-->
শিরোনাম

মা-বাবার পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন মুহিত

কামরুল ইসলাম মাহি, সিলেট
মা-বাবার পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন মুহিত

সদ্যপ্রয়াত সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে রোববার সিলেট নগরের রায়নগর এলাকায় পারিবারিক কবরস্থানে মা-বাবার কবরের পাশে দাফন করা হবে। এর আগে দুপুর ২টায় নগরের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

শনিবার দুপুরে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ মুহিতের জানাজা ও দাফনের বিষয়ে জরুরি বৈঠক ডাকে।বিষয়টি নিশ্চিত করে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন ভোরের আকাশকে বলেন, ‘মুহিত স্যারকে পারিবারিক কবরস্থানেই দাফন করা হবে। এরই মধ্যে পুরো কবরস্থান পরিষ্কার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে যেখানে তার কবর খোঁড়া হয়েছে, সেই স্থানটিও পরিষ্কার করা হয়েছে। মা-বাবার কবরের পাশেই হবে কবর।’

খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ, ভাষাসৈনিক, সাবেক অর্থমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল মাল আবদুল মুহিত শুক্রবার রাত ১২টা ৫৬ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

শনিবার রাজধানী ঢাকায় আনুষ্ঠানিকতা শেষে রাতে সিলেটে পৌঁছায় মুহিতের মরদেহ। তার পদচারণায় যে স্থানটি নেতাকর্মীসহ সিলেটের আপামর মানুষের আনাগোনা হতো সেই হাফিজ কমপ্লেক্সে রাখা হয় তার নিথর দেহ।

এদিকে বরেণ্য এই অর্থনীতিবীদের মৃত্যুর খবরে সিলেটজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মৃত্যু সংবাদ সিলেটে আসার পর থেকেই মুহিতের সিলেটের ধোপাদিঘীপাড়স্থ হাফিজ কমপ্লেক্স বাসায় নেতাকর্মীদের ঢল নেমেছে।

এদিকে সিলেট সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা শনিবার দুপুর থেকে পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু করেন। কবরের স্থানও নির্ধারণ করা হয়েছে। মা সৈয়দা শাহারা বানু চৌধুরী ও বাবা আবদুল হাফিজের কবরের পাশে দাফন করা হবে তাকে। সেই জায়গাটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে।

রোববার দুপুর ১২টায় সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সিলেটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তার লাশ নেওয়া হবে। এ দিন দুপুর ২টার দিকে দরগাহ মসজিদে জোহরের নামাজ শেষে জানাজার নামাজের জন্য আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে নেওয়া হবে সাবেক অর্থমন্ত্রী মুহিতের লাশ।

এদিকে তার মৃত্যুতে সিলেটে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দুই দিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে কালো ব্যাজ ধারণ ও ঈদের পরদিন মিলাদ ও দোয়া মাহফিল।

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আরমান আহমেদ শিপলু বলেন, ‘সবকিছু বিবেচনা করেই মরহুম এই নেতার জানাজার নামাজ আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। এরপর নগরীর রায়নগরে ডিপ্টিবাড়ি পারিবারিক গোরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।’সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য জুমাদিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের অভিভাবককে হারিয়ে দিশাহারা হয়ে গেছি। এই ক্ষতি আমাদের আর পূরণ হবে না। সিলেটের উন্নয়ন তথা এই অঞ্চলের মানুষের জন্য তার নিরলস প্রচেষ্টা সবসময় ছিল।’

শহীদ মিনারে মুহিতের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা

রাজধানীর গুলশান আজাদ মসজিদে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রথম জানাজা শেষে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তার মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হয়।

শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তার মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হয়। এরপর সোয়া ১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কেন্দ্রীয় মসজিদে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শেষে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের মরদেহ নিয়ে ফ্রিজিংভ্যান সিলেটের উদ্দেশে যাত্রা করে।

সেখানে সাবেক এই অর্থমন্ত্রীর মরদেহের প্রতি রাষ্ট্রপতির পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাউদ্দিন ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তার সামরিক সচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কবির আহমেদ, স্পিকারের পক্ষে সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস কমরেড এম নাইম রহমান।

আওয়ামী লীগের পক্ষে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, মতিয়া চৌধুরী, ঢাবি উপাচার্য ড. আখতারুজ্জামান, তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, জাসদের হাসানুল হক ইনু, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন মরহুমের ছোট ভাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।

এছাড়া শ্রদ্ধা জানিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ), মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স, বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ও ভারতীয় হাইকমিশন।

আবুল মাল আবদুল মুহিত ১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সিলেট নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৪ ভাইবোনের মধ্যে তার অবস্থান ছিল তৃতীয়। মা-বাবা দুজনই তৎকালীন সিলেট জেলার রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে টানা ১০টিসহ মোট ১২টি বাজেট দিয়ে অনন্য রেকর্ড সৃষ্টি করে গেছেন মুহিত। তিনি ভাষাসংগ্রামী ও রেকর্ডধারী অর্থমন্ত্রী ছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন তার ছোটভাই। এদিকে তার মৃত্যুতে শোকে মুহ্যমান সিলেটবাসী।

মন্তব্য

Beta version