-->
শিরোনাম

সুরমার খননই পারে সিলেটের বন্যা ঠেকাতে

কামরুল ইসলাম মাহি, সিলেট
সুরমার খননই পারে সিলেটের বন্যা ঠেকাতে

দেশের দীর্ঘতম ও সিলেট শহরের গুরুত্বপূর্ণ সুরমা নদী দখল ও বর্জ্যের চাপে বিপর্যস্ত। সেই সঙ্গে নগরীর অধিকাংশ বস্তির শৌচাগারের পাইপ সরাসরি নামানো হয়েছে নদীতে। এতে ক্রমশ ভরাট হচ্ছে সুরমা।

গত ১১ মে থেকে ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সিলেটের বিভিন্ন উপজেলার মানুষ পানিবন্দি হবার পর ১৬ মে থেকে সুরমার পানি উপচে নগরেও ঢুকতে শুরু করেছে। এতে সৃষ্টি হয়ছে চরম জলাবদ্ধতা। দ্রুতই তা বন্যার আকার ধারণ করে।

বন্যায় রাস্তাঘাট, বাসাবাড়ি, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, এমনকি জরুরি সেবা দানকারী বিদ্যুৎ, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানও প্লাবিত হয়েছে।

এ অবস্থায় দ্রুত সুরমা নদীর খনন শুরু করে নাব্য ফেরাতে পারলেই সিলেটের বন্যার এই পরিস্থিতি ঠেকানো সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ, জনপ্রনিধি, রাজনীতিবিদ ও সচেতন মহল।

সিলেটে বন্যার পরিস্থিতি নিয়ে দৈনিক ভোরের আকাশের সঙ্গে কথা হয় নগর বিশেষজ্ঞ, জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ ও সচেতন মহলের।

তারা বলছেন, প্রায় ২৪৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সুরমা দেশের দীর্ঘতম নদী। নদীটি শহরের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে। দখল-দূষণ আর সুরমার দুই পাড়ে অবৈধ স্থাপনা গড়েছে শতাধিক দখলদার। এতে ক্রমশ ভরাট হচ্ছে সুরমা।

সুরমা নদী খনন করলে শহরের ড্রেনও প্রয়োজন নেই জানিয়ে লেখক ও সাংবাদিক উজ্জ্বল মেহেদী বলেন, ‘সুরমা নদী সিলেট নগরের পাশ দিয়ে যে অংশগুলো বয়ে গেছে সেখানে ৮-১০টি ময়লা আবর্জনার স্তর এসে পড়েছে। এতে নদী ভরাট হয়ে আসছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘সর্বশেষ ১৯৭৩ সালে সামান্য খননের পর এই নদী আর খনন করা হয়নি। অন্যদিকে নগরের শেখঘাট এলাকায় অবস্থিত কাজিরবাজার ব্রিজ নির্মাণে নদীতে নাব্য সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ এই ব্রিজ এলাকা সুরমার সবচেয়ে গহীন ছিল। এখন তা ভরাট হয়ে গেছে।’

সুরমা নদী সিলেটের জন্য আশির্বাদ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একমাত্র সুরমা নদীকে যদি আগের রূপে ফেরানো যায় তাহলে আমাদের শহরে আর এই সমস্যা থাকবে না।’

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক জহির বিন আলম বলেন, ‘সুরমা নদী খনন হয়নি অনেক দিন থেকে। উজানের ঢল আর কুশিয়ারার পানি সুরমায় এসেছে। জলাবদ্ধতার কারণে এ পানি সুরমা ধরে রাখতে পারেনি। যার কারণে নদীর পানি শহরে প্রবেশ করেছে। এখন আবশ্যক হয়ে পড়েছে দ্রুত নদী খনন করার। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।’

সুরমা নদীর নাব্যতার পাশাপাশি সিলেট সিটি করপোরেশনকেও দায়ী করছেন তরুণ রাজনীতিবিদ ও সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আরমান আহমেদ শিপলু।

তিনি মনে করেন, ‘সুরমা নদীর নাব্য সংকট একটা দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা। নাব্য ফেরাতে সরকার কাজ করছে। তবে এখানে সিলেট সিটি করপোরেশনের দায় এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। দীর্ঘদিন ধরে চলমান উন্নয়ন কাজে ধীরগতি, এক সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করে কাজ সম্পন্ন না করেই অন্য সড়কে কাজ শুরু করা, ড্রেনের সংস্কার কাজ মানসম্মত না হওয়া এই পরিস্থিতির অন্যতম কারণ।’

প্রায় ১০০ বছরের কাছাকাছি সময় সুরমা নদী খনন করা হয় না; এজন্য নগরীর এই করুণ অবস্থা বলে মনে করছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।

তিনি বলেন, ‘আমাদের শহর নদী ঘেষা। শহরের মাঝখান দিয়ে বয়ে চলা সুরমা নদী খননের কোনো উদ্যোগ নেই। বারবার আমরা বলে আসছি এ কথা। আমি মনে করি, সুরমা নদীর নাব্য ফেরাতে পারলেই আমাদের আর এই সমস্যা থাকবে না।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘সিলেটের প্রধান দুই নদী সুরমা ও কুশিয়ারার তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। এই দুই নদী খনন করতে হবে।’

বুধবার বন্যাদূর্গত সিলেটে পরিদর্শনকালে গণমাধ্যম কর্মীদের মন্ত্রী বলেছিলেন, ‘সিলেটে এই মৌসুমে সব সময়ই ঢল নামে। আমরা ছেলেবেলাতেও এমনটি দেখেছি। কিন্তু পানি আটকে থাকত না। চলে যেত। কারণ আমাদের আগে অনেক পুকুর ও দিঘি ছিল।’

‘প্রত্যেক বাড়ির সামনে পুকুর ছিল। আর সিলেটকে বলা হতো দিঘির শহর। কিন্তু এখন আমরা নগরীর ভেতরের সব পুকুর-দিঘি ভরাট করে বড় বড় বিল্ডিং করেছি। হাওরগুলো ভরাট করে ফেলেছি। এ ছাড়া প্রধান নদীগুলোর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। খালি মাঠগুলো ভরাট হয়ে গেছে। এ কারণে পানি নামতে পারছে না।’

মন্তব্য

Beta version