-->

কুসিক নির্বাচন: এখনো এলাকায় এমপি বাহার

শাহীন রহমান


কুসিক নির্বাচন: এখনো এলাকায় এমপি বাহার
প্রতীকী ছবি

কুমিল্লা-৬ আসনের এমপি বাহাউদ্দিন বাহারকে এলাকা ছাড়তে গত ৮ জুন চিঠি দেয় ইসি। কিন্তু ইসির নির্দেশের পরও এলাকা ছাড়েননি এমপি বাহার। উল্টো তিনি বলেছেন, ‘আমি নির্বাচনী প্রচারে অংশ গ্রহণ করি না। আচরণবিধি লঙ্ঘন করি না। নির্বাচনী এলাকায় অনেক কাজ আছে। আমি সেসব কাজ নিয়ে ব্যস্ত’। তবে কঠোর নির্দেশ দেয়ার পরও কাজ না হওয়ায় অনেকটা বেকায়দায় পড়েছে নির্বাচন কমিশন। আজ রোববার কমিশন এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।

নির্বাচনী এলাকা ছাড়তে ইসির চিঠি দেয়ার পরই এ বিষয়ে গত বুধবার হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করা হয়েছে। এর পেক্ষিতে নির্বাচনী এলাকা ছাড়তে নির্বাচন কমিশনের দেয়া চিঠি কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতের রুলের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন ‘সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিনের বিষয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। রুলের অনুলিপি ইসি হাতে আসেনি। আজ রোববার চিঠি পাওয়ার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

আগামী ১৫ জুন অনুষ্ঠিত হবে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন। নির্বাচনকে সামন্যে রেখে এমপি বাহার নিজ এলাকা কুমিল্লা নগরীর মুন্সেফবাড়ি বাসভবনে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তিনি এলাকা নেতাকর্মীদের দেখা সাক্ষাৎ করছেন। গোপনে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। তার বিরুদ্ধে প্রথম থেকে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। প্রথমে সতর্ক করলেও পরে চিঠি দিয়ে এলাকা ত্যাগের নির্দেশ দেয় ইসি।

এরপরও তিনি নির্বাচনী এলাকা ত্যাগ করেননি। বাহারের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ ইসিতে করেছিলেন কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু।

কুমিল্লা-৬ আসনের এমপি বাহাউদ্দিন বাহার কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছে। জানা গেছে, আসন্ন নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইরফানুল হক রিফাতের পক্ষে কাজ করছেন। নৌকার প্রার্থী জয়-পরাজয়ের ওপর তার প্রভাব প্রতিপত্তি নির্ভর করছে। এজন্য তিনি এলাকায় অবস্থান করে গোপনে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

সিটি করপোরেশন নির্বাচন আচরণবিধিমালা অনুযায়ী এমপিরা প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না।ইসিতে অভিযোগের পেক্ষিতে গত ৮ জুন তাকে এলাকা ছাড়তে চিঠি দেয় নির্বাচন কমিশন। সেখানে চিঠিতে উল্লেখ করা হয় কুমিল্লা-৬ নির্বাচনী এলাকা ত্যাগের নির্দেশনা দেয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত প্রদান কযেছেন।

এমতাবস্থায়, অনতিবিলম্বে আপনাকে উল্লিখিত নির্বাচনী এলাকা ত্যাগ করে আচরণবিধি প্রতিপালন বিষয়ে কমিশনকে সহযোগিতা করার জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ করছি। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপসচিব (নির্বাচন পরিচালনা-২) মো. আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত চিঠি ওই দিন সন্ধ্যায় এমপি বাহারকে পৌঁছে দেয়া হয়।

নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী, কোনো সংসদ সদস্য স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে প্রচারে অংশ নিতে পারেন না। সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ভোটার হলে শুধু ভোট দিতেই নির্ধারিত কেন্দ্রে যেতে পারেন। সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আচরণবিধিমালা-২০১৬-এর ২২ বিধিতে বলা আছে, সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী নির্বাচনপূর্ব নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না।

আর এ বিধিমালায় সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সংজ্ঞা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, মন্ত্রী, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, বিরোধীদলীয় উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী বা তাদের সমপদমর্যাদার কোনো ব্যক্তি, সংসদ সদস্য এবং সিটি করপোরেশনের মেয়র। বিধিমালায় আরো বলা হয়েছে, ‘তবে শর্ত থাকে যে উক্তরূপ ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ভোটার হলে তিনি কেবল তার ভোট প্রদানের জন্য ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন।

কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন ইসির অধীনে কুমিল্লা সিটি নির্বাচনই হতে যাচ্ছে প্রথম কোন নির্বাচন। একই দিনে দেশের শতাধিক স্থানীয় সরকার পরিষদের নির্বাচনের তারিখ নির্ধারিত রয়েছে। গত ২০২২ সালে ২৮ ফেব্রুয়ারি ইসিতে আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব গ্রহণ করেন তারা। প্রথম নির্বাচন হওয়ায় প্রথম থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে ইসি।

কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা শেষ হওয়ার আগে সেখানে সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে এক প্লাটুন বিজিবির সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া আচরণবিধি প্রতিপালনে দায়িত্ব পালন করছেন নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রটরা। ইসির এই কঠোর মনোভাবের মধ্যেই ঝিনাইদহ পৌরসভায় ক্ষমতাসীন দলের মেয়র পদপ্রার্থী আবদুল খালেকের প্রার্থিতা বাতিল করে দেয়া হয়েছে।

এছাড়াও চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার চাম্বল ইউপিতে নৌকার প্রার্থীর আচরণের জন্য ওই নির্বাচন স্থগিত ও প্রার্থীর বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে এই কঠোর সিদ্ধান্তের মধ্যে ইসির আদেশ অমান্য করায় প্রথমেই চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে ইসি।

বিশেষজ্ঞরা কুমিল্লা সিটিতে এমপি বাহারের বিষয়টি কঠোর হাতে মোকাবিলা করতে না পারলে প্রথম নির্বাচনেই হোঁটচ খেতে হবে ইসিকে।

মন্তব্য

Beta version