-->
শিরোনাম

সহকারী জজ পরীক্ষায় দেশসেরা রাবির আইন বিভাগের তিন বান্ধবী

রাজশাহী ব্যুরো
সহকারী জজ পরীক্ষায় দেশসেরা রাবির আইন বিভাগের তিন বান্ধবী
সহকারী জজ পরীক্ষায় সেরাদের সেরা রাবির তিন বান্ধবী প্রথম সুমাইয়া নাসরিন শামা, দ্বিতীয় জান্নাতুন নাঈম মিতু ও চতুর্থ ইশরাত জাহান আশা। (ভোরের আকাশ)

বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসের (বিজেএস) ১৪তম সহকারী জজ পরীক্ষার ফলাফলে চমক দেখিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইন বিভাগের একই বর্ষের তিন ছাত্রী। স্নাতকোত্তর শেষ হওয়ার আগেই প্রথমবার এ পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তারা প্রথম, দ্বিতীয় ও চতুর্থস্থান অর্জন করেছেন। বিভাগের স্নাতকের মেধা তালিকাতেও তাদের অবস্থান যথাক্রমে দ্বিতীয়, প্রথম ও তৃতীয়। মেধাবী এই তিন ছাত্রীর এমন সাফল্যে আনন্দিত বিভাগের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা।

বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল ) বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন সচিবালয়ের ওয়েবসাইটে বিজেএস’র ১৪তম ফল প্রকাশ করে। এতে ১০২ জনের মধ্যে প্রথম হয়েছেন রাবির আইন বিভাগের ৩৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সুমাইয়া নাসরিন শামা। এছাড়া দ্বিতীয় ও চতুর্থ হয়েছেন একই ব্যাচের যথাক্রমে জান্নাতুন নাঈম মিতু ও ইশরাত জাহান আশা।

তিন জনই স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যয়নরত। এছাড়া ১০২ জনের মধ্যে ২৯ জন রাবির বলে জানা গেছে।

সহকারী জজ পরীক্ষায় প্রথম হওয়া সুমাইয়ার গ্রামের বাড়ি নাটোরের বড়াইগ্রাম। তিনি বড়াইগ্রাম হাইস্কুল থেকে ২০১৩ সালে মাধ্যমিক এবং রাজশাহী কলেজ থেকে ২০১৫ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। পরবর্তীতে ২০১৫-১৬ সেশনে রাবির আইন বিভাগে ভর্তি হন।

জাতীয় মেধায় দ্বিতীয় হওয়া জান্নাতুন নাইম মিতুর বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার নয়ন-শুকা এলাকায়। মো. নাইমুল ইসলাম ও নাহিদা খাতুন দম্পতির বড় মেয়ে মিতু জান্নাতুন নাইম মিতু নবাবগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১২ সালে মাধ্যমিক (এসএসসি) ও পরবর্তীতে রাজশাহী নিউ গর্ভমেন্ট ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পাস করেন।

জাতীয় মেধায় চতুর্থ হওয়া তাদের আরেক বান্ধবী ইশরাত জাহান আশার গ্রামের বাড়ি জয়পুরহাট। তিনি জয়পুরহাট ক্যাডেট কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। পরবর্তীতে ২০১৫-১৬ সেশনে রাবির আইন বিভাগে ভর্তি হন।

ঈর্ষণীয় এ ফলাফলের জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া আদায় করে সুমাইয়া বলেন, আমার এই ফলাফলের জন্য আমার পরিবার ও বিভাগের শিক্ষকদের অবদান সবচেয়ে বেশি। সত্যি বলতে আমি প্রথম হবো এমনটা প্রত্যাশা ছিল না।

পরীক্ষার প্রস্তুতির বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের জুডিশিয়ারি পরীক্ষায় একাডেমিকে যা পড়ানো হয় অধিকাংশই সেখান থেকে আসে। ফলে ডিপার্টমেন্টের পড়াশোনা মনোযোগ দিয়ে করায় প্রস্তুতি অনেকটাই কাভার হয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে সার্কুলার দেওয়ার পর কোর্সগুলো ফের ভালোভাবে পড়ি। এছাড়া বাংলা,ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞান এগুলো পড়েছি। সব মিলিয়ে আল্লাহর অশেষ রহমতে হয়ে গেছে।

