-->
শিরোনাম

সুন্দরবনে মধু কম, সংকটে মৌয়ালরা

মো. কামরুজ্জামান, বাগেরহাট
সুন্দরবনে মধু কম, সংকটে মৌয়ালরা
সুন্দরবনের মৌয়ালরা মধু সংগ্রহ করছেন

সুন্দরবনে চলতি মধু আহরণ মৌসুমে মধু পাচ্ছেন না মৌয়ালরা। মধু না পেয়ে অনেকটা শূন্য হাতে বাড়ি ফিরছেন তারা। এমন অবস্থায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে সুন্দরবনে মধু আহরণে আগ্রহ হারাচ্ছেন মৌয়ালরা। বন বিভাগ বলছে, অনাবৃষ্টি ও সঠিক সময়ে বনের গাছ-গাছালিতে ফুল না ফোটায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

গত ১৫ মার্চ থেকে সুন্দরবনে শুরু হওয়া মধু আহরণ মৌসুম চলবে ৩০ জুন পর্যন্ত। চলতি মধু আহরণ মৌসুমে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ থেকে ১০৫০ কুইন্টাল মধু এবং ৩৫০ কুইন্টাল মোম আহরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বন বিভাগ। এ বছর মধু ও মোম থেকে ২৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা রাজস্ব আয় হবে বলে আশা করছে সুন্দরবন বিভাগ।

বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ জানায়, গত ১৫ মার্চ থেকে এ বছর মধু আহরণ মৌসুম শুরু হলেও পূর্ব সুন্দরবন বিভাগে খলশী গাছের আধিক্য না থাকায় ১৫ দিন পর পাস নিয়ে গত ১ এপ্রিল বাগেরহাটের ১২৭টি দলের মৌয়ালরা বনে মধু সংগ্রহ করতে যায়। এর মধ্যে কাক্সিক্ষত মধু না পেয়ে নির্ধারিত সময়ের আগেই সুন্দরবনের শরণখোলা, চাঁদপাই, ঢাংমারী ও জিউধরা স্টেশনে ফিরে এসেছে প্রায় অর্ধশত মৌয়াল।

মৌয়ালরা জানায়, মধু আহরণে সুন্দরবন বিভাগের দ্বিগুণ রাজস্ব নির্ধারণসহ নৌকা ভাড়া, খাবারের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল ক্রয় এবং সব মিলিয়ে প্রতিটি দলের একজন সদস্যের খরচ হয়েছে প্রায় ১২ হাজার টাকা। কিন্তু মধু না পেয়ে প্রথম চালানেই লোকসানে পড়েছেন মৌয়ালরা।

এ অবস্থায় মহাজনদের কাছ থেকে নেওয়া দাদনের টাকা পরিশোধ করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। এমনকি বনে যাওয়ার মতো হাতে টাকা না থাকায় এ বছর দ্বিতীয়বার আর বনে যাবেন না এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে মৌয়ালদের অনেক দল।

শরণখোলা উপজেলার খুড়িয়াখালী গ্রামের মৌয়াল শাহাজাহান মুন্সী বলেন, প্রথম গোনে (১৪ দিনে) তার ১০ জনের দল মধু পেয়েছে মাত্র ১৭ কেজি। যা জনপ্রতি ভাগে পেয়েছেন এক কেজি ৭০০ গ্রাম করে। গত তিন যুগে সুন্দরবনে মধুর এমন বিপর্যয় দেখেননি তারা।

সাউথখালী ইউনিয়নের জলেরঘাট গ্রামের মৌয়াল রিয়াদুল ফরাজী বলেন, আগে বনের এক থেকে দেড় কিলোমিটার এলাকা খুঁজলেই চার থেকে পাঁচটি মৌচাক পাওয়া যেত। একেকটি মৌচাক থেকে ১০-১২ কেজি মধু পেয়েছেন তারা। কিন্তু এবার মাইলের পর মাইল হেঁটেও মৌচাক চোখে পড়ে না। বনে ফুলের সংখ্যাও কম দেখা গেছে। দু-একটি ছোট মৌচাক পাওয়া গেলেও তা ভেঙে দুই থেকে তিন শ গ্রাম করে মধু পাওয়া গেছে।

খুড়িয়াখালী গ্রামের মধু ব্যবসায়ী রাসেল আহমেদ বলেন, এবার এক লাখ টাকা মৌয়ালদের দিয়েছি। যে সংবাদ পাই তাতে চালান ফিরবে কিনা, সেই চিন্তায় পড়েছি।

বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা স্টেশন কর্মকর্তা (এসও) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, এ বছর প্রথম গোনে (১ এপ্রিল থেকে ১৫ এপ্রিল) শরণখোলা স্টেশন থেকে ৭৬টি দলকে মধু আহরণের পারমিট দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি দল তাদের পাস জমা দিয়েছে। কিছু কিছু দল ফিরে এলেও অনেকেই বনে রয়েছেন।

সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা (এসিএফ) শহিদুল ইসলাম জানান, পূর্ব সুন্দরবনে এ বছর ১০৫০ কুইন্টাল মধু এবং ৩৫০ কুইন্টাল মোম আহরণের লক্ষ্য নিয়ে শরণখোলা, চাঁদপাই, ঢাংমারী ও জিউধরা স্টেশন থেকে ১২৭টি পাস (পারমিট) দেওয়া হয়েছে। ৩০ জুন পর্যন্ত মধু আহরণ চলবে। প্রথম চালানে মধু কম হলেও মৌসুম শেষ না হওয়া পর্যন্ত কম বা বেশির হিসাব এখনই নির্ধারণ করা যাবে না।

বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, দুই বছর ধরে মধু আহরণ মৌসুমের সময় সুন্দরবন অঞ্চলে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হচ্ছে না। এ কারণে বনের গাছ-গাছালিতে ফুল এলেও তা শুকিয়ে ঝরে যাচ্ছে। ফলে মৌমাছি ও কীটপতঙ্গের খাদ্য-সংকট সৃষ্টি হয়।

‘তাই মধু না পেয়ে মৌমাছিও আসে না। গত বছরও প্রথম দিকে এমন পরিস্থিতি হয়েছিল। কিন্তু শেষের দিকে বৃষ্টি হওয়ায় ভালোই মধু পাওয়া গেছে।’ সামনে বৃষ্টিপাত হলে বনে ফুল এবং মধু পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন তারা।

মন্তব্য

Beta version