-->
শিরোনাম

আগুনে পুড়ে ছাই হলো হানিফের স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন

নেত্রকোনা প্রতিনিধি
আগুনে পুড়ে ছাই হলো হানিফের স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন

নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার চন্ডিগড় ইউনিয়নের ফেচিয়া গ্রামের হানিফ মিয়া। স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ চার সদস্যের সংসার তার। বসতভিটেটুকু ছাড়া সহায় সম্পদ বলতে কিছুই নেই। এ অবস্থায় স্থানীয় ব্র্যাক ও ডিএসকে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে কিনেছিলেন ৪টি গাভীসহ ৬টি গরু এবং ৮টি ছাগল। স্বপ্ন ছিল এসব গরু-ছাগল পরিচর্যা করে স্বাবলম্বী হওয়ার।

কিন্তু হতদরিদ্র হানিফের সেই স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন আর বাস্তবায়ন হলো না। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ৫টি গরু ও ৮টি ছাগল। সোমবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে হানিফ মিয়ার গোয়ালঘরে এ আগুন লাগার ঘটনা ঘটে।

মঙ্গলবার সকালে হানিফ মিয়ার বাড়িতে যেন এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। খবর পেয়ে প্রতিবেশীরাও ছুটে আসেন হানিফের পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে। তবুও হানিফ এবং তার স্ত্রী নূরজাহান বেগমের বিলাপ করে কান্না যেন কিছুতেই থামছিল না।

ক্ষতিগ্রস্ত হানিফ মিয়া সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ব্র্যাক ও ডিএসকে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে আমি এ গরু ও ছাগলগুলো কিনে লালন পালন করছিলাম। গরুগুলোর মধ্যে ৪টি গাভী এবং ২টি ষাঁড় গরু রয়েছে। আর ছাগল ৮টি। এরমধ্যে গাভী গরু বিক্রি করে সংসার চালানোর পাশাপাশি ঋণের কিস্তি পরিশোধ করে আসছিলাম। সর্বনাশা আগুন আমার সব শেষ করে দিল। এখন কী করে সংসার চালাবো আর কিভাবে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করব- তা ভেবে পাচ্ছি না।

আগুনে অন্তত ৭ লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সোমবার রাত ১২টার দিকে আমি স্থানীয় দোকান থেকে বাড়িতে আসি। তারপর গোয়ালঘরে গরুগুলোকে খাবার দিয়ে পরে নিজে খাওয়া দাওয়া শেষে ঘুমিয়ে পড়ি।

এর কিছুক্ষণ পরই গোয়ালঘরে ছাগলের চিৎকার শুনে আমার স্ত্রী ঘর থেকে বের হয়ে গোয়ালঘরে আগুল জ্বলতে দেখতে পায়। এ সময় মুহূর্তেই আগুন পুরো গোয়ালঘরে ছড়িয়ে পড়ে। পরে আমাদের ডাক-চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কিন্তু ততক্ষণে গোয়ালঘরে থাকা আমার ৬টি গরুর মধ্যে ৫টি গরু ও ৮টি ছাগল পুড়ে মারা যায়। তবে আহত অবস্থায় একটি গাভী এখনও জীবিত আছে বলে তিনি জানান।

কিভাবে এ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে জানতে চাইলে হানিফ মিয়ার স্ত্রী নূরজাহান বেগম বলেন, গোয়ালঘরে বিদ্যুৎ লাইন নেই। তবে সৌরবিদ্যুৎ আছে। আগুন কোথা থেকে এল সেটা আমরা বলতে পারছি না। এই গরু-ছাগলগুলোই আমাদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন ছিল কিন্তু সেগুলোও আগুনে পুড়ে শেষ হয়ে গেল।

স্থানীয় চন্ডিগড় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আলম সরকার বলেন, ‘ঘটনাটি দুঃখজনক। এতে দরিদ্র হানিফ মিয়ার চরম ক্ষতি হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হানিফকে যাতে সরকারি সহায় প্রদান করা হয় সে জন্য আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলবো।’

এ বিষয়ে কথা হলে দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজিব উল আহসান বলেন, ‘স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হানিফ মিয়াকে আমার দপ্তরে ডেকে আনা হয়। মঙ্গলবার বিকেলে তার হাতে দুই বান্ডেল ঢেউটিন, নগদ ৩ হাজার টাকা, ৬০ কেজি চালসহ কিছু শুকনো খাবার তুলে দেওয়া হয়েছে। পরে তাকে আর্থিকভাবে আরো সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে।’

মন্তব্য

Beta version