-->
শিরোনাম

৩শ’ কোটি টাকার নির্মাণাধীন বেড়িবাঁধে ফাটল

মো. কামরুজ্জামান, বাগেরহাট
৩শ’ কোটি টাকার নির্মাণাধীন বেড়িবাঁধে ফাটল

বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা দিয়ে বয়ে গেছে বলেশ্বর নদী। এ নদীর তীরবর্তী এলাকায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) একটি বেড়িবাঁধ করছে। নির্মাণাধীন এ বেড়িবাঁধে দেখা দিয়েছে ফাটল। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী। তাদের দাবি, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাঁধের মধ্যে মাটি না দিয়ে বালু দেওয়ায় এমন ফাটল ধরেছে।

উপজেলার গাবতলা বাজার সংলগ্ন বেড়িবাঁধের মাঝে ১৫ থেকে ২০ ফুট লম্বা এই ফাটল দেখা যায়। এর আগে বুধবার দুপুরে ফেটে যাওয়া এলাকায় বেড়িবাঁধের বাইরে থাকা গাবতলা গ্রামের ছফেদ খানের ১০ কাঠা জমি গাছপালাসহ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরে শরণখোলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। স্বজন হারানোর বেদনা ও আর্থিক ক্ষতি ভুলে এলাকাবাসীর একমাত্র দাবি ছিল টেকসই বেড়িবাঁধের। গণমানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সরকার ২০১৫ সালে সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প (সিইআইপি)’ নামে একটি প্রকল্পের অধীনে মোরেলগঞ্জ থেকে শরণখোলা উপজেলার বগী-গাবতলা পর্যন্ত ৬২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ শুরু হয়।

নির্মাণাধীন এই বেড়িবাঁধ তিন বছরের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও দীর্ঘ সাত বছরেও সেই কাজ শেষ হয়নি। দীর্ঘ এই সময়ে শেষ হয়েছে ৫৮ কিলোমিটারের কাজ। নির্মাণকাজ শেষের আগেই সেই বাঁধে দেখা দিয়েছে ফাটল। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ইচ্ছেমতো কাজ করেছেন ঠিকাদাররা। মাটি ফেলার কথা থাকলেও তারা ফেলছেন বালু। এতেই বাঁধে ফাটল ধরেছে। অতিদ্রুত ফাটলের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে জমি ও বাড়িঘরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।

জমি হারানো ছফেদ খান বলেন, ‘বেড়িবাঁধের বাইরে আমার এক বিঘা (৬৫ শতক) জমি রয়েছে। বুধবার দুপুরে হঠাৎ করে ১০ কাঠা জমি ডেবে যায়। সেই জমি ধীরে ধীরে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। বাকি জমিতেও ফাটল রয়েছে। যেকোনো সময় নদীতে বাকি জমিটুকুও বিলীন হয়ে যেতে পারে। এভাবে বাপ-দাদার অনেক জমি হারিয়েছি আমি।’

উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জাকির হোসেন বলেন, ‘উপজেলাকে রক্ষার জন্য একটি টেকসই বেড়িবাঁধ আমাদের প্রাণের দাবি ছিল। সরকার বরাদ্দও দিয়েছিল। কিন্তু ঠিকাদারদের গাফিলতিতে বাঁধ হুমকির মুখে। যেখানে মাটি দেওয়ার কথা সেখানে তারা বালু দিয়েছে। ফলে নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার আগেই ফাটল দেখা দিয়েছে।’

শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর-ই আলম সিদ্দিকি বলেন, ‘নির্মাণাধীন বলেশ্বর নদী-তীরবর্তী বেড়িবাঁধে ফাটল ও ভাঙনের খবর পেয়ে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। বাস্তবায়নকারী সংস্থা সিইআইপি প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে কথা বলেছি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সিইআইপি প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, ‘শুনেছি বেড়িবাঁধে ফাটল ধরেছে। আমাদের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। দ্রুত সময়ের মধ্যে ফাটলের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

মন্তব্য

Beta version