-->
শিরোনাম

২১ বছরেও সংস্কার হয়নি টার্মিনালের

যশোর ব্যুরো
২১ বছরেও সংস্কার হয়নি টার্মিনালের

দুর্ভোগের আরেক নাম যশোর কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল। হালকা বৃষ্টিতে জমে যায় হাঁটু পানি। আর শুষ্ক মৌসুমে ধুলাবালিতে চোখ খোলা দায় হয়ে পড়ে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন টার্মিনাল ব্যবহারকারীরা। অথচ উন্নয়নের নামে বছরে টোল আদায় হয় প্রায় ৬০ লাখ টাকা।

বাসকাউন্টার, মালিক, বাসের শ্রমিক ও যাত্রীদের অভিযোগ, টার্মিনাল চালু হয়েছে ২১ বছর আগে। এরপর আর কখনো সংস্কার করা হয়নি। ফলে এখন টার্মিনালের সড়ক হারিয়েছে চলাচলের উপযোগিতা। প্রতি বর্ষায় এই ভোগান্তি চরমে ওঠে বলে জানান তারা।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, টার্মিনালজুড়ে খানাখন্দ। বৃষ্টি হলে ছোট ছোট গর্তে জমে পানি। চলাচলে ভোগান্তিতে পড়েন সেখানে কর্মরত শ্রমিক ও সাধারণ যাত্রীরা। বেহালে কেন্দ্রীয় এই বাসটার্মিনালে বিদ্যুতের পোলে নেই লাইট। বড় বড় গর্তে পড়ে গাড়ির যন্ত্রাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসব ছাড়াও নেই সুপেয় পানি ও নিরাপত্তার বন্দোবস্ত। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় টার্মিনালে জলাবদ্ধতা হয়। ময়লা আবর্জনায় ভরা এখন টার্মিনালটি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালে আন্তঃজেলা শংকরপুর কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনালের কার্যক্রম চালু হয়। এখান থেকে ১৮টি রুটে ৫শ থেকে ৬শ বাস চলাচল করে। ১৫-২০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন এ টার্মিনাল থেকে। টার্মিনাল চালু হওয়ার পর থেকে যাত্রী এবং শ্রমিকদের বিশ্রামের জায়গা থাকলেও দীর্ঘদিন সংস্কার করা হয়নি।

যশোর জেলা পরিবহণ সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা মিঠু বলেন, ‘এখানে মানসম্মত পরিবেশ নেই। টার্মিনাল উন্নয়ন করার জন্য যশোর পৌরসভায় লোকাল ও দূরপাল্লার গাড়ি থেকে উন্নয়ন ফি বাবদ ৩০ টাকা ও ৫০ টাকা দীর্ঘ ২০ বছর ধরে আদায় করে আসছে। যদিও দেওয়া হয় না কোনো রসিদ বা টোকেন।’

‘বছরে প্রায় ৬০ লাখ টাকা টোল আদায় করে যশোর পৌরসভা। এ পর্যন্ত আনুমানিক আট থেকে দশ কোটি টাকা পৌরসভার কোষাগারে গেছে। অথচ কোনো মেয়রের আমলেই টার্মিনালটি পরিপূর্ণ সংস্কার করা হয়নি’, বলেন সেলিম রেজা মিঠু।

তিনি আরো বলেন, ‘সন্ধ্যার পরে অন্ধকারে দশ জেলার শ্রমিক ও যাত্রীকে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে চলাচল ও অবস্থান করতে হয়। রাতের বেলা পৌরসভার পক্ষ থেকে শ্রমিক ও যানবাহনের কোনো নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়নি। প্রতিদিনই কোনো না কোনো যানবাহনের যন্ত্রাংশ চুরি হয়। এসব দেখার কেউ নেই।’

টার্মিনাল আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘টার্মিনাল হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত আমরা শুধু আশ্বাস পেয়েছি কিন্তু বাস্তবে কোনো কাজ হয়নি। অথচ শহরের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ হাজার যাত্রীর যাতায়াত।

‘বিগত মেয়রের কাছে টার্মিনাল পরিপূর্ণ সংস্কারের দাবিতে রাজপথে মানববন্ধন করা হয়েছিল। ওই সময় তিনি বলেছিলেন টার্মিনালের উন্নয়নের জন্য যা প্রয়োজন সরকারিভাবে মন্ত্রণালয়ে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে বাস্তবে তার কোনো কিছুই হয়নি। বর্তমান মেয়রের কাছেও বারবার বলা হচ্ছে, কিন্তু কোনো ফলাফল নেই’, বলেন তরিকুল ইসলাম।

কেশবপুর কাউন্টারের নজরুল ইসলাম জানান, বাস ওঠানামার সময় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। গর্তে গাড়ি পড়ে ভেঙে যায় যত্রাংশ। দ্রুত টার্মিনালের সংস্কার না হলে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

সার্বিক বিষয়ে পৌরসভার সচিব আজমল হোসেন জানান, দীর্ঘদিন টার্মিনাল সংস্কার হয়নি। তবে দ্রুতই কাজ শুরু হবে। এরই মধ্যে প্রকল্পের আওতায় ১১ কোটি ২ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে, টেন্ডার দিয়ে ঠিকাদারও নির্ধারণ করা হয়েছে। খুব দ্রুত টার্মিনালের চারপাশে বাউন্ডারি দেয়াল নির্মাণ করা হবে। টার্মিনাল ভবন সংস্কার, রাস্তাঘাট, ড্রেনসহ সকল প্রকার উন্নয়ন কাজ করা হবে।

মন্তব্য

Beta version