মৌলভীবাজারে ঘনঘন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। কোনো কারণ ছাড়া বারবার বিদ্যুৎ বিভ্রাটের প্রতিকার চেয়ে অভিযোগ করার পরও মিলছে না সমাধান। এতে সাধারণ মানুষ ফুঁসে উঠছেন। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন মাধ্যমে।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলা ও আশপাশের প্রায় সব উপজেলার বাসিন্দাদের অভিযোগ- ইফতার, তারাবির নামাজ ও সাহরির সময় দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিয়মিত হয়ে গেছে। একদিকে রমজান মাস অন্যদিকে চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমে তীব্র দাবদাহ। এ অবস্থায় এত ঘনঘন বিদ্যুৎ না থাকায় জনজীবনে এর প্রভাব পড়ছে। এ পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে অসন্তুষ্ট সব শ্রেণিপেশার মানুষ।
জানা গেছে, পবিত্র মাহে রমজানের আট রোজার পর থেকেই বিদ্যুৎ সমস্যায় অতিষ্ঠ শহরবাসী। প্রায় সময় কোনো কারণ ছাড়াই বিদ্যুৎ থাকে না। সামান্য বাতাসের লক্ষণ দেখা গেলেই চলে যায় বিদ্যুৎ। ঝড় বৃষ্টি হলে পাঁচ থেকে সাত ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না।
এর মধ্যে কয়েকবার বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রেখে সারা দিন মেরামত করার পরও বিদ্যুৎ বিভ্রাট যেন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।
অভিযোগ উঠেছে, মৌলভীবাজার বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তাদের উদাসীনতার কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিদ্যুৎ নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। সামান্য অজুহাতে প্রায়ই বিদ্যুৎ থাকে না।
এছাড়া বিদ্যুতের এই বিভ্রাটের কারণে চরম ক্ষতির সম্মুখীন এই জেলার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অফিস, দোকানপাটসহ স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। প্রচণ্ড গরম ও পবিত্র রমজান মাসে অতিষ্ঠ হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠছেন সাধারণ মানুষ। অনেকেই ব্যঙ্গাত্মক পোস্ট দিচ্ছেন।
শহরের বাসিন্দা অমিত রায় তার ফেসবুকে লিখেন, ‘ভোর, দুপুর, সন্ধ্যা, মধ্যরাত্রে নিয়ম করে আর ঝড় আসার প্রস্তুতিকালে সতর্কতার সঙ্গে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হওয়ার জন্য মৌলভীবাজার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সবাইকে ধন্যবাদ।’
সদর উপজেলার একাটুনা ইউনিয়নের জুয়েল আহমদ লেখেন, ‘খুব কষ্ট লাগে রমজান মাসে সাহরির সময়; কারেন্ট নেই রাত ১২টার পর থেকে। পল্লী বিদ্যুৎ অফিসটা দেখার কী কেউ নেই।’
‘বিদ্যুৎ কারণে নেয়, অকারণে নেয়। বাতাস, বৃষ্টি হলে তো শক্ত অজুহাত দার করায় বিদ্যুৎ অফিস।’ বলেন চাঁদনীঘাট এলাকার হাবিবুর রহমান রাজিব।
শিক্ষক জাহাঙ্গীর জয়েস বলেন, ‘ঝড়-তুফান বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে এক দুবার বিদ্যুৎ না থাকতে পারে। তাই বলে দিনের পর দিন বিদ্যুতের এই ভেলকিবাজি কত সহ্য করা যায়। এই অবস্থায় আমরা এগিয়ে যাচ্ছি না পেছনে যাচ্ছি এটা একটা বড় প্রশ্ন।’
এদিকে বেশ কিছুদিন ধরেই জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে একবার বিদ্যুৎ গেলে আসতে প্রায় পাঁচ থেকে সাত ঘণ্টা সময় লাগে। আবার কখনো সারারাত কিংবা দিনব্যাপী চলে বিদ্যুতের লুকোচুরি খেলা। সম্প্রতি এই সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারণ করছে। প্রতিদিন মানুষ লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে চার থেকে পাঁচবার। আর রাতের বেলা, ভোররাতে কিংবা প্রচণ্ড রোদেও দুই থেকে তিন ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না।
বড়লেখা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার এমাজ উদ্দীন সরদার বলেন, ‘মানুষের ভোগান্তি না হওয়ার জন্য আমরা রাত-দিন কাজ করি। ঝড়-বৃষ্টি শুরুর আগে একাধিক লাইন মেরামত করা হয়েছে। এখনো প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি।’
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন জানান, এই মুহূর্তে অধিক ঝড়-তুফানের কারণে ঘনঘন বিদ্যুৎ যাচ্ছে। আমরা একদিকে মেরামত করি অন্যদিকে ঝড় বৃষ্টিতে লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই, জনসাধারণকে সেবা দিতে আমরা বদ্ধপরিকর।
মন্তব্য