-->
শিরোনাম

সংস্কারের অভাবে আশ্রয়ণের ঘর ছাড়ছে মানুষ

মো. কামরুজ্জামান, বাগেরহাট
সংস্কারের অভাবে আশ্রয়ণের ঘর ছাড়ছে মানুষ
সংস্কারের অভাবে কালীগঞ্জ আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে

বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার কালীগঞ্জ আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রায় সব ঘর ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে রয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে ঘরগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ভেঙে পড়েছে সেখানকার স্যানিটেশন ব্যবস্থাও।

বসবাসের অনুপযোগী হওয়ায় ইতোমধ্যে প্রায় অর্ধেক বাসিন্দা আশ্রয়ণের ঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে সংস্কার না করা গেলে এখানকার বসবাসরতরাও চলে যাবেন বলে জানিয়েছেন তারা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বাঁশতলী ইউনিয়নের কালীগঞ্জ বাজারের পশ্চিম পাশে সরকারি খাসজমিতে ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের জন্য ২০০২ সালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণ করা হয়। এ প্রকল্পে ১০ কক্ষবিশিষ্ট আটটি ঘর নির্মাণ করে ৮০টি ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছিল। নির্মাণের পর থেকে এ পর্যন্ত ঘরগুলোর কোনো সংস্কার করা হয়নি।

আশ্রয়ণের বাসিন্দারা জানান, ঘরের কক্ষ বুঝে দেওয়ার সময় মেঝেতে কোনো মাটি ছিল না। ছিল না কোনো রান্নাঘর। কক্ষ পাওয়ার পর তারা নিজেদের উদ্যোগে মেঝের মাটি ভরাটের পাশাপাশি রান্নাঘর নির্মাণ করেন। আশ্রয়ণের আটটি ব্যারাকের সব কয়টি এখন বসবাসের জন্য একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় বসবাস করতে না পেরে ৩৯টি পরিবার অন্যত্র চলে গেছে। এদের মধ্যে ৭-৮টি পরিবার কুমারখালী নদীর চরে সরকারি খাসজমিতে বাস করছে।

জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের শৌচাগারগুলো

সরেজমিনে আশ্রয়ণ প্রকল্পটি ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ ব্যারাকের টিনের চালা ফুটা হয়ে গেছে। ওপরের দিকে তাকালে আকাশ দেখা যায়। মরিচায় খয়ে টিনের বেড়া ভেঙে গেছে। দরজা-জানালা জোড়াতালি দিয়ে কোনোমতে রাত কাটাচ্ছেন তারা।

বৃষ্টি হলেই পানিতে ব্যারাকের ভেতর সয়লাব হয়ে যায়। বৃষ্টিতে তাদের নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়। পানি ঠেকাতে প্রায় সব ঘরের বাসিন্দাদের টিনের চালে পলিথিন দিয়ে রাখতে দেখা গেছে। ভারী বৃষ্টি হলে পলিথিনেও ঠেকানো যায় না। বেশির ভাগ রান্নাঘর স্যাঁতসেঁতে। বৃষ্টি হলে রান্নাবান্না বন্ধ রাখতে হয়। টয়লেটের টিনের বেড়াগুলোও ভেঙে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে।

আশ্রয়ণের বাসিন্দারা জানান, যাওয়ার কোনো জায়গা না থাকায় শত সমস্যা মাথায় নিয়েও আশ্রয়ণে পড়ে রয়েছেন বর্তমানের বাসিন্দারা। ব্যারাকের অবকাঠামাগত অবস্থা নড়বড়ে হওয়ায় আকাশে মেঘ দেখলেই তারা আতঙ্কে থাকেন। ঘূর্ণিঝড়ের সংকেত পেলে তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। সামান্য বাতাস হলেই বেশির ভাগ ঘরের টিন উড়ে যেতে পারে। কয়েকবার আশ্বাস দেওয়া হলেও কোনো সংস্কার কাজ হয়নি। এতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।

এ বিষয়ে স্থানীয় বাঁশতলী ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল বলেন, ‘গত মাসিক সমন্বয় সভায় আশ্রয়ণের দুরবস্থার কথা উপজেলা পরিষদের তুলে ধরেছি। আগামী বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে ব্যারাকের ঘরগুলো সংস্কারের দাবি করেছি।’

উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমান বলেন, ‘ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ ক্ষতিগ্রস্ত সব আবাসন প্রকল্পের ঘর সংস্কারের জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর চিঠি পাঠিয়েছি। সংস্কারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি প্রতিনিধি দল ইতোমধ্যে পেড়িখালীর সিকিরডাঙ্গা, গৌরম্ভাসহ তিনটি আবাসন প্রকল্প পরিদর্শন করেছে। সরকারিভাবে বরাদ্দ পাওয়া গেলে সব আবাসন প্রকল্পের ঘর সংস্কার করা হবে।’

 

মন্তব্য

Beta version