-->
শিরোনাম

চারা গজিয়ে নষ্ট হচ্ছে পাকা ধান

শাহারিয়ার রহমান রকি, ঝিনাইদহ
চারা গজিয়ে নষ্ট হচ্ছে পাকা ধান
পানিতে ভিজে যাওয়া পাকা ধান সংগ্রহ করছেন কৃষক

ঝিনাইদহে বৈরি আবহাওয়ায় নষ্ট হচ্ছে ক্ষেতের পাকা ধান। পানিতে আদ্রতা বেড়ে যাওয়ায় কেটে রাখা অধিকাংশ ধানে গজিয়েছে চারা, ঝরে যাচ্ছে ধান। হেলে পড়েছে অধিকাংশ ধান গাছ। এতে ক্ষতির পাশাপাশি চালের গুণাগুণে বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, জেলা সদরের বিষয়খালী, লাউদিয়া, শৈলকুপার যুগনী, বাঘিনীসহ বিভিন্ন এলাকার মাঠে মাঠে কৃষকরা পাকা ধান কেটে রেখেছিলেন শুকিয়ে বাড়িতে নেওয়ার জন্য। কিন্তু হঠাৎ করে ঘূর্ণিঝড় অশনি বাধ সাধে সেখানে।

অনেক এলাকায় ক্ষেতের কেটে রাখা ধান পানিতে তলিয়ে যায়, কিছু এলাকায় ধান ভিজে গেলেও তা পানিতে তলিয়ে যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে শুকিয়ে যাওয়া ধানে পানি লেগে যাওয়ায় তাতে বেড়ে যায় আদ্রতা, যার ফলে সেই ধান থেকে চারা গজিয়ে তা ক্রমেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

এদিকে অনেক এলাকায় বৃষ্টির সঙ্গে ঝড়ো বাতাসের কারণে ক্ষেতে হেলে পড়েছে ধান গাছ। সেই গাছ থেকে ধীরে ধীরে ঝরে যাচ্ছে পাকা ধান। তবুও ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকরা ধান ঘরে তুলতে প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন। চারা গজিয়ে যাওয়া ধান নতুন করে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষায় অনেকে স্প্রে করছেন নানা ধরনের কীটনাশক। তবে কি পরিমাণ জমির ধানে ক্ষতি হয়েছে তা কৃষক ঘরে তোলার পর জানা যাবে বলে দাবি করেছে কৃষি বিভাগ।

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চলতি বছর জেলায় বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ৮৯ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে। এরই মধ্যে আবাদকৃত ৭২ ভাগ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। আর কৃষকরা ঘরে তুলতে পেরেছে ৬৫ ভাগ জমির ফসল।

সদর উপজেলার লাউদিয়া এলাকার কৃষক খোরশেদ আলম জানান, বোরো ধানে ফলন ভালো হয়েছিল। ভেবেছিলাম অনেক লাভও হবে। সেই আশায় ধানের সঙ্গে বিচালি পেতে কেটে রাখা ধান ক্ষেতেই শুকাতে দিয়েছিলাম। কিন্তু বৃষ্টিতে পানি পেয়ে ৪০ ভাগ ধানে চারা গজিয়ে গেছে। শেষ কতটুকু ধান ঘরে তুলতে পারব বুঝতে পারছি না। তবুও নতুন করে যেন ধানের ক্ষতি না হয় সেজন্য কীটনাশক স্প্রে করছি।

বিষয়খালী এলাকার কৃষক শাফিদুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টির পানির কারণে অনেক কৃষকই ধান ঘরে তুলতে পারেনি। ধানে চারা তৈরি হয়েছে। কৃষকরা দিশেহারা।

আরেক কৃষক নয়ন জানান, এগারো কাঠা জমির কেটে রাখা ধান পানিতে প্রায় পচে গেছে। কামলার (শ্রমিক) দাম বেশি। ১২ শ টাকার নিচে কোনো কামলা পাওয়া যাচ্ছে না। সবাই মিলে ধান বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি। যদি কিছু রক্ষা করা যায়।

তেতুলতলা এলাকার কৃষক সাজেদুল ইসলাম জানান, পানিতে ধানের রং নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু ধান পচেও গেছে। এই ধান বাজারে ঠিক মতো বিক্রি করতে পারছি না। ধান বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে ৬শ থেকে ৭শ টাকা মণ। অথচ বৃষ্টির আগে ধানের দাম ছিল এক হাজার থেকে ১৩শ টাকা মণ। বর্তমান দামে ধান বিক্রি করে আমাদের খরচও উঠবে না। এমন অবস্থায় সরকার যদি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা তৈরি করে কিছু সহযোগিতা দেয় তাহলে আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারব।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল করিম জানান, ধান শুকনা থাকার কারণে হঠাৎ পানি লাগায় আদ্রতা বেড়ে গিয়ে চারা গজিয়ে যাচ্ছে। কৃষকরা যদি দ্রুত ধান কেটে ঘরে তুলতে পারে এবং পুনরায় বৃষ্টি না হয় তাহলে ক্ষতির পরিমাণ কম হবে। তবে কৃষকদেরকে বিচালি বা খড়ের চিন্তা না করে ক্ষেতের পাকা ধান দ্রুত হারভেস্টর ব্যবহার করে কাটতে বলা হচ্ছে।

তিনি আরো জানান, শুকনা ধানে আদ্রতা বেড়ে যাওয়ার কারণে চারা গজিয়েছে। এতে পরবর্তীতে চালের গুণগতমানে কিছুটা বিরূপ প্রভাব পড়বে।

মন্তব্য

Beta version