কুড়িগ্রামে ১৬টি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গত দুদিন ধরে বিশুদ্ধ পানি আর রান্না করা খাবারের সংকটে রয়েছেন ৬ উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক পানিবন্দি মানুষ। খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন এসব বানভাসীরা।
ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, ও দুধকুমারের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার ৯ উপজেলার মধ্যে কুড়িগ্রাম সদর, উলিপুর, ফুলবাড়ী, চিলমারী, নাগেশ্বরী, রাজারহাট মিলে ৬ টি উপজেলার চরাঞ্চলগুলোর ঘর-বাড়ি তলিয়ে গেছে।
শুক্রবার (১৭ জুন) বিকেলে সরেজমিনে বানভাসী এলাকাগুলো ঘুরে দেখা যায়, জেলার ২৫ টি ইউনিয়নের শতাধিক চর পানিতে প্লাবিত হয়েছে। লোকজন বাঁচার তাগিদে ঘরের চালে, মাঁচা ও নৌকায় আশ্রয় নিয়েছেন। টিউবওয়েল গুলো পানিতে ডুবে যাওয়ায় চরম সংকট দেখা দিয়ে বিশুদ্ধ খাবার পানির। পাশাপাশি শুকনো খাবার খেয়ে কোনমতে দিন পার করছেন এসব বানভাসীরা।
উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মশালের চরের হাসান আলী জানান, কোন রকমে ঘরের মাঁচান উঁচু করে বউ বাচ্চা নিয়ে আছি। যেভাবে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে আর ঘরে থাকারও উপায় থাকবে না।
জেলা সদরের পোড়ার চরের বাসিন্দা ফয়জার আলী বলেন,' দুদিন থেকে কোনমতে শুকনা চিড়্যা খায়া আছি, ভাত কি জিনিস চোখে দেখিনি। নদির পানি খাওয়া নাগে।'
চিলমারীর অষ্টমীরচর ইউনিয়নের খোর্দ বাশপাতার বাসিন্দা খোদেজা বেওয়া বলেন,' দুদিন থাকি পানি বাড়বেইছে (বাড়তেছে) । ঘরের উপরে মাঁচা করি আছি, হামার কষ্ট কাই্যও(কেউ) দেখে না।'
অষ্টমীরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বলেন, 'নদীর পানি হু হু করে বাড়তেছে। বন্যা কবলিত লোকজনের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। বন্যার্তদের সাহায্যার্থে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।'
শনিবার (১৮ জুন) কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস জানায়, ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমা ২২ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমা ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি ২৩ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে ৭ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
অন্যদিকে, পানির তোড়ে নাগেশ্বরী উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নে দুধকুমার নদীর তীর রক্ষা বাঁধের ১শ মিটার ভেঙ্গে প্লাবিত হয়ে পড়েছে কয়েকটি গ্রাম।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন নাগেশ্বরী উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের ১শ মিটার বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন,'উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের পুর্বাভাস থাকায় নদ-নদীর পানি আরো বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।'
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, বন্যা দুর্গতদের উদ্ধারে প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্পিড বোট, নৌকা এবং আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উপজেলাগুলোতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দসহ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য