-->
শিরোনাম

ধান রক্ষার লড়াইয়ে হাওরে ‘শ্রমিক সংকট’

মোসাইদ রাহাত, সুনামগঞ্জ
ধান রক্ষার লড়াইয়ে হাওরে ‘শ্রমিক সংকট’

অসময়ের পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের হাওরের বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যাচ্ছে একমাত্র ফসল বোরো ধান। এমন পরিস্থিতিতে শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কেটে ঘরে তুলতে পারছে না কৃষকরা।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত জেলায় সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।

বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) সুনামগঞ্জের শাল্লা, তাহিরপুর ও শান্তিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন হাওর ঘুরে দেখা গেছে, ধান রক্ষা করতে হাওরের ভাঙা বাঁধ মেরামতে ব্যস্ত কৃষক। একই সঙ্গে কোমর সমান পানিতে ডুবে থাকা ধান কাটতেও ব্যস্ত রয়েছে কৃষক। তবে এসবের মধ্যে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে শ্রমিক সংকট। তাই কৃষকরা আশঙ্কা করছেন ঢলের পানি বাড়লে ক্ষেতে থাকা সব ধান তলিয়ে যাবে।

শাল্লার ছায়া হাওরের কৃষক রতি দাশ জানান, সাড়ে ৪ একর জমিতে ধান আবাদ করেছেন তিনি। ধান ভালোই হয়েছে। যদিও ধান পুরোপুরি পাকেনি। কিন্তু ডুবে যাওয়ার ভয়ে ক্ষেত থেকে সব ধান কেটে ফেলতে চাইছেন তিনি। তবে শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কাটতে পারছেন না তিনি।

তিনি বলেন, ‘কষ্ট করে ফসল লাগাইয়া এখন ধান কাটার মানুষ ফাইরাম না। ছেলে আর আমি যতটুকু পাররাম কররাম, এখনও বেশির ভাগ ধান হাওরে রয়ে গেছে। কি করমু কিচ্ছু বুঝরাম না।’

একই দিন শান্তিগঞ্জ হাওরে কোমর সমান পানিতে ধান কেটেছেন কৃষক নুর উদ্দিন। তার অধিকাংশ ধান অর্ধেক পানির নিচে। তিনি বলেন, ‘বাজান আমরার শনি লাগছে এবার, ধান ভালা অইছিল, কিছু পোকায় খাইছে, এখন পানি সব নিরোগি, কয়েকজন মিলিয়া ধান কাটরাম মানুষ পাচ্ছি না, আসমানও মেঘ মরি আর বাচি ধান না খাটলে ফুরুতা না খাইয়া থাকবও।’

এদিকে তাহিরপুর উপজেলা ভারতে সীমান্তবর্তী উপজেলা ও মেঘালয়ের কাছে হওয়ায় সেখানে ঢলের পানির চাপ বেশি। যার ফলে এ অঞ্চলের কৃষকদের এখন চিন্তায় রাতের ঘুম হারাম।

শনির হাওরের কৃষক জব্বার আলী বলেন, ‘ধান কাটার মানুষ নাই, যাও পাই তারা রোজ ৫০০-৭০০ করি টাকা চায়। এতো টাকা কই পাইতাম। এমনেই ধানের অবস্থা ভালা না, তাড়াতাড়ি না কাটতে পারলে সব শেষ।’

তবে সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি কর্মকর্তা বিমল চন্দ্র সোম বলেন, ‘হাওরে শ্রমিক সংকট তেমন একটা নেই, ধান কাটার হারভেস্টার মেশিন আছে। আশা করি ২-৩ দিন বৃষ্টি না হলে ভালোভাবেই ধান কেটে ঘরে তুলতে পারবে কৃষকরা।’

তিনি জানান, এ বছর সুনামগঞ্জে ২ লাখ ২২ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ৭১ হাজার হেক্টর জমির ধান কেটে ফেলা হয়েছে।

মন্তব্য

Beta version