নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে নগর ভবনে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে হুমকি দিয়েছেন হিন্দু নেতারা।
শনিবার (২৩ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত একটি মানববন্ধন থেকে এই হুমকি দেওয়া হয়।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট খোকন সাহার বিরুদ্ধে দায়ের করা ডিজিটাল মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রতিবাদ এবং মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ওই হুমকি দেওয়া হয়।
পূজা উদযাপন পরিষদ এবং হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর শাখার ব্যানারে করা মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন দিপক কুমার সাহা। তিনি জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি।
মানববন্ধনে বক্তরা খোকন সাহাকে কর্মীবান্ধব উল্লেখ করেন এবং তার বিরুদ্ধে মেয়র আইভী যে অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন তা মিথ্যা দাবি করেন। এ ছাড়াও এই মামলা অনতিবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানান তারা। অন্যথায় পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
তারা মেয়রকে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘খোকন সাহার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা যদি প্রত্যাহার না করেন, তাহলে আপনার নগর ভবনে ঢোকা বন্ধ করে দেব। এই দেশ সবার। আপনি জোর করে দখল করে নেবেন, আর সবাই বসে থাকবে, তা হবে না।’
অন্যদিকে একই দাবিতে এদিন বিকেল ৪টার দিকে ‘খোকন সাহা সমর্থক গোষ্ঠী’র ব্যানারে একই স্থানে আরেকটি মানববন্ধন করা হয়েছে। এই মানববন্ধন থেকেও আইভীর প্রতি বিষোদগার করাসহ নানা ধরনের হুমকি দেওয়া হয়।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র আইভী মানবিক নন, তাকে মানবিক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদা মালা বলেন, ‘আপনি খোকন সাহার বিরুদ্ধে মামলা করে অনেক বড় সাহস দেখিয়ে ফেলেছেন। আপনি যদি ভদ্র মহিলা হয়ে থাকেন, অনতিবিলম্বে মামলা প্রত্যাহার করুন।’
মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হান্নান আহমেদ দুলালের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জি. এম. আরমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদা মালা, আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত রবিউল ইসলাম, জেলা শ্রমিক লীগের বিলুপ্ত কমিটির নেতা আব্দুল কাদির, মহানগর আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হুমায়ূন মৃধা, সাত খুনে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নূর হোসেনের ‘বান্ধবী’ ও হত্যা মামলায় চার্জশিটভুক্ত জান্নাতুল ফেরদৌস নীলা প্রমুখ।
গেল বছরের ৪ জানুয়ারি খোকন সাহার বিরুদ্ধে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। এই মামলায় তিনি দুই নম্বর আসামি। প্রধান আসামি কানাডা প্রবাসী প্রদীপ দাস নামে এক ব্যক্তি, যিনি কানাডা থেকে প্রচারিত ‘হিন্দু লাইভ মেটারস’ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলের সঞ্চালক।
ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেলে মিথ্যা, মানহানিকর, উসকানিমূলক, ভিত্তিহীন সংবাদ ও ছবি প্রকাশ-সম্প্রচার করা এবং সেখানে বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগ মামলাটি করা হয়। ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আস সামছ জগলুল হোসেনের আদালত মেয়র আইভীর মামলার আবেদন গ্রহণ করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) তদন্ত করার নির্দেশ দেন। পরে সিআইডি তদন্ত শেষ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদনে অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া যায়।
মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য ছিল চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি। এদিন অ্যাডভোকেট খোকন সাহা উপস্থিত হননি এবং তার পক্ষে কোনো আইনজীবীও নিয়োগ করেননি। পরে বৃহস্পতিবার মামলার শুনানি হলে আদালত খোকন সাহার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
মন্তব্য