে এ এলাকার প্রায় ৬০ শতাংশ তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে শাড়ির উৎপাদন ও শ্রমিক কমেছে।

মন্তব্য

Beta version