-->
শিরোনাম

ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে ফসলের ‘বারোটা’

কামরুল হাসান, সাভার (ঢাকা)
ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে ফসলের ‘বারোটা’

ঢাকার ধামরাইয়ে পাঁচটি ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে আশপাশের দুটি গ্রামের ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা।

কৃষকরা বলছেন, ইট তৈরির মৌসুম শেষ হওয়ায় ভাটার আগুন পানি দিয়ে নিভিয়েছে মালিকরা। এতে চিমনির বিষাক্ত গ্যাস ও কালো ধোঁয়ায় গাংগুটিয়া এবং কুশুরা ইউনিয়নের প্রায় দুই হাজার শতাংশ জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাকা ধান গাছগুলোর বেশিরভাগ পুড়ে গেছে। পাশাপাশি চিটা হয়ে গেছে ধান।

তাদের অভিযোগ, ভাটাগুলোর চিমনির বিষাক্ত গ্যাস ও কালো ধোঁয়ার তাপে কেটে আনা ধানের মধ্যে বেশিরভাগই নষ্ট হয়ে চিটা হয়ে গেছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ধামরাই উপজেলার মধুডাঙ্গা এলাকার মেসার্স মদিনা ব্রিকস, মেসার্স খান ব্রিকস, মেসার্স নূর ব্রিকস, মেসার্স রাহাত ব্রিকস ও মেসার্স মক্কা মদিনা ব্রিকসের পাশের ধানের জমিগুলোর ধান গাছের পাতা পুড়ে গেছে। ধানগুলোর অধিকাংশ চিটা হয়ে গেছে।

মেসার্স মক্কা মদিনা ব্রিকসের পাশে জমি থেকে ধান কেটে ফাঁকা স্থানে ধান মাড়াই করে ঝাড়ছেন কৃষকরা। মলিন মুখে কাজ করছেন তারা। সেখানে পঞ্চাশোর্ধ্ব কৃষক ফজল হকের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘ঈদের দুদিন আগে মক্কা মদিনা ব্রিকসের মালিক ভাটার আগুন নিভিয়ে দেয়। পরদিন সকালে জমিতে এসে দেখি অধিকাংশ ধান গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। পরে সেই ধান কেটে মাড়াই ও ঝাড়ার পর দেখি অধিকাংশই চিটা হয়ে গেছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘শুধু আমার নয়, পাশের হুমায়ুনেরও আড়াই বিঘা জমির ধানও নষ্ট হয়ে গেছে।’এই ভাটার কাছাকাছিই অন্যান্য ভাটাগুলোর অবস্থান। সেখানে কেবল মেসার্স রাহাত ব্রিকস ছাড়া বাকি ইটভাটাগুলোর আগুন নিভিয়ে দিয়েছে মালিক পক্ষ। এ সকল ভাটার কাছাকাছি ৬০ বিঘা জমিতে ব্রি-২৯ জাতের ধান লাগিয়েছেন মো. মুক্তার আলী।

তিনি বলেন, ‘৬০ বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করে বিরাট বিপদে পড়েছি ভাই। সবধান গাছ পুড়ে গেছে। কোনো ধান নাই সব চিটা।’

পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ঢাকার ধামরাইয়ে অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা ৫৮টি। কিন্তু বাস্তবে এর সংখ্যা প্রায় শতাধিক। বিভিন্ন সময় এসকল অবৈধ ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করে আর্থিক জরিমানাসহ ভাটার বিভিন্ন অংশ ভেঙে দিয়ে সেগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিল পরিবেশ অধিদপ্তর। তবে অভিযানের পরই মেরামত করে ইট তৈরির কার্যক্রম নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছেন ভাটা মালিকরা।

গত ২৮ ডিসেম্বর পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযুক্ত এ পাঁচটি ইটভাটাকে মোট ২৪ লাখ টাকা জরিমানা করে। পাশাপাশি আগুন নিভিয়ে ও স্থাপনা ভেঙে ভাটাগুলোর কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। তবে অভিযানের পরই সেগুলো মেরামত করে কার্যক্রম শুরু করে তারা।

ভুক্তভোগী কৃষক চাঁন মিয়া বলেন, ‘তারা (পরিবেশ অধিদপ্তর) তো পুরাপুরি ভেঙে দেয় না। খালি একটু কোনাকানচি ভাঙে। ভাটা মালিকরা পরদিনই তা ঠিকঠাক করে ইট পুড়ানো শুরু করে। পরে তো আর কারো কোনো খোঁজ থাকে না তাদের।’

অভিযোগের বিষয়ে মক্কা মদিনা ব্রিকসের ব্যবস্থাপক মো. ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘আমাদেরটিসহ আশপাশের ভাটাগুলোর ইট পুড়ানো এখন শেষ। এসময় আগুন নেভাতে চুল্লির নিচে পানি দিতে হয়। তা না দিলে ভাটার চিমনি দিয়ে কয়লার আগুনের যে ফুলকি বের হয় সেগুলো বাতাসে যে জমিতে গিয়ে পড়ে সে জমিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

‘আমরা চুল্লি নেভানোর ১৫ দিন আগেই পানি দিয়েছিলাম। অনেকেই সেটি করে না তাই জমির ধানগুলো নষ্ট হয়েছে। তবুও আমরা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জানিয়েছি, যে সকল ভাটা দায়ী হবে তাদের সঙ্গে আমরাও ক্ষতিপূরণ দিতে প্রস্তুত।’

এ ব্যাপারে ইউএনও হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী বলেন, ‘কয়েকটি ইটভাটার চিমনির বিষাক্ত গ্যাস ও কালো ধোঁয়ায় বিভিন্ন এলাকায় ধানের জমি নষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ পেয়েছি। ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রকৃত তথ্য পাওয়ার পর এ ব্যাপারে কৃষকদের সহায়তা এবং অবৈধ ইটভাটার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

মন্তব্য

Beta version