-->
শিরোনাম
কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা লাগানো শুরু

কুমিল্লা সিটিতে ৮৫ শতাংশ কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ

মাহফুজ নান্টু, কুমিল্লা
কুমিল্লা সিটিতে ৮৫ শতাংশ কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন ভবন (ছবি: সংগৃহীত)

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিন যত এগিয়ে আসছে তত জমজমাট হচ্ছে প্রচার। নানারকম হিসাব কষছেন প্রার্থী ও সমর্থকরা। ১৫ জুন কুমিল্লা সিটির ২৭ ওয়ার্ডের ১০৫টি ভোটকেন্দ্রে ভোট নেওয়া হবে। এর মধ্যে ৮৯টি কেন্দ্রকে ঝুঁঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে জেলা পুলিশ।

গত বছর কুমিল্লা নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর সৈয়দ সোহেল ও তার এক সঙ্গীকে প্রকাশ্যে গুলিতে হত্যা করা হয়। এ ছাড়া গত কয়েক বছরে ২৪, ২৫ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে আধিপত্য বিস্তারের জেরে কয়েকটি খুনের ঘটনা ঘটে। এসব কারণে সদরের ১৬, ১৭, ২৪, ২৫ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের সবক’টি কেন্দ্রকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করা হচ্ছে।

এ ছাড়া সদর দক্ষিণের ৯টি ওয়ার্ডের ৩২টি ভোটকেন্দ্রের সবই আছে ঝুঁঁকির তালিকায়। ঝুঁঁকি বিবেচনায় যা-ই হোক, সব কেন্দ্রকেই সমান গুরুত্ব দিয়ে নিরাপত্তা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম তানভীর আহমেদ।

তিনি বলেন, ‘ঝুঁঁকিপূর্ণ কিংবা কম ঝুঁকিপূর্ণ নয়, আমরা সব কেন্দ্রকেই সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করব। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে নির্দিষ্টসংখ্যক পুলিশ, এপিবিএন, আরআরএফ ও আনসার সদস্য মোতায়েন থাকবে। ভোটের দিন নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে ভোটকেন্দ্রগুলোসহ পুরো কুমিল্লা নগরী।’

রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরী বলেন, ‘আমরা সব কেন্দ্রকেই সমান গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছি। কোনো কেন্দ্রকেই কম গুরুত্ব দেয়া হবে না। নির্বাচন সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ করতে নির্বাচন কমিশন সচেষ্ট আছে। আমরা চেষ্টা করছি একটি নির্বিঘ্ন নির্বাচন উপহার দিতে।’

পুলিশ জানায়, ভোটের দিন পুলিশের মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স, বিজিবির টহল টিম, রিজার্ভ ফোর্স ও ভ্রাম্যমাণ আদালত সব সময় মাঠে থাকবে। সব মিলিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ছয় হাজারের বেশি সদস্য কাজ করবে। কোনো কারণে পরিস্থিতির অবনতি হলে বুলেটপ্রুফ আর্মড পারসোনেল ক্যারিয়ার (এপিসি) ও জলকামান নামানো হবে।

১৫ জুন নগরীর প্রবেশপথে বসানো হবে পুলিশের ৭৫টি চেকপোস্ট ও ১০টি পিকেট টিম। প্রচারের সময় নগরে বসানো হয়েছে ১৫টি চেকপোস্ট ও কাজ করছে পুলিশের ২১টি টহল টিম।

জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান বলেন, ‘কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের ভোটের দিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিটি কেন্দ্রে কঠোর নিরাপত্তা থাকবে। ২৭টি ওয়ার্ডে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট ও মোট ১২ প্লাটুন বিজিবি দায়িত্ব পালন করবে। এ ছাড়া পর্যাপ্তসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে। ভোটাররা যেন নির্বিঘ্নে ভোট দিতে যেতে পারেন আমরা তার সব ব্যবস্থাই করব।’

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থী আছেন পাঁচজন। তারা হলেন আওয়ামী লীগের আরফানুল হক রিফাত, বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু, মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন কায়সার, কামরুল আহসান বাবুল এবং ইসলামী আন্দোলনের রাশেদুল ইসলাম। এ ছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১০৬ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা লাগানো শুরু

দেশে প্রথমবারের মতো নির্বাচন কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা লাগানো শুরু হয়েছে। গেল মঙ্গলবার কুমিল্লায় সিটি করপোশেন (কুসিক) নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা লাগানোর কাজ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ১২ জুনের মধ্যে সিসি ক্যামেরা ইনস্টলেশনের কাজ শেষ হবে।

গতকাল বুধবার সকালে কুসিক রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরী বলেন, ‘এবারই দেশে প্রথম কুমিল্লা সিটি নির্বাচনী ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা লাগানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে নির্বাচন কমিশন। তা বাস্তবায়ন হবে শতভাগ। স্বচ্ছতা, নিরাপত্তা জোরদারে সিসি ক্যামেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

জানা গেছে, এসব সিসি ক্যামেরার পর্যবেক্ষণে থাকবে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনারগণও। এছাড়া সিসি ক্যামেরায় পুরো নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন রিটানিং কর্মকর্তা। রিটানিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরী আরো বলেন, ১২ জুনের মধ্যে সব কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা লাগানোর কাজ শেষ হবে। কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের ১০৫টি কেন্দ্রের ৬৪০টি বুথে ক্যামেরা লাগানো হবে। এছাড়া ক্যামেরায় ভোটারদের উপস্থিতিও পর্যবেক্ষণ করা হবে।

কেন্দ্রে ও বুথে সিসি ক্যামেরা লাগানো হলেও ভোট দেওয়ার গোপন কক্ষ এই ক্যামেরার আওতামুক্ত থাকবে। এতে ভোটারদের গোপনীয়তা অক্ষুণ্ন থাকবে।

মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে ১নং ওয়ার্ডের বিষ্ণুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা লাগানোর কাজ শুরু করে নির্বাচন কমিশনের একটি টিম। একই সঙ্গে নগরীর আরো ১১টি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা লাগানোর কার্যক্রম শুরু হয়। প্রতিটি কেন্দ্রের কক্ষগুলোতে বিপ্রতীপভাবে ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে যেন কক্ষে যারা ভোট দিতে ঢুকবেন এবং যারা কক্ষে অবস্থান করবেন তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা যায়। সেক্ষেত্রে ভোট গ্রহণের জায়গাটিকে ক্যামেরার আওতামুক্ত রাখা হবে।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এসব ক্যামেরা ভোটের আগের দিন রাত থেকে শুরু করে ফল ঘোষণা পর্যন্ত চালু থাকবে। এ সময়ের মধ্যে কেন্দ্রের সব কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা হবে।

কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি জহিরুল হক দুলাল বলেন, ‘নির্বাচন স্বচ্ছ করতে সিসি ক্যামেরার নজরদারি প্রার্থী ও ভোটারদের কাছে জবাবদিহিতার প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে। কোনো প্রার্থী যদি নির্বাচনে অনিয়মের চ্যালেঞ্জ করেন তাহলে আদালতের মাধ্যমে সিসি ক্যামেরা রেকর্ড পর্যবেক্ষণ সুবিধা পাবেন।’

মন্তব্য

Beta version