উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। আর দেশের মেগা এ প্রকল্প ঘিরে মুন্সীগঞ্জের অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। নতুন মাত্রা যোগ হতে যাচ্ছে এ অঞ্চলের অর্থনীতি ও সাধারণ মানুষের জীবনমানে। পদ্মা সেতুতে যাতায়াতে নির্মিত ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েও দৃষ্টি কাড়বে সবার।
#জমির দাম বেড়েছে ৫ থেকে ২০ গুণ
পদ্মা সেতু চালুর পর যাতায়াতের সুবিধার সঙ্গে এ অঞ্চলে বসতি স্থাপনে আগ্রহ বাড়বে অন্য অঞ্চলের মানুষের। তাই ইতোমধ্যে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং, শ্রীনগর ও সিরাজদীখান উপজেলার এক্সপ্রেসওয়ের আশপাশে জমির দামও বেড়েছে বেশ কয়েকগুণ। উপজেলা প্রশাসন ও জমির ক্রেতা-বিক্রেতাদের মতে, জমির দাম বেড়েছে অন্তত ৫ থেকে ২০ গুণ।
এদিকে পদ্মা সেতু ঘিরে এ অঞ্চলে জমি কেনাবেচার হিড়িক পড়েছে বেশ আগে থেকেই। অনেক হাউজিং প্রকল্পও ইতোমধ্যে এ অঞ্চলে প্লট ও ফ্ল্যাট বিক্রির উদ্দেশে জমি কিনেছেন। জেলার তিনটি উপজেলাজুড়ে এখন কেবল হাউজিং প্রকল্পগুলোর সাইনবোর্ড দেখা যাচ্ছে। ফসলি জমিতে হাউজিং প্রকল্পের সারি সারি সাইনবোর্ড দেখে যে কেউ বুঝতে পারবেন এখানে আবাসন শিল্পের নতুন দ্বার উন্মোচন হতে চলেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করলে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং, শ্রীনগর ও সিরাজদীখান উপজেলার ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে সংলগ্ন এলাকায় ফসলি জমি ক্রয় করেন বিভিন্ন হাউজিং গ্রুপ তথা কোম্পানি। এর মধ্যে মডার্ন গ্রিনসিটি, আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ, স্বপ্নধারা, পুষ্পধারা, বিক্রমপুর মডেল টাউন, আইডল সিটি, মাতৃভূমি সিটি, সাউথ ঢাকা, ধাত্রী প্রোপার্টিজ লিমিটেড, মেরিনি গ্রুপ ও দখিনাচল-প্রভৃতি কোম্পানির বিলবোর্ড ও সাইনবোর্ড এক্সপ্রেসওয়ের দুই পাশেই চোখে পড়ার মতো।
শ্রীনগর উপজেলার হাষাড়া গ্রামের মো. আক্কাস আলী বলেন, ১০ বছর আগে আমাদের এখানে শতাংশ প্রতি ভরাট জমি বিক্রি হতো ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকয়। পদ্মা সেতু ঘিরে এখন এক্সপ্রেসওয়ের দুই পাশের নিচুু জমি বিক্রি হচ্ছে শতাংশ ৩ থেকে ৪ লাখ টাকায়। তিনি কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন, বড় সড়ক নির্মিত হওয়ায় রাজধানীর অনেক ধনাঢ্য ব্যক্তি বাড়ি গড়ে তুলতে এখানে জায়গা কিনছেন। এ ছাড়া হাউজিং প্রকল্পগুলো এখানে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন।
সিরাজদীখান উপজেলার কসমেটিক ব্যবসায়ী শামীম বেপারি বলেন, পদ্মা সেতু ঘিরে সড়ক পথের ব্যাপক উন্নয়ন সাধন হয়েছে। আগে যেখানে ঢাকা যেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লাগত। এখন সেখানে মাত্র ৩৫ থেকে ৪০ মিনিটেই যাওয়া-আসা যায়। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগেই ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে গেছে। এ সুবিধা তো বছর খানেক আগে থেকেই পাচ্ছি। কাজেই এ সেতু ঘিরে এখানে জমির দাম বাড়তে থাকে হু হু করে।
জেলার শ্রীনগর উপজেলার বীরতারা গ্রামের আরিফ হোসেন বলেন, ১০ বছরের ব্যবধানে জমির দাম বেড়েছে বেশ কয়েকগুণ। এক্সপ্রেসওয়ের পাশে এখন ফাঁকা জায়গা নেই। তাই একটু গ্রামের ভেতর গেলে শতাংশ প্রতি ৩ থেকে ৪ লাখ টাকায় জমি পাওয়া যাচ্ছে। তাও নিচু জমি। আর সেই জমি কিনে ভরাট করে আমি বিক্রি করছি ৭ থেকে ৮ লাখ টাকায়। ঢাকার জমির কোম্পানির লোকজন সেই জমিই বিক্রি করছেন ১৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা শতাংশ প্রতি।
মডার্ন গ্রিনসিটির নির্বাহী পরিচালক লায়ন নুসরাত জাহান নাসফি বলেন, আমরা যখন প্রথমে এ অঞ্চলে জমি কিনতে শুরু করি তখন জায়গার দাম অনেক কম ছিল। বর্তমানে ছয় বছরের ব্যবধানে দাম বেড়েছে বেশ কয়েকগুণ। আর বেশি দামে জমি কিনতে হলে বেশি দামেই বিক্রি করতে হবে।
জেলার সিরাজদীখান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসনিম আক্তার বলেন, পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়ে নির্মিত হওয়ায় সিরাজদীখানে জমির দাম অনেক গুণ বেড়েছে। আগের তুলনায় ৫ গুণ বেড়েছে। এক্সপ্রেসওয়ে হওয়াতে যাতায়াতের ক্ষেত্রে ভোগান্তি কমেছে। পদ্মা সেতু ঘিরে সিরাজদীখানে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হয়েছে।
জেলার লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল আউয়াল বলেন, ২০০৫ সালে পদ্মা সেতু নির্মাণযজ্ঞ শুরু হয়। সে সময়ের হিসাব করলে বর্তমানে জায়গার দাম বেড়েছে ২০ গুণ। লৌহজং উপজেলায় মূল সড়কের পাশে যেসব জায়গা রয়েছে তার দাম শতাংশ প্রতি ৮ লাখ টাকার নিচে নেই। পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে জীবন যাত্রার মান যেমন বাড়ছে, তেমনি জায়গার দামও বাড়ছে।
মন্তব্য