-->

নারায়ণগঞ্জে ডায়রিয়া পরিস্থিতির অবনতি

সীমান্ত প্রধান, নারায়ণগঞ্জ
নারায়ণগঞ্জে ডায়রিয়া পরিস্থিতির অবনতি
ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীদের উপচে পড়া ভিড়

নারায়ণগঞ্জে প্রতিদিনই জ্যামিতিকহারে বাড়ছে ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা। যা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে (ভিক্টোরিয়া) গড়ে প্রতিদিন ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ আক্রান্ত ভর্তি হচ্ছেন। এ ছাড়াও শতাধিক ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী বহির্বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আক্রান্তদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি।

হাসপাতালে শয্যা সঙ্কটের কারণে এক শয্যায় তিন চারজনের বেশি রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। এখানে রোগীর তুলনায় চিকিৎসকের সংখ্যা অপ্রতুল হওয়ায় আইসিডিডিআরবি থেকে আট সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ দল আক্রান্তদের চিকিৎসায় কাজ করছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।

নারায়ণগঞ্জে গত মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী আসতে শুরু করে। চলতি মাসের গোড়ার দিকে রোগীর চাপ কিছুটা বেড়ে যায়। তখন প্রতিদিন গড়ে দেড়শ রোগী ভর্তি হতেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। বর্তমানে গড়ে প্রতিদিনই সাড়ে ৩০০ রোগী ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালে। গেল ১৫ দিনেই এই হাসপাতালে পাঁচ হাজার আক্রান্ত ভর্তি হয়েছেন। বহির্বিভাগে এর থেকেও দুইগুণ বেশি রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল (ভিক্টোরিয়া) ঘুরে দেখা গেছে, বহির্বিভাগে লম্বা লাইন। প্রায় সকলেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। এখানকার ডায়রিয়া ওয়ার্ডের জন্য দশ শয্যা বরাদ্দ থাকলেও আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হওয়াতে প্রথমে দশটি বৃদ্ধি করা হয়। পরে আরও বিশ শয্যা বাড়িয়ে বর্তমানে চল্লিশ শয্যায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়াতে কোনো কোনো শয্যায় তিন থেকে চারজনকেও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। চরম ব্যস্ততায় ছুটোছুটি করছেন নার্সেরা। দম ফেলারও ফুসরত নেই তাদের। আক্রান্তদের মধ্যে যাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক তাদের আইসিডিডিআরবিতে পাঠানো হচ্ছে।

নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. এস কে ফরহাদ ভোরের আকাশকে বলেন, ‘প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৩০০ রোগী ভর্তি হচ্ছে। পরিস্থিতি অবনতির দিকে। এখনো পর্যন্ত যে অবস্থা তা আমাদের নিয়ন্ত্রণে। এর বেশি রোগী বাড়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘অন্য জেলার তুলনায় এখানে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক। একটি শয্যায় একাধিক রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি অবনতি হওয়াতে আইসিডিডিআরবি থেকে আট সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ দল আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। প্রতিদিন এক থেকে দুজনকে ঢাকায় রেফার্ড করছি।’

বাইরের খোলা খাবার না খাওয়ার জন্য এবং পানি ফুঁটিয়ে পান করার জন্য মানুষকে সচেতন করার উদ্যোগ নিয়েছে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে। জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সচেতনতামূলক মাইকিং করা হচ্ছে বলে ভোরের আকাশকে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. মুশিউর রহমান।

তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। প্রতিদিনই গড়ে সাড়ে ৩০০ ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছেন। আমাদের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ১০টি শয্যা বরাদ্দ থাকলেও বর্তমানে তা বাড়িয়ে ৪০ শয্যায় চিকিৎসা দিচ্ছি। এর বেশি রোগী বাড়লে পরিস্থিতি সামাল দিতে কষ্ট হয়ে যাবে। মানুষের সচেতনতাই এখন এই প্রকোপ রোধ করা সম্ভব।’

মন্তব্য

Beta version