বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার হুড়কা ইউনিয়নের বগুড়া নদীর ওপর নির্মাণাধীন বগুড়া খেয়াঘাট ব্রিজটির কাজ চার বছরেও শেষ হয়নি। ফলে বাধ্য হয়েই ব্রিজের যে পাশে সংযোগ সড়কের কাজ চলছে সে পাশে বাঁশের মই বেয়ে ঝুঁঁকি নিয়ে ব্রিজ পার হচ্ছে ১০ গ্রামের প্রায় সাত হাজার মানুষ। এ অবস্থায় হুড়কা ইউনিয়ন থেকে রামপাল সদরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ এই ব্রিজটি জনসাধারণের জন্য দ্রুত খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা।
তবে রামপাল উপজেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী দাবি করছেন, করোনা মহামারি ও ব্রিজটির সংযোগ সড়কের জায়গা নিয়ে স্থানীয় দুই ব্যক্তির করা মামলার কারণে দুই দফায় ব্রিজটির নির্মাণকাজের সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এলজিইডির অর্থায়নে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে নির্মাণকাজ শুরু হয় বগুড়া খেয়াঘাট ব্রিজটির। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আইটি অ্যান্ড জেই এই ব্রিজটির নির্মাণকাজ শুরু করে। ৬০ মিটার দৈর্ঘ্যরে ওই ব্রিজটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৯২ লাখ ৫১ হাজার ১৩৩ টাকা।
ইতোমধ্যে ব্রিজটির ৯৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে জনসাধারণের চলাচলের জন্য ব্রিজটি উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা থাকলেও সেটি সম্ভব হয়নি। নতুন করে মেয়াদ বাড়িয়ে আগামী জুন মাসে ব্রিজটি উদ্বোধন করা হবে বলে রামপাল উপজেলা এলজিইডির অফিস সূত্রে জানা গেছে। বর্তমানে ব্রিজটির সংযোগ সড়কের কাজ চলমান।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হুড়কা ইউনিয়নের বেলাই, ভেকটমারী, গাজিখালী, কাঠামারী, নলবুনিয়া, গজগজিয়া, হুড়কা, চাড়াখালী-১, চাড়াখালী-২ ও ছিদামখালী গ্রামের প্রায় ৭ হাজার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র সহজ মাধ্যম এই ব্রিজটি। এটির একপাশের সংযোগ সড়কের কাজ প্রায় সম্পন্ন। কাজ চলছে অপর পাশের সংযোগ সড়ক নিয়ে। যে পাশের সংযোগ সড়কের কাজ চলছে সেই পাশে বাঁশের মই দিয়ে জীবনের ঝুঁঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে স্থানীয়রা।
স্থানীয় অমল দাস বলেন, কয়েক বছর ধরে দেখছি এই ব্রিজটির কাজ চলছে। কাজ কবে যে শেষ হবে তার তো ঠিক-ঠিকানা নেই। রামপাল সদর, মোংলা ও বাগেরহাট যেতে এই নদী পার হয়ে যেতে হয়। এছাড়া আমাদের তো আর কোনো উপায় নেই। তাই বাধ্য হয়ে মই বেয়ে ওই ব্রিজের ওপর যেতে হয়।
সুজন মজুমদার জানান, হুড়কা ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ গরিব। তারা কৃষিকাজ, মৎস্য ও মোংলা ইপিজেডে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। বগুড়া নদী পার হয়ে তাদের শহরে যাতায়াত করতে হয়। এছাড়া যাতায়াতের বিকল্প যে পথটি রয়েছে, সেটি প্রায় ১০ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়। তাই হাজার হাজার মানুষের যাতায়াতের সহজ মাধ্যম এই ব্রিজটির দ্রুত মানুষের চলাচলে উন্মুক্ত করার দাবি জানান তিনি।
হুড়কা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তপন কুমার গোলদার বলেন, ‘২০১৮ সালের শেষের দিকে বগুড়া খেয়াঘাট ব্রিজটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রথম দিকে ব্রিজটির নির্মাণকাজ দ্রুতগতিতে চললেও একটা সময় করোনা মহামারি ও জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত মামলার কারণে ব্রিজটির কাজ থেমে যায়।’
তিনি আরো বলেন, ‘মূল ব্রিজটির নির্মাণকাজ শেষ হয় অনেক আগেই। সমস্যা যেটি হয়েছিল, সেটি হচ্ছে ব্রিজটির এক অংশের সংযোগ সড়ক নিয়ে। সংযোগ সড়কটির কিছু অংশ ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি থাকায় স্থানীয় বাসিন্দা খিরোজ দাস ও প্রতাপ রায় নামে দুই ব্যক্তি মামলা করে। ওই মামলার কারণে ব্রিজটির সংযোগ সড়কের নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়।’
তিনি বলেন, ‘আমিসহ স্থানীয় কয়েকজনের উপস্থিতিতে জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ বাবদ খিরোজ দাসকে দুই লাখ ও প্রতাপ রায়কে এক লাখ ২৫ হাজার দেওয়ার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করা হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত সংযোগ সড়কের কাজ শেষ করে গুরুত্বপূর্ণ এই ব্রিজটি জনগণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।’
রামপাল উপজেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. গোলজার হোসেন বলেন, ‘করোনা মাহামারি ও সীমানা জটিলতায় মামলার কারণে বগুড়া খেয়াঘাট ব্রিজটির কাজ দুই দফা পেছানো হয়েছে। ইতোমধ্যে ব্রিজটির ৯৫ শতাংস কাজ সম্পন্ন হয়েছে, এখন সংযোগ সড়কের কাজ চলছে। আশা করছি, আগামী জুন মাসে ব্রিজটি জনসাধারণেও চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।’
ব্রিজটির উচ্চতা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘বগুড়া ব্রিজটি বগুড়া নদীর ওপর নির্মিত। এই নদী দিয়ে ছোট-বড় নানা ধরনের নৌযান চলাচল করে। এ বিষয়টি মাথায় রেখে ব্রিজটির উচ্চতা বেশি রাখা হয়েছে।’
মন্তব্য