-->
শিরোনাম

ভেজা ধানের দাম নেই, লোকসানের শঙ্কা

রিপন দাস, বগুড়া
ভেজা ধানের দাম নেই, লোকসানের শঙ্কা

দফায় দফায় বৃষ্টিতে কৃষিপ্রধান বগুড়ার বেশিরভাগ জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। অন্যদিকে জোঁকের প্রকোপ বাড়ায় ও শ্রমিক সংকটে ধান কাটতে পারছেন না কৃষকেরা। এমনকি বৈরী আবহাওয়ায় মাড়াইয়েও স্বস্তি নেই তাদের। ভেজা ধানে ট্যাগ হওয়ায় এর গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে। জাতভেদে বাজারে ধানের দামও কমেছে অনেক। সব মিলিয়ে এবার নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে বোরো আবাদে লোকসানের শঙ্কা করতে হচ্ছে চাষিদের।

কৃষকরা জানান, কয়েক দফা বৃষ্টি, ঝড় আর রোগ-বালাইসহ নানা কারণে জেলায় এবার বোরো ধানের ফলন কমেছে ১১ শতাংশেরও বেশি। ঘন ঘন বৃষ্টি হওয়ায় সঠিক সময়ে ধান কাটতে পারছেন না তারা। শ্রমিক সংকটসহ সব মিলিয়ে প্রতি বিঘায় গড়ে ছয় হাজার টাকা খরচ বেড়েছে।

তবে কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, বগুড়া অঞ্চলে ধানের কিছুটা ক্ষতি হলেও জাতীয় গড় ফলনের চেয়ে এখনো ভালো অবস্থায় রয়েছে। পুরো কাটা মাড়াই শেষ হলে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের প্রণোদনাসহ নানা ধরনের সহযোগিতা করবে সরকার।

বগুড়ার বাজারে এবার বিভিন্ন জাতভেদে বোরো ধান বিক্রি হলেও ভেজা ধান কিনছেন না ব্যবসায়ীরা। আর গত বছরের চেয়ে শুকনো ধানের দামও কমেছে।

পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার আবহাওয়া ভালো না থাকায় ধান শুকাতে পারছেন না চাষিরা। এতে ধানের মান অনেকটা নষ্ট হয়েছে। এসব ধান সংরক্ষণ করা যাবে না। আর যেসব ধানে ট্যাগ হয়েছে সেটা বাজারে কেউ দাম করছেন না। পরিবেশ ভালো হলে ধানের দাম কিছুটা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন তারা।

মানভেদে কাটারিভোগ প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ১১শ’ থেকে ১৩শ’ টাকা দরে। আর মোটা ধান বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকার কমে। প্রতিকূল এ আবহাওয়ার কারণে নষ্ট হওয়া ধানের বেশির ভাগই পড়ে আছে জমিতে। মান খারাপ হওয়ায় বিক্রি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন চাষিরা।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলায় এবার ১৪ লাখ ৮ হাজার ২০০ বিঘা জমি বোরো আবাদ করা হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে দুই কোটি ২২ লাখ ১০ হাজার মণ।

জানা গেছে, ধুনট, শেরপুর, নন্দীগ্রাম, কাহালু, শাহজাহানপুর, দুপচাঁচিয়া, আদমদীঘি ও শিবগঞ্জ উপজেলার অনেক এলাকাতে গত বছরের তুলনায় অর্ধেক ধান পাওয়া গেছে। আর যেসব জমি পানিতে তলিয়ে গেছে সেগুলোর বেশিরভাগ জমির ধান পচে গেছে।

কাহালু উপজেলার ইসবপুর গ্রামের কৃষক মো. জালাল উদ্দিন। এবার আট বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছেন তিনি। পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চার বিঘা জমির ধান কাটতে পারেননি এই কৃষক।

তিনি বলেন, ‘যে জমি পানিতে তলায়নি সেগুলোর ফলন ভালো হয়েছে। তবে যেটুকু ডুবেছে সেখানকার পুরোটা নষ্ট হয়েছে। শ্রমিক সংকটে সঠিক সময়ে ধান কাটতে না পারায় খরচ বেড়েছে অনেক।’

একই উপজেলার মালঞ্চা গ্রামের বাবুল মিয়া বলেন, ‘ট্যাগ জগানোর কারণে তিন বিঘা জমির বেশিরভাগ ধান নষ্ট হয়েছে। বাজারে এসব ধান বিক্রি হচ্ছে হাঁস-মুরগি ও মাছের খাবার হিসেবে। চাষ করতে যে টাকা খরচ হয়েছে তার অর্ধেকটাও তুলতে পারেনি।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মো. এনামুল হক বলেন, ‘বগুড়ায় স্থানীয়ভাবে গড় ফলন নির্ধারণ করা হয় বিঘায় ২১ মণ। কিন্তু এখন ফলন পাওয়া যাচ্ছে ১৯ মণের কিছু বেশি। অতিরিক্ত বৃষ্টি ও ঝড়ের কারণে ফসলের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। আর এসব ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিভিন্ন উপজেলায় চাষিদের তালিকা করা হচ্ছে। প্রণোদনার আওতায় সরকার তাদের সহযোগিতা করবে। তবে বগুড়ার এ ফলন জাতীয় গড় ফলনের চেয়েও বেশি রয়েছে।’

মন্তব্য

Beta version