পবিত্র ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে মহাসড়কে যানজট এড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে পুলিশ ও সড়ক বিভাগ। পাশাপাশি যানজটে যাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘবে রাস্তার পাশে অস্থায়ী টয়লেট নির্মাণসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।উত্তরবঙ্গসহ প্রায় ২৩টি জেলার যানবাহন ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক দিয়ে যাতায়াত করে। ঈদকে কেন্দ্র করে যানবাহনের সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ঘরমুখো মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
এসব কথা মাথায় রেখে মহাসড়কের মির্জাপুর উপজেলার গোড়াইয়ে নির্মিত উড়াল সড়কটি ২৫ এপ্রিল যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। যাতে করে নির্বিঘ্নে যান চলাচল করতে পারছে।
সাসেক-১-এর অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক নূর-এ-আলম বলেন, ‘গোড়াই উড়াল সেতুটি গুরত্বপূর্ণ। বিভিন্ন কারণে সেতুটি কাজ করতে একটু সময় লেগেছে। অল্প কিছু কাজ বাকি থাকলেও বর্তমানে সেতুটি যান চলাচলের জন্য উপভোগী। মানুষের ভোগান্তি কমাতে ঈদের আগে খুলে দেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘ইতোমধ্যে উত্তর ও পশ্চিমবঙ্গসহ ২৩ জেলা মানুষ এই সেতু ব্যবহার করছে। এতে করে চার লেন এলাকায় কোনো যানজট হবে না। অন্য বছরের তুলনায় ঘরমুখো মানুষের চাপ বাড়লেও যানজট না হওয়ায় ভোগান্তি হবে না।’
বঙ্গবন্ধু সেতু টোল প্লাজা সূত্র জানায়, স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতিদিন ১২ থেকে ১৩ হাজার যানবাহন সেতু পারাপার হয়। কিন্তু ঈদের ছুটি শুরু হলে সেতু দিয়ে পারাপার হয় প্রায় ৫০ হাজার যানবাহন। ফলে এই মহাসড়কে প্রতি বছর যানজটে ঈদে ঘরমুখো মানুষের আটকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
পুলিশ জানায়, ঢাকা থেকে যানবাহনগুলো চার লেন সড়কের সুবিধায় টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পর্যন্ত আসতে পারে। কিন্তু এলেঙ্গার পর থেকে সেতু পর্যন্ত সড়ক দুই লেন। চার লেনের যানবাহন দুই লেন সড়কে প্রবেশের সময় যানজটের সৃষ্টি হয়।
এবার এলেঙ্গা থেকে সেতুর টোল প্লাজার কাছে গোলচত্বর পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার একমুখী (ওয়ানওয়ে) করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এলেঙ্গা থেকে এই সড়ক দিয়ে ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী যানবাহন চলবে। আর উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকাগামী যানবাহন সেতু পার হওয়ার পর বিকল্প সড়ক হিসেবে গোলচত্বর থেকে উত্তর দিকে ভূঞাপুর হয়ে এলেঙ্গা পর্যন্ত আসবে।
এদিকে যানজট হলে যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপাড় পর্যন্ত জেলা পুলিশের উদ্যোগে ২৫ অস্থায়ী টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে।
মহাসড়কের পাশের আনালিয়া বাড়ি গ্রামের আক্কাস মিয়া জানান, প্রতি বছরই ঈদকে কেন্দ্র করে এ মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে করে নারী ও শিশুরা টয়লেট করতে আশপাশের বাড়িতে ঢুকে পড়ে। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে ঘরমুখো মানুষের ঝগড়াও হয়। মহাসড়কের পাশে অস্থায়ী টয়লেট করে দিলে ঘরমুখো মানুষের জন্য অনেক উপকার হবে।
এলেঙ্গা পৌরসভার মেয়র নূর-এ-আলম সিদ্দিকী বলেন, ইতোপূর্বে ঈদকে কেন্দ্র করে সিরাজগঞ্জ থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত যানজট হয়েছে। যানজটে আটকেপড়া মানুষের দুর্ভোগ কমাতে টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও ঘরমুখো মানুষের জন্য ইফতারের ব্যবস্থা করা হবে।’
পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, ‘ঈদকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর পুলিশের পক্ষ থেকে যানজট নিয়ন্ত্রণ ও যানজটে আটকে থাকা মানুষের ভোগান্তি লাঘবেও কাজ করে থাকে। মহাসড়কের যানজট নিয়ন্ত্রণে ৬১০ জন পুলিশ সদস্য ও ২০০ জন এপিবিএনের সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।’
মোহাম্মদ কায়সার বলেন বলেন, ‘উত্তরবঙ্গমুখী যানবাহনের জন্য সড়কের সহযোগিতায় এলেঙ্গা থেকে দক্ষিণ দিক দিয়ে বিকল্প রাস্তাটি সংস্কার করা হয়েছে। এই রাস্তার কারণে এলেঙ্গা কেন্দ্রিক যে যানজট সেটি আর হবে না। এছাড়াও মধুপুর, জামালপুর ও ময়মনসিংহ থেকে আসা যানবাহন যেগুলো উত্তরবঙ্গের দিকে যায় সেগুলোর জন্য এলেঙ্গাতে বাস বে তৈরি করা হয়েছে।’
পুলিশ সুপার বলেন, ‘যাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘবে যাত্রীরা যানজটে আটকা পড়লে মহাসড়কের পাশে পেট্রল পাম্প, হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলোতে যাতে শৌচাগার ব্যবহার করতে পারে সে জন্য তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার সড়কের পাশে পাম্প, রেস্তোরাঁ নেই। তাই ওই অংশে ২৫টি অস্থায়ী টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে।’
মন্তব্য