-->
শিরোনাম

ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে থেঁতলে গেছে ধানগাছ

শাকিল মুরাদ, শেরপুর
ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে থেঁতলে গেছে ধানগাছ
ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ধানের জমি

শেরপুরে ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে বোরো ধান, শাক-সবজি এবং বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঋণ নিয়ে করা আবাদ নষ্ট হওয়ায় বিপাকে পড়েছে এখানকার সহস্রাধিক কৃষক।

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় চলতি মৌসুমে ৯১ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ফলনও হয়েছিল ভালো। কিন্তু গেল মঙ্গলবার ভোররাতের টানা বিশ মিনিটের ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে বোরো ধান, শাক-সবজি, গাছপালা ও বাড়ি-ঘরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ফসল ঘরে তোলার স্বপ্ন ভেঙে গেছে কৃষকদের।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, জেলায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমির বোরো আবাদের ক্ষতি হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ধান কাটা ও ঘরে তোলার মৌসুমের শুরুর দিকে এই ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে বেকায়দায় পড়েছে সহস্রাধিক কৃষক। নিচু এলাকায় বৃষ্টিতে ধান গাছ নুয়ে পড়ে তলিয়ে গেছে। শিলার আঘাতে ঝরে গেছে ধান, ভেঙে গেছে গাছের কাণ্ডও।

শ্রীবরদী উপজেলার খড়িয়া কাজিরচরের কৃষক মফিল উদ্দিন বলেন, ‘ঋণ করে চার একর জমিতে বোরো আবাদ করেছিলাম। এক রাতেই আমার সব শেষ হয়ে গেছে। সব ধান পড়ে গেছে, এখন বউ পুলাপাইন নিয়া কী খামু? আমরাতো গরিব মানুষ।’

একই গ্রামের কৃষক জুলহাস আলী বলেন, ‘আমি ১০ কাঠা জমিতে বোরো আবাদ করি। এতে আমার পুরো বছরের খাওন চলে। ভোরে সব ধানে শিল পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে।’

লংগর পাড়া গ্রামের কৃষক চাঁন মিয়া বলেন, ‘ সিহরির পরপরই হিল (শিল) পড়ে আমার এক কুর (এক একর) জমির সব ধান পইড়া গেছে। এহন বউ বাচ্চা নিয়ে কী খামু?’

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা সরকারের সহযোগিতার দাবি জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের জন্য সরকার কিছু একটা ব্যবস্থা না করলে চলা মুশকিল হয়ে পড়বে। তাই আমরা সরকারের সহযোগিতা চাচ্ছি।’

এদিকে ঝড়ো হাওয়ায় ঘর-বাড়িরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শিলার আঘাতে ছিদ্র হয়ে গেছে ঘরের চাল।

কুড়িকাহনিয়ার ভাটি পাড়ার খালেদা (৪২) বেগম বলেন, ‘বাপুরে সেহরি খাওয়ার কিছুক্ষণ পর বাতাস আইলো। এরপর হিল (শিল) পড়া শুরু হল। এতো জোরে হিল (শিল) পড়ছে, আমার ঘরের টিনের চাল ছিদ্র হয়ে গেছে।’

একইভাবে ওই গ্রামের মনুরা (৩৮) বেগম, আজিজুর রহমান (৬৫), সোহাগসহ (৩০) অনেকের ঘরের চাল ছিদ্র হয়ে গেছে, আবার অনেকের ঘরের চাল উড়ে গেছে।

জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক ড. মোহিত কুমার দে জানান, শিলাবৃষ্টিতে জেলার ৫ হাজার হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে শ্রীবরদী উপজেলায়। যেসব ক্ষেত আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেখানে পটাশ অথবা ছত্রাকনাশক ওষুধ দেওয়া যেতে পারে, এতে কিছুটা ফল পাওয়া যাবে। আর যেসব ক্ষেত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেসব জায়গায় আউশ ধান আবাদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোমিনুর রশিদ জানান, দমকা হাওয়া ও শিলাবৃষ্টিতে বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে। শিলাবৃষ্টিতে ধান গাছের কাণ্ড থেঁতলে গেছে। অনেকের টিনের চাল ছিদ্র হয়ে গেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তা করার জন্য দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে।

মন্তব্য

Beta version