-->

ভ্যানচালককে পেটালেন মেয়র আরিফ

কামরুল ইসলাম মাহি, সিলেট ব্যুরো
ভ্যানচালককে পেটালেন মেয়র আরিফ
ভ্যান চালককে পেটাচ্ছেন মেয়র আরিফুল

সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে সিগারেট কোম্পানির ভ্যানের চালককে বেত্রাঘাত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শনিবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে সিলেট নগরের চৌহাট্টা এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় গাড়িতে বসে রুবেল নামে এক ভ্যান চালককে বেত্রাঘাত করেন মেয়র আরিফ।

এ ঘটনার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নগরবাসীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। জনপ্রতিনিধি হিসেবে কারও শরীরে হাত তোলার অধিকার মেয়রের নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার দুপুর ১টা ৫০ মিনিটের দিকে নগরের জিন্দাবাজার থেকে চৌহাট্টার দিকে মেয়র আরিফের গাড়ি যাচ্ছিল। চৌহাট্টায় রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সামনে সিগারেট কোম্পানির ভ্যানের চালক রাস্তার পাশের দোকানে সিগারেট ডেলিভারি দিতে যান। ভ্যানগাড়ি পার্কিং দেখে মেয়র আরিফ গাড়ি থামিয়ে ভ্যানচালককে ডেকে নেন।

এ সময় মেয়রের গাড়ির পাশে তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিসিক কর্মীও লাঠি হাতে অবস্থান নেন। মেয়র আরিফ নিজের গাড়িতে বসে লাঠি বের করে ভ্যান চালকের হাতে বেত্রাঘাত করেন এবং পার্কিংয়ের জন্য তাকে শাসিয়ে দেন। এ ঘটনার সময় মেয়রের গাড়ি বহরে থাকা আনসারের সদস্যও পাশে দাঁড়িয়ে ছিল।

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিগারেট কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। প্রতিবাদ করলে উল্টো বিপদ হবে। মেয়র জিন্দাবাজারে রিকশা ঢুকতে দেন না। এ নিয়ে মুখ খুললে ভ্যানগাড়ি প্রবেশও বন্ধ করে দেবেন। এমন হলে চাকরি থাকবে না।’

অতীতেও তিনি মারধর করেছেন দাবি করে ওই বিক্রয় প্রতিনিধি বলেন, ‘আমাদের জীবিকার প্রয়োজনে এসব সহ্য করতে হয়। এসব রাস্তা বন্ধ হলে ক্ষতি হবে।’ তারা জিম্মি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহিন বলেন, ‘এই আইনে কাউকে বেত্রাঘাত করতে আদালতের অনুমতির প্রয়োজন হয়। তবে দেশে এই আইনের প্রয়োগ নেই। এর বাইরে পুলিশ আইনে প্রয়োজনে লাঠিপেটার বিধান রয়েছে। এ ছাড়া কাউকে বেত্রাঘাত করা দণ্ডনীয় অপরাধ।’

এ ঘটনার পর সিলেট কোর্টের আইনজীবী দ্বেববত চৌধুরী লিটন মেয়র আরিফের লাঠি দিয়ে ভ্যানচালককে মারার ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে লিখেছেন, ‘দেশের প্রচলিত আইন কাউকে বেত্রাঘাতের অনুমতি দেয়নি। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নিশ্চয় আইনের ঊর্ধ্বে নন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে যাওয়া ছবিটি দেখে মনে হলো কাজটি আপনি মোটেও ভাল করেননি। যা হয়েছে সেটি ফৌজদারি অপরাধ। ওই লোকটি চাইলে বিচারপ্রার্থী হতে পারে!’

তিনি আরও লিখেন, ‘অদূরেই রাস্তার পাশে একটি প্রাইভেট কার পার্ক করা ছিল। কিন্তু মেয়র সেখানে নিরব! এই নগরের অনেক রিকশা-ভ্যানচালক ও খেটে খাওয়া মানুষের পিঠ খুঁজলে মেয়র আরিফের লাঠির আঘাতের দাগ খুঁজে পাওয়া যাবে নিশ্চয়।

আরেকজন ব্যক্তি লাঠি দিয়ে ভ্যানচালককে মারার ছবি ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে লিখেছেন, ‘একজন নিপীড়ক মেয়র এবং আমাদের বিবেক। ২৩.০৪.২২ চৌহাট্টা, সিলেট। একজন সিগারেট কোম্পানির কর্মচারী ভ্যান রেখে ডেলিভারি দিতে গেছেন পাশের দোকানে। সেই সময় পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো মেয়রের গাড়ি। তাকে দেখে এই ভ্যানচালক ভ্যান সরিয়ে নিতে গেলে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী তাকে হাত পাততে বলেন এবং উনার হাতে থাকা লাঠি দিয়ে দুটে বাড়ি দেন।’

‘কিন্তু একটু সামনেই রাস্তার পাশে একটি প্রাইভেট কার পার্ক করা ছিল, কিন্তু কবি সেখানে নীরব। এই শহরের অনেক রিকশা চালক ও খেটেখাওয়া মানুষের পিঠ খুঁজলে মেয়র আরিফের লাঠির আঘাতের অনেক দাগ খুঁজে পাওয়া যাবে।’

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ আরেকজনের পোস্ট শেয়ার করে লিখেছেন, ‘কাজটি সঠিক নয়।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘একজন যত বড় অপরাধীই হোক, কারও গায়ে হাত তোলার সুযোগ নেই। এটা পরিষ্কার মানবাধিকার লঙ্ঘন, বেআইনি কাজ। জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি কারও গায়ে হাত তুলতে পারেন না।’

এ ব্যাপারে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমি কেবল লাঠি দিয়ে তাকে ভয় দেখিয়েছি। এখন এটা নিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।’

মন্তব্য

Beta version