প্রথমবার পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জাতীয় মেধায় প্রথম হওয়া সুমাইয়া আরও বলেন, আমার কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল না যে বড় হয়ে এই হবো বা ওই হবো। আমি সব সময় সময়ের কাজটা সময়ে করার চেষ্টা করেছি।

জুডিশিয়ারি পরীক্ষা দিতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ক্লাসগুলো মনোযোগ সহকারে করার পরামর্শ দেন এই মেধাবী ছাত্রী।

মেধা তালিকায় ২য় হওয়া একই ব্যাচের শিক্ষার্থী জান্নাতুন নাঈম মিতু বলেন, আমার পরিবার ও বিভাগের শিক্ষকরা আমাকে অনেক বেশি হেল্প করেছে। প্রথম বর্ষ থেকে একাডেমিক পড়াশোনায় মনোযোগী ছিলাম। একাডেমিক রেজাল্টও ভালো ছিল। বন্ধুরা সবসময় আমাকে উৎসাহ দিত। আমি চেষ্টা করলে ডিপার্টমেন্টের মতো জুডিশিয়ারিতেও প্রথম হতে পারবো। যাই হোক প্রথম হতে না পারলেও দ্বিতীয় হয়েছি। এছাড়া প্রথম ও চতুর্থ হওয়া দুজনই আমার বান্ধবী। সব মিলিয়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আমরা বিশ্ববিদ্যালয়কে বাংলাদেশের সামনে প্রতিনিধিত্ব করতে পেরেছি।

পড়াশোনার পাশাপাশি রাজনীতিতেও সক্রিয় মিতু। তিনি ছাত্রলীগের আইন বিভাগে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আছেন।

মিতু জানান, ছোট থেকে তার ইচ্ছে ছিল বিসিএস ক্যাডার হবেন। কিন্তু, একদিন ক্লাসে তার এক শিক্ষক একটি কেস পড়িয়েছিলেন। যার কাহিনিটাও বেশ মর্মান্তিক ছিল। জাজমেন্টও ছিল বেশ চমৎকার।

মিতু বলেন, রায় শুনে আমার মনে হয়েছিল, আল্লাহর পরে একজন জজ ছাড়া এ ধরনের জাজমেন্ট কেউ দিতে পারে না। সেখান থেকে আমি জজ হওয়ার জন্য উৎসাহ পাই।

প্রস্তুতির বিষয়ে তিনি বলেন, ফাস্ট ইয়ার থেকে স্যাররা যা পড়াতেন সেগুলো খুঁটিয়ে পড়ার চেষ্টা করতাম। এছাড়া আলাদাভাবে প্রস্তুতি বলতে বাংলা, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান পড়েছি।

ইশরাত জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরও তার জুডিশিয়ারি সম্পর্কে খুব একটা জানাশোনা ছিলো না। ‘কিছুদিন যাওয়ার পর যখন জানলাম বিভাগের ভাইয়া ও আপুরা জজ হচ্ছেন তখন থেকে তিনিও স্বপ্ন দেখা শুরু করেন।

ইশরাত বলেন, আমার লক্ষ্য ছিল প্রথমবারেই সরকারি জজ হবো। আমাদের ফোর্থ ইয়ারের কোর্সের সঙ্গে জুডিশিয়ারির বেশ মিল রয়েছে। আমি বেশ ভালোভাবেই পড়েছি। তবে প্রত্যশার চেয়ে ভালো ফল হয়েছে। এই সাফল্যের জন্য পরিবার ও বিভাগের অবদান সবচেয়ে বেশি।

এদিকে শিক্ষার্থীদের এমন ঈর্ষণীয় ফলাফলে আনন্দিত বিভাগের শিক্ষকরাও। আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক হাসিবুল আলম প্রধান বলেন, 'এই দিনটি আইন বিভাগের জন্য অশেষ আনন্দ ও গর্বের দিন। ১৪তম বিজেএস পরীক্ষায় আমাদের একই ব্যাচের তিন ছাত্রী যথাক্রমে ১ম, ২য় এবং ৪র্থ স্থান অর্জন করেছে।'

তিনি বলেন, এই ফলাফল প্রমাণ করে রাবির আইন বিভাগই সেরা। আমাদের বিভাগের বিভিন্ন ব্যাচ থেকে আরো অনেকেই সহকারি জজ হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে তাদেরকেও অভিনন্দন, শুভেচ্ছা জানাই।

 

মন্তব্য

Beta version