-->
পদ্মা সেতু

পদ্মা সেতু চালু হলে মোংলা বন্দরে বাড়বে কর্মব্যস্ততা

মো. কামরুজ্জামান, বাগেরহাট
পদ্মা সেতু চালু হলে মোংলা বন্দরে বাড়বে কর্মব্যস্ততা

বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলা। প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ধীরে ধীরে বন্দরটি লাভজনক বন্দরে রূপান্তরিত হয়েছে। পদ্মা সেতু চালু হলে রাজধানী ঢাকা থেকে সবচেয়ে কাছের সমুদ্রবন্দর হবে এটি।

পদ্মা সেতুর সুফলে অচিরেই মোংলা বন্দর বিশ্বের অন্যতম বন্দর হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। পাল্টে যাবে এই অঞ্চলের মানুষের জীবনমান। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবে কয়েক লাখ মানুষ।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচল শুরু হলে মোংলা বন্দরের কর্মব্যস্ততা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। গতি আসবে আমদানি-রপ্তানি কাজে। বন্দরের আশপাশে গড়ে উঠবে নতুন নতুন শিল্পকারখানা।

এতে চাপ বাড়বে বন্দরের। এ কারণে কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে কয়েক গুণ। বর্তমানে মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ৮ হাজার ৮৫২ কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে ৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে।

বর্তমানে মোংলা বন্দরে ৬টি জেটি, ৩টি মুরিং বয়া, ২২টি অ্যাংকোরেজ এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন ১১টি প্রতিষ্ঠানের জেটির মাধ্যমে মোট ৪২টি জাহাজ একসঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ৪টি ট্রানজিট শেড, ২টি ওয়্যারহাউস, ৪টি কনটেইনার ইয়ার্ড, ২টি কার ইয়ার্ডের মাধ্যমে বার্ষিক ১ কোটি মেট্রিক টন কার্গো, ১ লাখ ব্যবহৃত কনটেইনার এবং ২০ হাজারটি গাড়ি নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা রয়েছে বন্দরের।

এদিকে পদ্মা সেতু চালু হলে মোংলা থেকে ঢাকায় একটি গাড়ি নিতে সময় লাগবে তিন ঘণ্টা। ফলে সময় বাঁচার পাশাপাশি খরচও কমবে ব্যবসায়ীদের।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে মোংলা বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানি শুরু হয়। ওই বছর গাড়ি এসেছিল মাত্র ২৫৫টি। তবে চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) মে মাস পর্যন্ত এ বন্দর দিয়ে দেশে গাড়ি আমদানি করা হয়েছে ২০ হাজার ৯টি।

মোংলা কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ নেয়াজুর রহমান বলেন, ‘মোংলা বন্দর থেকে সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব পায় তার ৫২ শতাংশ আসে গাড়ি আমদানির কর থেকে। চলতি অর্থবছরে আমাদের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা।

তবে ১১ মাসে (মে, ২০২২ পর্যন্ত) আমাদের রাজস্ব আয় হয়েছে ৪ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। পদ্মা সেতু চালু হলে বন্দরে বাড়বে আমদানি-রপ্তানি, ফলে সরকারের রাজস্বও বৃদ্ধি পাবে।’

বাগেরহাট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে মোংলা বন্দর এলাকায় ছোট-বড় মিলে ৩৮৬টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। শুধু পদ্মা সেতুর কারণে অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান এখানে জমি ক্রয় করেছে। তাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাজ চলমান রয়েছে। যার ফলে এ অঞ্চলে শিল্প বিপ্লব শুরু হবে। বেকারত্ব দূর হওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে কয়েক লাখ মানুষের।’

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মূসা বলেন, ‘মোংলা বন্দরের সক্ষমতা কয়েক বছরে বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়াও বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ৮টি প্রকল্পের কাজ চলমান। এসব কাজ শেষ হলে বন্দরের সক্ষমতা আরো বৃদ্ধি পাবে। পদ্মা সেতু চালু হলে ঢাকা থেকে এ বন্দরের দূরত্ব হবে ১৭০ কিলোমিটার।’

তিনি আরো বলেন, ‘অপরদিকে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ঢাকার দূরত্ব ২৬০ কিলোমিটার এবং পায়রা বন্দর থেকে ঢাকার দূরত্ব ২৭০ কিলোমিটার। ফলে আমদানি-রপ্তানিকারকরা বাণিজ্যিক স্বার্থে মোংলা বন্দর ব্যবহার করবে।’

নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোস্তফা কামাল বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মোংলা বন্দর ব্যবহারের চাহিদা ও গুরুত্ব বেড়ে যাবে। একই সঙ্গে রেললাইন চালু হতে যাচ্ছে। ফলে এই অঞ্চলের পুরো চিত্রই বদলে যাবে।’

মন্তব্য

Beta version