-->
শিরোনাম

১৫ মাস ধরে বন্ধ অ্যাম্বুলেন্স সেবা

সুজন মোহন্ত, কুড়িগ্রাম
১৫ মাস ধরে বন্ধ অ্যাম্বুলেন্স সেবা
দীর্ঘ ১৫ মাস ধরে অ্যাম্বুলেন্স সেবা থেকে বঞ্চিত ফুলবাড়ীবাসী। চরম দুর্ভোগে রোগী ও স্বজনরা

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে রয়েছে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স। তবে নিয়োগপ্রাপ্ত অ্যাম্বুলেন্স চালক চুরির মামলায় বরখাস্ত। মামলাটি এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। শূন্য হয়নি চালকের পদও। তাই নিয়োগও দেওয়া যাচ্ছে না নতুন চালক। এমতাবস্থায় দীর্ঘ ১৫ মাস ধরে গ্যারেজেই পড়ে আছে অ্যাম্বুলেন্স। সেবা বন্ধ থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রোগীদের। বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে রোগীর স্বজনদের।

বলছিলাম কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কথা।

সরকারিভাবে অ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দ থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে চালকের কারণে সেবাটি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এ উপজেলার হাজারো মানুষজন। অন্যদিকে অ্যাম্বুলেন্স না চালিয়েও নিয়মিত বেতন তুলছেন চালক। সেবা না দিয়ে বেতন তোলায় ক্ষুদ্ধ স্থানীয়রাও।

ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা এলাকার বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন আগে আমার এক আত্মীয় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার জন্য বলেন ডাক্তাররা। তখন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স নিতে যায়। তবে ড্রাইভার না থাকায় বাধ্য হয়ে বেশি টাকা দিয়ে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে রংপুরে নিয়ে যায়।’

ফুলবাড়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজন আব্দুল জলিল বলেন,‘অ্যাম্বুলেন্স চালক না থাকায় আমরা রোগীর স্বজনরা চরম বিপাকে পড়েছি। বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে মাইক্রোবাস ভাড়া করেই অসুস্থ রোগীকে নিয়ে যাচ্ছি। সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে অক্সিজেন ছাড়াও অনেক সুবিধা আছে। খরচও অনেক কম। শুধুমাত্র ড্রাইভার না থাকায় আমরা চরম কষ্ট সহ্য করছি।’

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ১৩ জানুয়ারি তৎকালীন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সামছুন্নাহারসহ আরেক ডাক্তারের সরকারি কোয়াটারে চুরি হয়। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে চুরির সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে চারজনকে আটক করে পুলিশ। ওই চারজনকে নির্দেশ দাতা হিসেবে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালক একাব্বর আলীর সংশ্লিষ্টতা পায় পুলিশ। পরে তাকেও আটক করা হয়।

আটককৃত পাঁচজনের বিরুদ্ধে চুরির মামলা করে তাদেরকে কুড়িগ্রাম জেল হাজতে পাঠায় ফুলবাড়ী থানা পুলিশ। অ্যাম্বুলেন্স চালক একাব্বর আলীকে ওই বছরের ১৩ জানুয়ারি সাময়িক বরখাস্ত করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেই থেকে গ্যারেজে তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে অ্যাম্বুলেন্স।

২০২১ সালের ১১ এপ্রিল একাব্বর কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে আসে। তবে বরখাস্তকৃত ওই চালক দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স চালানোর নিয়ম নেই বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। যার ফলে এভাবেই গত ১৫ মাস ধরে বন্ধ অ্যাম্বুলেন্স সেবা। এ ছাড়াও অকেজো হয়ে দীর্ঘদিন থেকে পড়ে আছে আরো দুটি সরকারি অ্যাম্বুলেন্স। সেগুলোও পুনরায় মেরামত করার কোনো উদ্যোগ নেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।

অ্যাম্বুলেন্স চালক একাব্বর আলী বলেন, ‘সাবেক উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সামছুন্নাহার ষড়যন্ত্র করে আমার বিরুদ্ধে চুরির নির্দেশদাতা হিসেবে মামলা দিয়েছে। মামলা হওয়ার দিনেই আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন তিনি। গত ১৫ মাস ধরে পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম কষ্টে আছি।’

নিয়মিত বেতন পান কি না এমন প্রশ্নে তিনি কোনো উত্তর দেননি।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনার বর্তমান কর্মকর্তা ডা. সুমন কান্তি সাহা বলেন, ‘চালক একাব্বর জামিনে মুক্ত হলেও আদেশ তুলে না নেওয়া পর্যন্ত তাকে দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স চালানোর কোনো বিধান নেই। তাই তো ২০২১ সালের ১৩ জানুয়ারি থেকে অ্যাম্বুলেন্স তালাবদ্ধ অবস্থায় গ্যারেজে পড়ে আছে। চালক না থাকার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে সাংসদকে জানানো হয়েছে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন দাস বলেন, ‘উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক যিনি নিয়োজিত ছিলেন তিনি সাময়িক বরখাস্ত। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাকে দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স চালানোর কোনো বিধান নেই।

‘নিয়ম অনুযায়ী তিনি বেতন-ভাতাও পাচ্ছেন। চালকের পদটি শূন্য হয়নি। শূন্য পদ থাকলে এতোদিন ব্যবস্থা হয়ে যেত। তারপরেও বিকল্প চালক নেওয়ার ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

মন্তব্য

Beta version