-->
শিরোনাম

রাতের কেনাকাটায় জমজমাট সিলেটের ঈদবাজার

কামরুল ইসলাম মাহি, সিলেট
রাতের কেনাকাটায় জমজমাট সিলেটের ঈদবাজার

সিলেটে ঈদবাজার জমে উঠলেও দিনের বেলায় ক্রেতা খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। সন্ধ্যার পর বিপণিবিতান আর শপিংমলগুলোতে দেখা যাচ্ছে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়।

ঈদকে ঘিরে আলোকসজ্জায় রঙিন হয়ে ওঠা এই শহরে রাতের কেনাকাটাতে বেশি পছন্দ নগরবাসীর। বুধবার রাত ৮টার দিকে নগরীর জিন্দাবাজারের ব্লু-ওয়াটার শপিং সিটি, আল হামরা শপিং সেন্টার, শুকরিয়া মার্কেট, মধুবন সুপার মার্কেটসহ বেশ কয়েকটি শপিংমল ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। দোকানে বাহারি ডিজাইনের পোশাক তুলতে বিক্রেতারা ব্যস্ত সময় পার করছেন।

অন্যদিকে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত নগরের ফ্যাশনপাড়া হিসেবে পরিচিতি কুমারপাড়া ও নয়াসড়ক এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতাদের সমাগম তেমন একটা নেই। এই দুই এলাকার ব্যবসায়ীরা জানান, দিনের চেয়ে রাতে ক্রেতারা তুলনামূলক বেশি আসছেন।

পবিত্র ঈদুল ফিতরের বাকি হাতেগোনা আর কয়েকদিন। মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় এই উৎসবকে ঘিরে বর্ণিল সাজে সেজেছে পুরো সিলেট। নগরীর প্রতিটি মার্কেট আর শপিংমলে লাল-নীল বাতির আলোয় উজ্জ্বল সিলেট নগরী।

গত দুই বছর করোনার প্রকোপে বিধিনিষেধ ছিল ঈদের বাজারে। ব্যবসা হয়নি বললেই চলে। তাই এবার করোনার সংক্রমণ কমে আসায় বিধিনিষেধের বাইরে রয়েছে সবকিছু। তাই বিগত ক্ষতিগুলো পুষিয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখছেন ব্যবসায়ীরা। কেনাকাটায় স্বাচ্ছন্দ্য ফিরে আসায় খুশি ক্রেতা ও বিক্রেতারা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনার ধাক্কা কাটিয়ে উঠে দুই বছর পর ব্যবসায় গতি ফিরে আসায় স্বস্তিতে রয়েছেন বিক্রেতারা।

নয়াসড়ক এলাকায় মাহা বিপণিবিতানে ভাতিজাকে নিয়ে আসা রাহাত আহমদ তামিম নামের ক্রেতা বলেন, ‘ঘুরে ঘুরে দেখছি। পছন্দ হলে কিনব। রাতের বেলা মার্কেটগুলো অনেক সুন্দর দেখায়। চারদিকে লাল-নীল বাতি। দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে। দুই-চার দিন পর পরিবারের সব সদস্যদের নিয়ে আসব।’

বন্দরবাজারের মধুবন মার্কেটে তমা জাহান নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘ভাই ও বোনের জন্য আজ পোশাক কিনেছি। কাল পরশু এসে নিজের জন্য কিনব। আর আজ আর কয়েকটি মার্কেট ঘুরে মায়ের জন্য একটা শাড়ি নেব।’

আল হামরা শপিং সিটির ব্যবসায়ী রুহেল আহমদ বলেন, পর্যাপ্ত পোশাক আছে। কেনাকাটাও শুরু হয়েছে। তবে দিনে ক্রেতারা একেবারেই কম আসছেন। আবার রাত ৮টার পর থেকে পুরো মার্কেটে ক্রেতাদের ভিড় লেগে থাকে ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত।

নগরীর প্রাণকেন্দ্র জিন্দাবাজারের কাকলী শপিং সেন্টারের সাধারণ সম্পাদক শিপন খান বলেন, এবার ঈদে বেচাকেনা ভালো আছে। তবে এখন রাতের বেলায় ক্রেতারা বেশি আসছেন। আশা করছি, ২০ থেকে ২২ রমজানের পর পুরো দমে বেচাকেনা শুরু হবে।

তিনি জানান, যেহেতু লাল-নীল বাতির রঙে প্রতিটি মার্কেট সাজানো হয়েছে তাই অনেকে পরিবার নিয়ে এই সৌন্দর্য দেখতে রাতের বেলা ভিড় জমান।

ব্যস্ত দর্জিপাড়া, বন্ধ হচ্ছে অর্ডার নেওয়া

এদিকে সিলেটে দর্জিপাড়ায় যেন সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অর্ডার নেওয়া। ফলে শেষ মুহূর্তে দর্জি দোকানে ছুটছেন ফ্যাশন প্রিয়রা। ব্যস্ততা বেড়েছে দর্জিও দোকানগুলোতেও।

ফ্যাশন সচেতন তরুণীরা ছুটছেন জিন্দাবাজারের শুকরিয়া, সিটি সেন্টার, কাজী ম্যাশনসহ বিভিন্ন মার্কেটের গড়ে ওঠা দর্জিও দোকানে। আবার ছেলেদের শার্ট-প্যান্ট তৈরির যোগান দিচ্ছে স্থানীয় নামকরা সব টেইলার্স। সঙ্গে পাঞ্জাবি তৈরির দোকানগুলোতেও ভিড় বেড়েছে।

বন্দরবাজারের মধুবন মার্কেটের ন্যাশনাল টেইলার্সের মালিক ছাব্বির মিয়া জানান, ‘শবেবরাতের পর থেকেই এসব পোশাক তৈরির অর্ডার নেওয়া শুরু হয়েছে। ২০ থেকে ২২ রমজানের মধ্যে সব ধরনের অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দেবেন।’

তৎপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

ঈদবাজারকে নির্বিঘ্ন করতে তৎপর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নগরীর বিভিন্ন মার্কেট আর শপিংমলে নিরাপত্তা জোরদার করেছে সিলেট মহানগর পুলিশ। এছাড়াও শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বসানো হয়েছে চেক পোস্ট। প্রতিটি থানা আর ফাঁড়ি পুলিশকে তৎপরতা বৃদ্ধি করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

মহানগর পুলিশের উপকমিশনার এ বি এম আশরাফ উল্ল্যাহ তাহের ভোরের আকাশকে বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে ১০ রমজানের পর থেকে শহরের প্রতিটি মার্কেটে পোশাকধারী পুলিশ সদস্য নিয়োজিত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নজরদারি রাখছে। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশি তল্লাশি অব্যাহত আছে।’

মন্তব্য

Beta version