-->
শিরোনাম

জনবল সংকটেও সেবায় সেরা

আমীর হামজা, হবিগঞ্জ
জনবল সংকটেও সেবায় সেরা

সরকারি হাসপাতালগুলো নিয়ে অভিযোগের অন্ত থাকে না; যা আমরা প্রতিনিয়ত সংবাদমাধ্যমগুলোতে দেখতে পায়। তবে এত অভিযোগের মধ্যেও আলো দেখাচ্ছে একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। জনবল ঘাটতি থাকলেও সেবায় কুড়াচ্ছে সুনাম। জেলায় স্বাভাবিক প্রসূতি সেবায় রেকর্ডও গড়েছে হাসপাতালটি।

বলছি হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কথা। সেবা ও মানের দিক থেকে বোঝার উপায় নেই যে এটি কোনো সরকারি হাসপাতাল। লোকবল সংকটের মধ্যেও শতভাগ চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

রোগীরা বলছেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির সেবার মান বেড়েছে আগের চেয়ে কয়েক গুণ। ডায়াবেটিস ও যক্ষ্মাসহ যেকোনো ধরনের চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছে হাসপাতালটিতে। এ সেবা আগামীতেও অব্যাহত রাখার দাবি তাদের।

হবিগঞ্জ জেলার দ্বিতীয় বৃহত্তম উপজেলা নবীগঞ্জ। চিকিৎসার ক্ষেত্রে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সই এ উপজেলার জনগণের একমাত্র প্রধান ভরসাস্থল। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই সীমিত জনবল নিয়ে স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে এই হাসপাতালটি। গুরুতর কোনো সমস্যা হলে জেলা সদর না হলে ৬৫ কিলোমিটার দূরত্বের সিলেটে রোগী নিয়ে যেতে হয়।

৩১ শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরু হয় নবীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। তবে ২০১৮ সালের ১ জুলাই ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয় এটি। এরপর ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (টিএইচও) হিসেবে যোগ দেন ডা. আব্দুস সামাদ। ৫০ শয্যার জন্য জনবল না বাড়লে ৩১ শয্যার জনবল দিয়েই আব্দুস সামাদের দক্ষ নেতৃত্বে সেবার গুণগত মান বেড়েছে কয়েক গুণ।

হাসপাতালে এনসিডি কর্নার (সংক্রমণ রোগ), এএনসি (প্রসবসেবা) ও টিএনসি (টেলিমেডিসিন সেবা) কর্ণার চালু রয়েছে। এ ছাড়া হাসপাতালে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকছে ডেন্টাল কর্নার। ডায়াবেটিস, যক্ষ্মা ফুল কোর্স ও উচ্চরক্তচাপের চিকিৎসা দেওয়া হয় হাসপাতালটিতে। জেলার ৯টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মধ্যে প্রতি মাসেই স্বাভাবিক প্রসূতি সেবায় রেকর্ডও গড়েছে হাসপাতালটি। শুধু সেবা নয়, হাসপাতালের ভেতর ও বাইরে সাজানো হয়েছে নান্দনিকভাবে। হাসপাতালের ভেতরেই ব্যবস্থা করা হয়েছে নারীদের নামাজের।

নবীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে এসেছেন উপজেলার রাজাবাদ গ্রামের মরিয়ম বেগম। তিনি বলেন, ‘নবীগঞ্জ হাসপাতাল এখন আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে। যে কোনো রোগ নিয়া আসলে ওষুধ পাওয়া যায়। এ ছাড়া হাসপাতালে আগে ময়লা-আবর্জনা ছিল। এখন সুন্দর পরিবেশ হইছে।’

দেবপাড়া গ্রামের আব্দুর রহমান বলেন, ‘আগে আমি নবীগঞ্জ হাসপাতালে খুব একটা আসতাম না। এখন সেবা ভালো দেওয়ায় কোনো দরকার হলেই হাসপাতালে আসি। আমরা চাই হাসপাতালের মান আরো বাড়ুক। গরিব অসহায় মানুষেরা যাতে ভালো সেবা পায়।’

কামড়াখাই গ্রামের চম্পা রানী বলেন, ‘আমরা সাত দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছি। সরকারি হাসপাতাল হলেও মান ভালো। ঘণ্টায় ঘণ্টায় চিকিৎসকেরা দেখে যান।’

আবাসিক চিকিৎসক কর্মকর্তা (আরএমও) চম্পক কিশোর সাহা সুমন বলেন, ‘ডায়াবেটিক ও উচ্চরক্তচাপের যে রোগীরা রয়েছে তাদের আমরা আলাদাভাবে চিকিৎসা দিচ্ছি। অনলাইনে ডেটাবেইস তৈরি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এতে করে যখন রোগীর ওষুধ শেষ হয়ে যাচ্ছে, তখন রোগীকে এসএমএস পাঠানো হচ্ছে হাসপাতালে আসার জন্য।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালটি ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও জনবল বাড়েনি। তবুও যে জনবল আছে, তাদের আন্তরিকতার কারণে আমাদের সেবা দিতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।’উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (টিএইচও) আব্দুস সামাদ বলেন, ‘হাসপাতালে এনসিডি, এএনসি, টিএনসি, আইএমসি কর্ণার চালু রয়েছে। এখানে প্রতিদিন ৬০০ রোগী চিকিৎসা দিচ্ছেন। এ ছাড়া ডায়াবেটিস, যক্ষ্মা ফুল কোর্স ও উচ্চরক্তচাপের চিকিৎসা দেওয়া হয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘হাসপাতালে আমি ছোট দুটি বাগান করেছি। নারীদের নামাজের ব্যবস্থা করেছি। এসব করা সম্ভব হয়েছে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতার কারণে।’

নরমাল ডেলিভারির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা জেলার সর্বোচ্চ রেকর্ড সংখ্যক ডেলিভারি করছি প্রতি মাসে। মাসে গড়ে ৯০ থেকে শতাধিক স্বাভাবিক প্রসূতি সেবা দেওয়া হচ্ছে। তবে জনবলসংকটের সমাধান হলে সেবার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই।’

মন্তব্য

Beta version