-->
শিরোনাম

জন্ম-মৃত্যু সনদ আইডির পাসওয়ার্ড ঝুঁকিতে

আমীর হামজা, হবিগঞ্জ
জন্ম-মৃত্যু সনদ আইডির পাসওয়ার্ড ঝুঁকিতে
প্রতীকী ছবি

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সচিবদের সরকারি আইডি ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে ইউপি সচিবদের আইডির পাসওয়ার্ড উদ্যোক্তাদের কাছে থাকায় তারা আইডিটি ব্যবহার করতে পারছেন। এই আইডি ব্যবহার করে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জন্মনিবন্ধন সনদ ও মৃত্যু সনদ তৈরিসহ বিভিন্ন কাজ করছেন উদ্যোক্তারা।

উদ্যোক্তাদের দাবি, সচিবদের কাজের চাপ কমাতে নানা বিষয়ে সহযোগিতার জন্য সচিবরাই তাদের আইডির পাসওয়ার্ড দিয়েছেন। আর সচিবদের দাবি, নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মৌখিক নির্দেশে তারা উদ্যোক্তাদের পাসওয়ার্ড দিয়েছেন। তবে তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি এই গুরুত্বপূর্ণ আইডিটি বেসরকারি লোকের নিয়ন্ত্রণে থাকা বড় ধরনের ঝুঁকি। তাই দ্রুত এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ছয় মাস ধরে নবীগঞ্জের সবক’টি ইউনিয়নের সচিবদের সরকারি আইডির পাসওয়ার্ড ইউনিয়নের ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাদের কাছে রয়েছে। তারা এই আইডি ব্যবহার করে জনগণকে বিভিন্ন সেবা দিয়ে আসছেন। এমনকি বর্তমান সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও গোপনীয় জন্ম ও মৃত্যু সনদও তারা তৈরি করছেন। শুধু ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে নয়, তারা এই আইডি ব্যবহার করে নিজ বাড়িতে বসে জন্মসনদ তৈরির কাজ করছেন।

অভিযোগ রয়েছে, তাদের কাছে জন্ম সনদের দায়িত্ব যাওয়ার পর থেকেই বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে জনগণকে। এমনকি বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের জন্ম সনদ তৈরিতে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে যে চুক্তি করা হয় সেখানে ডিজিটাল সেন্টারকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে সেখানে সচিবদের সরকারি আইডি নিয়ন্ত্রণ বা ব্যবহারের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।

সচিবদের আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে দীঘলবাক ইউনিয়নের ডিজিটাল সেন্টারের পরিচালক মনসুর আহমেদ বলেন, ‘ইউপির সচিবদের বিভিন্ন কাজ রয়েছে। এসব কাজ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় তাদের। আবার বর্তমানে জন্মসনদ তৈরির জন্য পরিষদে প্রচুর চাপ। তাই আমরা সচিবদের আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করছি।’

পানিউমদা ইউনিয়নের ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা জুনায়েদ আহমেদ বলেন, ‘আমি সচিব সাহেবের আইডির পাসওয়ার্ড জানি না। কাজের প্রয়োজনে সচিব সাহেব আমার কম্পিউটারে পাসওয়ার্ড দিয়ে আইডি খুলে দেন। তখন আমি কাজ করি।’

রাতে নিজ বাড়িতে সচিবের আইডি ব্যবহারের বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘দিনের বেলা আইডিতে প্রচুর চাপ থাকে। তাই কাজ করতে সমস্যা হয়। জনগণ যেন ভোগান্তিতে না পড়েন সেজন্য রাতে নিজের বাড়িতে কাজ করতে হয়।’

আউশকান্দি ইউনিয়নের উদ্যোক্তা ও জেলা উদ্যোক্তা সমিতির সভাপতি রনজিত সূত্রধর বলেন, ‘কাজে প্রয়োজনে আমাদের সচিব সাহেবদের আইডি ব্যবহার করতে হয়। তবে এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা হয়নি। উদ্যোক্তারা দায়িত্ব নিয়েই কাজগুলো করছেন।’

তিনি বলেন, ‘জনগণের ভোগান্তি কমাতে আমাদের রাত-দিন কাজ করতে হচ্ছে। এরপরও জনগণের অভিযোগের সীমা নেই। আমার জানা মতে কোনো উদ্যোক্তা সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারি নির্ধারিত ফির চেয়ে অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছেন না।’

এ ব্যাপারে সবক’টি ইউনিয়ন সচিবদের ভাষ্য এক। তারা বলছেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে উদ্যোক্তাদের আইডি-পাসওয়ার্ড দেওয়া হয়েছে। তবে উদ্যোক্তাদের কাছে পাসওয়ার্ড থাকার পর থেকে তারা উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সচিব বলেন, ‘উদ্যোক্তা সরকারি কোনো কর্মকর্তা না। এখন আমার আইডি ব্যবহার করে যদি উদ্যোক্তা কোনো অপরাধমূলক কাজ করে তাহলে এর দায় আমার ওপর যাবে। যেহেতু আইডিটি আমার, আমার আইডি একমাত্র আমার কাছে থাকা দরকার।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের সচিবদের কাজ যেহেতু বেশি তাই জন্ম-মৃত্যু সনদের কাজ করতে সমস্যা হতেই পারে। তবে সে ক্ষেত্রে বর্তমানে প্রতিটি ইউনিয়নে হিসাবরক্ষক কাম কম্পিউটার অপারেটর রয়েছে। তাদের আলাদা আইডি তৈরি করে জন্ম-মৃত্যু সনদ তৈরির দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে।’

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ মহিউদ্দিন বলেন, ‘উদ্যোক্তারা প্রচুর শ্রম দেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরিতে তাদের ভূমিকা অপরিসীম। সচিবদের কাজের চাপ কমাতে উদ্যোক্তাদের এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।’

মন্তব্য

Beta version