-->
শিরোনাম

দম ফেলার সময় নেই নৌকার কারিগরদের

শরিফুল ইসলাম, নীলফামারী
দম ফেলার সময় নেই নৌকার কারিগরদের

ঋতুচক্রের হিসেবে বর্ষা আসে জুনের একেবারে শুরুতে। অনেক সময় মে মাসেও চলে আসে দেশের সবচেয়ে বড় এই ঋতু। তবে এবার বর্ষার আগমুহূর্তেই শুরু হয়েছে হাল্কা-মাঝারি-ভারী বৃষ্টি। সঙ্গে যোগ হচ্ছে উজানের ঢল। আর এতেই প্লাবিত হচ্ছে নীলফামারীর নিম্নাঞ্চলসহ চর এলাকাগুলো।

বর্ষার প্রবল বর্ষণে প্রতি বছরই নীলফামারীর তিস্তা নদীবেষ্টিত নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এ কারণে বর্ষার আগমনের আগেই তিস্তা নদীতীরের নৌকার মাঝি, জেলে ও চরের বাসিন্দারা শুরু করেছেন আগাম প্রস্তুতি। এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবে তিস্তাতীরবর্তী এলাকাগুলোয় চলছে নৌকা তৈরির ধুম। চলছে পুরানো নৌকা মেরামতের কাজ।

তিস্তাতীরবর্তী নৌকার মাঝি, জেলে ও কৃষকরা জানান, শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় নৌকার ব্যবহার কমে যায়। তবে বর্ষায় যৌবন ফিরে পায় নদীটি। তখন নদীতীরবর্তীদের প্রধান ভরসা হয়ে ওঠে নৌকা। তাই এই ঋতু এলেই এখানে বেড়ে যায় নৌকার কদর। এ সময়টায় নৌকার কারিগরদের ব্যস্ততা বেড়ে যায় বহুগুণে।

নৌকা দিয়ে পুরো বর্ষাজুড়ে নদী পারাপার, সবজি ও মালামাল পরিবহণ করতে হয়। এ ছাড়া স্থানীয় জেলেরা নৌকা নিয়ে নদীর গভীরে মাছ ধরতে যায়।

সরেজমিনে তিস্তাতীরবর্তী চর কিসামত, ডালিয়া ব্যারাজ, চর খড়িবাড়ি, বাইশপুকুর, ভেন্ডাবাড়ি চরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে- সবাই নৌকা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ পুরানো নৌকা আরো ভালো করে মেরামত করছেন।

চর কিসামত ঘাটের মাঝি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘শুকনো মৌসুমে তিস্তায় পানি কম থাকে। এ সময় পুরানো নৌকাগুলো মেরামত করে নিতে হয়। ইতোমধ্যে আমার তিনটি নৌকা মেরামত করেছি। তিন টন ধারণক্ষমতার নৌকা মেরামতে ১০-১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। একই নৌকা নতুন করে বানাতে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়।

‘১০ টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন নৌকা তৈরিতে লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়। এ সময় নৌকার কারিগরদের দামও অনেক বেড়ে যায়। হাত হিসেবে নৌকা মেরামতের মজুরি নির্ধারণ হয়। প্রতি হাত নৌকা মেরামতে ১০০ টাকা দিতে হয়। এভাবে প্রতিটি বড় নৌকা মেরামতে ২৫-৩০ হাজার টাকা কারিগরদের মজুরি দিতে হয়। এমনকি আগামী মৌসুমের জন্য কারিগরদের অগ্রিম টাকাও দেওয়া হয়।’

নৌকার কারিগর মাহমুদ আলী। ৪০ বছর ধরে এ পেশায় আছেন তিনি। প্রতি মৌসুমে ছোট-বড় প্রকারভেদে ২০টি নৌকা তৈরি করে থাকেন। পুরাতন নৌকাও মেরামত করেন।

তিনি বলেন, ‘নৌকা তৈরি ও মেরামত আমার পূর্বপুরুষের পেশা। এখন মেরামতের শেষ সময়। ছোট নৌকা তৈরিতে ২-৪ এবং বড় নৌকা তৈরিতে ২৫-৩০ দিন সময় লাগে। নতুন নৌকা তৈরিতে আকাশমণি, মেহগনি, কড়াই, ছামালিশ গাছ বেশি ব্যবহার হয়। ছোট নৌকা তৈরিতে ১০-১২ হাজার; বড় নৌকা তৈরিতে ২৫-৩০ হাজার টাকা এবং পুরানো নৌকা মেরামতে আকার অনুযায়ী ৫-১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত মজুরি পাই।’

ডিমলা উপজেলার খগা খড়িবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম লিথন বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে চরাঞ্চলের বাসিন্দাদের একমাত্র ভরসা নৌকা। তাই এ সময়ে নৌকা তৈরি ও মেরামতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। চরের মানুষ শুকনো মৌসুমে তিস্তায় মাছ ধরে এবং কৃষি শ্রমিক হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করেন।’

মন্তব্য

Beta version