প্রথমে বৃষ্টিতে আবাদি জমিতে জমে পানি। পরে কালবৈশাখীতে নুয়ে পড়ে ধানগাছ। অবশেষে যোগ হয়েছে শ্রমিক সংকট। সব মিলিয়ে বিপাকে রয়েছেন জয়পুরহাটের চাষিরা। বোরো ধান কাটা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন তারা।
কৃষকরা বলছেন, চলতি মৌসুমে বোরোর আবাদ ভালো হয়েছে। কিন্তু জমিতে পানি থাকায় ধান কাটার মজুরি বেশি হাঁকছেন কৃষিশ্রমিকরা। এমনকি বেশি মজুরি দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না শ্রমিক। ফলে সংকটে পড়েছেন তারা। সব মিলিয়ে ধান উৎপাদনে কৃষকদের বাড়তি খরচ যোগ করতে হচ্ছে তাদের। কষ্টের ফসল ঘরে তুলতে বাধ্য হয়ে বেশি দামে ধান কেটে নিচ্ছেন কৃষকরা।
তারা জানান, গত ২৯ এপ্রিল প্রচণ্ড বৃষ্টি ও কালবৈশাখী ঝড়ে নুয়ে পড়েছে ধানগাছ। গত শুক্রবার সকালেও প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। এতে আবাদি জমিতে পানি জমেছে। এ ছাড়াও কৃষকরা বড় বিপদে পড়েছেন মাড়াইয়ের পর ভেজা খড় নিয়ে। রোদ না থাকায় ভেজা খড় শুকাতে পারছেন না তারা। পচে নষ্ট হচ্ছে এসব খড়। এতে করে গৃহপালিত পশুর খাদ্যসংকটের শঙ্কায় রয়েছেন তারা।
জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার রাঁধাবাড়ি এলাকার আহসান হোসেন বলেন, ‘ধান কাটা শ্রমিকের খুব সংকট। এক বিঘা জমির ধান কাটতে শ্রমিককে দিতে হচ্ছে সাড়ে চার হাজার টাকা। সেই ধান মেশিনে মাড়াই করতে বিঘাপ্রতি আরো ৪০০ টাকা খরচ। আবার সেই ভেজা ধান রোদ না থাকায় শুকানো যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে ধানের চাষ করে এবার বড় সংকটে আছি।’
ক্ষেতলাল উপজেলার মহব্বতপুর গ্রামের প্রান্তিক চাষি আফজাল হোসেন ও বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘নিজের কৃষিজমি নেই। অন্যের জমি নিয়ে বিঘাপ্রতি নির্দিষ্ট পরিমাণ ধান দেওয়ার অঙ্গীকারে বোরোর আবাদ করেছি। কিন্তু এবার বৃষ্টি আর বৈশাখী ঝড়ে ধানের ক্ষতি হয়েছে। আবার ধান কাটা ও মাড়াইয়ের খরচ দিয়ে লাভ তো দূরের কথা, উৎপাদন খরচও উঠবে না।’
নীলফামারী জেলার ডোমার থেকে মহব্বতপুর গ্রামে আসা কৃষিশ্রমিক মোহসীন আবুল বললেন, ‘বৈরী আবহাওয়ার কারণে শ্রমিকের দাম বেড়েছে এটা সত্য। আবহাওয়া ভালো থাকলে, পানি না জমলে এবং গাছ নুয়ে না পড়লে মজুরি বেশি পড়ত না। নুয়ে পড়া ধান কাটতে ও নিতে বেশি শ্রম দিতে হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় চলতি মৌসুমে ৬৯ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। গত ২৯ এপ্রিল ঝড়বৃষ্টিতে প্রায় ১৬ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে। তাতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে দুই কোটি ৮৬ লাখ ৩১ হাজার টাকা।
মন্তব্য