-->
শিরোনাম

ফরিদপুর জেলা আ.লীগের সম্মেলন ঘিরে সাজ সাজ রব

সঞ্জিব দাস, ফরিদপুর
ফরিদপুর জেলা আ.লীগের সম্মেলন ঘিরে সাজ সাজ রব

আগামী ১২ মে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। সম্মেলনের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে শহরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ মাঠ। এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় মঞ্চ তৈরির কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। এক লাখ পাঁচ হাজার বর্গফুটজুড়ে তৈরি এ মঞ্চে ১৫ হাজার চেয়ারের বসার ব্যবস্থা থাকছে। বৈশাখী ঝড়ের চিন্তা মাথায় রেখে লোহার পোল দিয়ে মূল মঞ্চের কিছু অংশজুড়ে তৈরি করা হয়েছে বিশেষ মঞ্চ।

দলীয় সূত্র জানায়, ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের এবারের এই ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে উদ্বোধক হিসেবে থাকবেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। প্রধান অতিথি রয়েছেন প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ। বিশেষ অতিথি হিসেবে রয়েছেন প্রেসিডিয়াম মেম্বার ড. আব্দুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমানসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।

সম্মেলনকে ঘিরে এরই মধ্যে তৃনমূল আওয়ামী লীগে চাঙা ভাব লক্ষ করা গেছে। শহরের রাস্তাগুলো ব্যানার, ফেস্টুন ও গেট দিয়ে সাজানো হচ্ছে তাদের পদ চেয়ে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, এর আগে তৃণমূল আওয়ামী লীগকে পাশ কাটিয়ে যে নব্য লীগ গঠন হয়, ধারণা করা হচ্ছে সেই জামানার অবসান হতে চলছে এবার। যারা সে সময় সুযোগ-সুবিধা নিয়ে পদসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছে তাদেরকে পাশ কাটিয়ে পদবঞ্চিত মূল আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্য থেকে কমিটি গঠনের তোরজোর শোনা যাচ্ছে নেতাদের মুখ থেকে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এবার মূল্যায়ন করা হবে আওয়ামী লীগের সুবিধাবঞ্চিত নেতাকর্মীদের।

দল ক্ষমতায় থাকাকালে গত বারো বছর চরম নির্যাতন ও উৎকণ্ঠায় থাকা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংযোগ থাকা নেতাদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হবে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন। এজন্য তারা তাকিয়ে আছেন দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার দিকে।

এদিকে সম্মেলন ঘনিয়ে আসায় সাধারণ মানুষ ও নেতাকর্মীদের মাঝে এক ধরনের উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয়রা বলছেন, জেলার রাজনীতিতে মোশারফের সমর্থনে থাকা অনেকে এখন ত্যাগী সেজেছেন। রাতারাতি ভোল পাল্টানো এসব ত্যাগী সাজা নেতাদের হাতে আবার ক্ষমতা গেলে দলের পরিবর্তন তো হবেই না বরং ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করেন তারা।

জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ঝর্ণা হাসান বলেন, ‘ফরিদপুরে একটি জাঁকজমকপূর্ণ সম্মেলন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর আগে রাজবাড়ীতেও বেশ জাঁকজমকপূর্ণ সম্মেলন করা হয়েছে। তারচেয়েও বড় আকারের প্রন্তুতি রয়েছে আমাদের। দলের লোকজন আমাকে এবার সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে দেখতে চায়। নেত্রী যদি দেন তাহলে আমি দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত।’

শহর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম মিঠু বলেন, ‘গত বারো বছরের মোশারফ জামানায় আমি নব্য আওয়ামী লীগের জয়জয়কার সময়ে ঢাকা চলে গিয়েছিলাম। কখনো কেউ বলতে পারবে না তার সঙ্গে আমাকে দেখেছে। আমরা চাইব দীর্ঘদিন পদবঞ্চিত জেলার পরীক্ষিত লড়াই সংগ্রামে ভূমিকা রাখা নেতাদের দিয়ে কমিটি করা হোক। নেত্রীর কাছে এটাই আমাদের চাওয়া।’

এবারের সম্মেলনে সভাপতি প্রার্থী ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য বর্ষিয়ান নেতা বিপুল ঘোষ।

তিনি বলেন, ‘২০০৮ সালে আমার দল ক্ষমতায় আসার পর ক্ষমতা প্রয়োগ করে আমাকে দলীয় কর্মকাণ্ড থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এক প্রকার ঘরবন্দি অবস্থায় চলে আমার জীবন। দলের জন্য দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরের ওপর কাজ করেছি। আশা করছি শেষ বয়সে নেত্রী আমাকে মূল্যায়ন করবেন।’

তিনি বলেন, ‘যারা সুবিধা নিয়ে পদসহ নানাভাবে লাভবান তারা মিথ্যা প্রচারে ব্যস্ত। এ নিয়ে আমার কোনো কথা নেই। কারণ তারা কেন্দ্রে গিয়ে নানাভাবে আমার অসুস্থতার কথা বলে। আসলে তারা জানে দলের জন্য আমার কী ভূমিকা ছিল। এজন্য তারা আমাকে ভয় পায়। ১৭ বারের জেল জীবনের বেশির ভাগ সময় কেটেছে জেলে। আশা করি, এবারের সম্মেলনে নেত্রী ত্যাগী পরীক্ষিতদের মূল্যায়ন করবেন।’

ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেন বলেন, ‘সম্মেলন বাস্তবায়নে সবধরনের প্রস্তুতিই গ্রহণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত সবকিছু ভালোভাবেই চলছে। মঞ্চ তৈরির কাজও ভালোভাবেই চলছে। আমি এবারের সম্মেলনে প্রার্থী হয়েছি। আশা করছি, দল আমাকে মূল্যায়ন করবে।’

ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবল চন্দ্র সাহা বলেন, সম্মেলন সফল ও সার্থক করে তুলতে দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা সর্বাত্মক শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। কোনো ধরনের অনভিপ্রেত পরিস্থিতির মুখোমুখি হবো না বলে আশা করছি। সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করছে। আশা করছি, একটি সফল সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

মন্তব্য

Beta version