-->
শিরোনাম
গরিবের নাশতায় তেল-আটার মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব

পরোটা হয়েছে ছোট, সিঙ্গাড়ার দাম দ্বিগুণ

পুলক পুরকায়স্থ, মৌলভীবাজার
পরোটা হয়েছে ছোট, সিঙ্গাড়ার দাম দ্বিগুণ

মৌলভীবাজারে হঠাৎ করে বেড়ে গেছে নিত্য খাদ্য পরোটা, সবজি, সিঙ্গাড়া-সমুচার দাম। এতে বেকায়দায় শ্রমজীবী ও দিনমজুররা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সব নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়েছে হোটেলের নিত্যখাদ্যের দাম।

সড়কের মোড় আর অলিগলির টং দোকান, ছোট ও মধ্যম মানের হোটেলগুলোয় বেড়েছে নিত্য খাদ্যের দাম, কেউবা পরোটার আকার একটু ছোট করেছেন। মূল্যবৃদ্ধি করলে কাস্টমার হারানোর আশঙ্কায় থাকা ছোট হোটেলগুলো নিয়েছে ভিন্ন পদ্ধতি।

প্রায় সব ধরনের নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে ছোট ছোট টং দোকানগুলোয় গ্রাহককে দেওয়া খাবারের পরিমাণ কমিয়ে চলছে টিকে থাকার চেষ্টা। এভাবেই এখন যে যার মতো করে চালাচ্ছেন অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। তবে কিছুটা বিলাসী হোটেল রেস্তোরাগুলো এরই মধ্যে বাড়িয়ে দিয়েছে খাদ্যদ্রব্যের দাম।

শনিবার (২৮ মে) সকালে পৌরশহর ও শহরসংলগ্ন কয়েকটি হাটবাজারে বিভিন্ন হোটেল ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কিছুদিন আগে পরোটা ছিল ৬ টাকা এখন ১০ টাকা, ডাল-সবজি ছিল ১০ টাকা এখন ১৫ থেকে ২০ টাকা। সিঙ্গাড়া-সমুচা বেড়ে হয়েছে ১০ থেকে ১২ টাকা ও ভাজা ডিম ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

জেলা হোটেল সংশ্লিষ্ট কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, তেল ছাড়াও আটা, ময়দা, চিনি, ডিমসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকায় হোটেল ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। রোজার আগে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে একবার খাবারের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। এখন প্রতিদিনই বিভিন্ন পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে।

খাবারের দাম বাড়ানো ছাড়া ব্যবসা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। জানা গেছে, নিম্নআয়ের মানুষেরা প্রায়ই দুটি পরোটা আর ১০ টাকার সবজি দিয়েই সেরে নিতেন সকালের নাশতা, যেখানে ২০ টাকায় হয় যেত, এখন সেখানে প্রায় ৩৫ টাকার প্রয়োজন হয়। নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির জেরে সেই পরোটা সবজি ও হয়ে উঠছে দুষ্প্রাপ্য। এখন তেলসহ নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে আগের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও ছোট হয়ে গেছে পরোটার আকার।

রিকশাচালক জমির আলি বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে ছোট একটি হোটেলে নাশতা করে রিকশা নিয়ে বের হই। এখন নাশতা করতে বেশি টাকা লাগে। আমাদের আয় বাড়ছে না, কিন্তু সবকিছুর দাম হু-হু করে বাড়ছে। আমরা বাঁচব কী করে।’

যে আকারের পরোটা এখন তৈরি হচ্ছে তাতে বর্তমানের দুটি মেলালেও হবে না আগের একটির সমান জানিয়ে ভ্যানচালক রুকন মিয়া বলেন, ‘পরোটার সাইজ ছোট হওয়াই শুধু নয়, কমেছে ১০ টাকার ডাল কিংবা সবজির পরিমাণও। রোজার আগেও ১০ টাকায় যে টুকু সবজি মিলত; এখন কমে হয়ে গেছে অর্ধেক।’

শহরের চাঁদনীঘাট এলাকায় অনেকটা রসিকতার সুরে নাশতা করতে আসা আব্দুল হক বলেন, ‘দাম না বাড়লেও যে সাইজের পরোটা এখন তৈরি হচ্ছে, তা কয়েকদিন আগেও দুটি পরোটায় নাশতা হতো, এখন সেখানে তিনটি লাগছে।’

শহরের সৈয়ারপুর এলাকার দিনমজুর মইন আলি বলেন, ‘আগে ২২-২৫ টাকায় সকালের নাশতা করতাম, একই নাশতা এখন ৩৫ টাকায় মন মতো হয় না।’ কোর্টরোডের হোটেল মালিক মনির মিয়া বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বেড়েছে, তাতে পরোটা ছোট আর সবজি কম দিয়েও তো টিকতে পারছি না। আমার হোটেলে গরিব দিনমজুর মানুষ বেশি আসেন। পরোটা-সবজি দাম বাড়িয়েছি এখনো সিঙ্গাড়া-সমুচার দাম বাড়াইনি। আমি চেষ্টা করি যতটুকু সম্ভব কম রাখতে।’

খানিকটা ভালোমানের হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোয়ও পড়েছে মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব। কয়েকদিন আগেও যে সয়াবিন প্রতি লিটার কিনেছি ১৬০ টাকায় এখন তা ১৯৮ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এভাবে চললে হোটেল ব্যবসা করে লাভ তো দূরের কথা, জমি বাড়ি বিক্রি করে পাওনা মেটাতে হবে জানান, শহরের হোটেল মালিক আব্দুল বাছিত বাচ্চু।

শহরের বাইরের এলাকার একটি খাবার হোটেলের ম্যানেজার জসিম মিয়া বলেন, ‘মূল্যবৃদ্ধির কারণে গত কয়েকদিন ধরেই লোকসান হচ্ছে। দামও বাড়াতে পারছি না। খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দিয়ে চলছে টিকে থাকার চেষ্টা।’

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের সহকারী পরিচালক আল আমিন জানান, এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে আমি তদারকি অভিযান পরিচালনা করে দাম বৃদ্ধির সত্যতা পেয়েছি। তাদের কোনো জরিমানা না করে বুঝিয়ে বলেছি, দাম যেন তারা সহনীয় রাখেন। ন্যায্যমূল্য ঠিক রাখতে আমাদের তদারকি অভিযান অব্যাহত রাখব।

মন্তব্য

Beta version