-->
শিরোনাম

বরিশাল বাস টার্মিনালে জায়গা সংকটে ভোগান্তি

জহির রায়হান, বরিশাল
বরিশাল বাস টার্মিনালে জায়গা সংকটে ভোগান্তি
বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নথুল্লাবাদ

বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নথুল্লাবাদে এখন আর বাস রাখার সংকুলান হয় না। মালিক ও চালকরা রাস্তাকেই বানিয়ে ফেলেছেন বাসস্ট্যান্ড। ফলে যানজটে মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে। এই জটিলতা নিরসনে নতুন জায়গা নির্ধারণ করে বাস নিরাপদে রাখার দাবি করেছেন শ্রমিকরা।

মালিক সমিতির দাবি, বাস টার্মিনাল নতুন জায়গায় স্থানান্তর হলে দুর্ভোগ কমবে। সরেজমিনে দেখা যায়, টার্মিনালে জায়গা না পেয়ে বিভিন্ন রুটের অনেক বাস টার্মিনাল সংলগ্ন বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় ও বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের সামনের সড়কে রাখা হচ্ছে । এতে এসব সড়ক সংকীর্ণ হওয়ায় হালকা যানবাহন চলাচলে বিঘ্নিত হচ্ছে।

আবার দেখা দেখা গেছে, বাসগুলো সড়কের ওপর থামিয়ে যাত্রীদের ওঠানামা করছে। এতে বাসে ওঠানামার সময় অন্যান্য যানবাহনে চাপে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।

পাশাপাশি টার্মিনালে বাস রাখার জায়গা না থাকায় সড়কের খোলা জায়গায় বাস রাখার কারণে বাসের ব্যাটারি, লাইটসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ চুরি আতঙ্কে থাকে মালিক ও শ্রমিকরা।

বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৬ সালে নগরীর নথুল্লাবাদ এলাকায় ঢাকা-বরিশাল সড়কের পাশে এই বাস টার্মিনালটি স্থাপন করা হয়। তখন ঢাকা-বরিশাল সহ অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলাচল করত। বাসের সংখ্যাও ছিল কম। বাস টার্মিনালের নির্ধারিত জায়গায় বাস রাখার পর্যাপ্ত জায়গা ছিল।

দিনে দিনে যাত্রীদের চাপ বাড়ায় বাড়ছে বাসের সংখ্যাও। বিশেষ করে গত পাঁচ বছর আগেও অভ্যন্তরীণ রুটে ৯০টি বাস ছিল। বর্তমানে সেই বাসের সংখ্যা বেড়ে ১৯০টি এবং দূরপাল্লার রুট মিলিয়ে এই টার্মিনালে বাস আছে তিন শতাধিক। এখন থেকে দেশের বিভিন্ন রুটে নিয়মিত বাস চলাচল করছে। তবে এত বাস রাখার জন্য যথেষ্ট জায়গা নেই এই কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে।

বরিশাল সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, সিটি করপোরেশনের প্ল্যান অনুযায়ী বর্তমানে যেখানে নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল রয়েছে সেখানে নগর ভবন এবং গড়িয়ারপাড়ে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নির্মাণের কথা রয়েছে। গড়িয়ারপাড় এলাকায় জমি অধিগ্রহণ করে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে।

নজরুল ইসলাম আকন্দ নামে অভ্যন্তরীণ ধামুরা রুটের যাত্রী দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, নথুল্লাবাদে এসে বাস সড়কের ওপর থামিয়ে দিলে কতটা টেনশনে রাস্তা পার হতে হয় তা বলে বুঝাতে পারব না। দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়েই থাকি। টার্মিনালের ভেতরে বাস থামালে নিশ্চিন্তে নেমে শহরের ভিতরে অন্যান্য যানবাহনে ওঠা যায়।

সাকুরা পরিবহণের চালক কালাম দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, ঢাকা থেকে সব রাস্তায় ভালো করে চালিয়ে আসলেও নথুল্লাবাদে এসে গাড়ি পার্কিংয়ে নানা সমস্যা হয়। টার্মিনালে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়ে সড়কের ওপর গাড়ি থামিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে দেই। বুঝি নামার সময় অন্যান্য যানবাহনের ধাক্কা লেহে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তবুও আমাদের কিছু করার নেই। সবাই এ রকম সড়কের ওপর বাস থামিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে দিচ্ছে।

মায়ের দোয়া পরিবহণের হেলপার সজিব জানান, গত সপ্তাহে বরিশাল শিক্ষাবোর্ডের সামনের রাস্তায় থামানো গাড়ি থেকে রাতে ব্যাটারি চোরে নিয়ে গেছে। এখন থেকে রাতে বাসেই ঘুমাই।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস বলেন, ‘বর্তমানে যেখানে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল রয়েছে সেখানে বাস রাখার জন্য জায়গার স্বল্পতা রয়েছে। তাই বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র ট্রাক টার্মিনালে অস্থায়ীভাবে বাস টার্মিনাল স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যা আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে বাস টার্মিনালটি শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত ট্রাক টার্মিনালে স্থানান্তর করা হবে।’

বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, ‘গত পাঁচ বছর ধরে দিন দিন বাসের সংখ্যা বাড়ছে। যার চাপ পড়ছে নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে। এতে বাস রাখার জন্য যে জায়গা দরকার তা বাস টার্মিনালে পর্যাপ্ত নেই। তার ওপরে পদ্মা সেতু চালু হলে নতুন অনেক কোম্পানির বাস এই টার্মিনালে থাকবে।

তিনি আরো বলেন, ‘এমন অবস্থায় মেয়র সেরনিয়াবাত জনভোগান্তির কথা বিবেচনা করে কাশিপুরে শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত ট্রাক টার্মিনালে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’

মন্তব্য

Beta version