-->
শিরোনাম

চরাঞ্চলে বাড়ছে সূর্যমুখী চাষ

মিজানুর রহমান, নোয়াখালী
চরাঞ্চলে বাড়ছে সূর্যমুখী চাষ

নোয়াখালীর সুবর্ণচরের চরক্লার্ক ইউনিয়নের কেরামতপুর গ্রামের কৃষক এনায়েত উল্যা। চলতি মৌসুমে নিজের ১৬ একর জমির ওপর দুজাতের (উফসি বারি সূর্যমুখী-৩ ও হাইব্রিড হাইসান-৩৩) সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন তিনি। আর ১০-১২ দিনের মধ্যে তার ফলন পরিপক্ব হয়ে যাবে। এরপরই এগুলো কাটতে পারবেন তিনি। খরচ শেষে ৯-১০ লাখ টাকা লাভের আশা করছেন এই কৃষক।

এনায়েত উল্যা বলেন, ‘অন্যান্য ফসলের তুলনায় সূর্যমুখী চাষে খরচ তুলনামূলক কম। এবার বাড়ির পাশের ১৬ একর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করেছি। দেশি জাত উফসি বারি-৩ এর চেয়ে হাইব্রিড হাইসান-৩৩ এর ফলন আগে আসে। ফুলগুলোও অনেক বড় হয়। আর ফুল যত বড় হয় তা থেকে তেল বীজও বেশি পাওয়া যায়।’

শুধু সুবর্ণচরে নয় নোয়াখালীর চরাঞ্চলগুলোতে বাড়ছে সূর্যমুখীর চাষ। অল্প খরচে অধিক ফলন ও ভালো দাম পাওয়াতে এ চাষে ঝুঁকছেন কৃষকেরা। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এবার কৃষকরা সূর্যমুখীর তেলের ভালো দাম পাবেন। তবে স্থানীয়ভাবে ফুল থেকে তেল উৎপাদনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় কৃষকরা এ তেল ব্যবহার করতে পারছে না।

কৃষকদের দাবি, চরাঞ্চলে সূর্যমুখী থেকে তেল সংগ্রহ করার যন্ত্র বা মেশিন থাকলে ও ভালো দাম পেলে ফসলটি চাষে তারা আরো এগিয়ে আসবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সূর্যমুখী চাষের ৯০-১০৫ দিনের মধ্যেই কৃষকরা ফুল থেকে বীজ ঘরে তুলতে পারেন। প্রতি বিঘা জমিতে ৭-৮ মণ বীজ পাওয়া যাবে। সূর্যমুখীর বীজ থেকে যে সয়াবিন তেল পাওয়া যাবে তাতে কোনো ক্ষতিকর কোলেস্টেরল নেই।

সরেজমিনে সুবর্ণচর গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ জমিতে হাজার হাজার সূর্যমুখী ফুল। অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি চাষিরা চাষ করেছেন তেল জাতীয় এ ফসলের। সেখানে গিয়ে দেখা মিলে এনায়েত উল্যার খেতের। যেখানে লম্বা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে গাছগুলো। হলুদ হলুদ ফুলে ভরে উঠেছে গোট এলাকা। এই খেত দেখতে আসছেন অনেকেই। এমনকি অনেক কৃষক এসে সূর্যমুখী চাষের জন্য এনায়েত উল্যার থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে সুবর্ণচরের প্রায় ৩০০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করা হয়েছে। ফলনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ টন।

সুবর্ণচর উপজেলা কৃষি কর্মকতা মো. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় সূর্যমুখীর চাষ কমেছে। এর অন্যতম কারণ হলো, সূর্যমুখীর বীজ আমদানিনির্ভর ও বেশি দামে কিনতে হয় কৃষকদের। তবে এ মৌসুমে সূর্যমুখীর ফলনের অবস্থা ভালো। এটিকে আরো বেশি সম্প্রসারণ করা গেলে দেশে ভোজ্যতেলের সংকট দূর করা সম্ভব হবে।’

জেলার কৃষি বিভাগের উপসহকারী কৃষি অফিসার আলাউদ্দিন বলেন, ‘জেলার চরাঞ্চলগুলোতে সূর্যমুখীর চাষ বাড়ছে। তবে স্থানীয়ভাবে ফুল থেকে তেল বের করার কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে সূর্যমুখী থেকে উৎপাদিত ফলন নেয়ার জন্য মার্কেট তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে নোয়াখালীর শিল্পপ্রতিষ্ঠান গ্লোব গ্রুপসহ দেশের অনেক অনেক বড় কোম্পানি এবার আগে ভাগেই কৃষকদের কাছ থেকে সূর্যমুখীর বীজ নেয়ার জন্য যোগাযোগ শুরু করেছেন। ফলে এবার কৃষকরা আগের চেয়ে ভালো দাম পাবেন।’

মন্তব্য

Beta version