-->
বন্যা পরিস্থিতি

তিস্তা ও ধরলার পানি কমলেও বেড়েছে বন্যার্তদের দুর্ভোগ

লালমনিরহাট প্রতিনিধি
তিস্তা ও ধরলার পানি কমলেও
বেড়েছে বন্যার্তদের দুর্ভোগ

লালমনিরহাটে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কিন্তু উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর গত কয়েক দিনের অবিরাম ভারি বর্ষণে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতিতে দুর্ভোগ বেড়েছে।

জেলার ৫ উপজেলার প্রায় ২০ হাজার পরিবারের কমপক্ষে ৫০ হাজার মানুষ বিপাকে পড়েছেন।

জানা যায়, লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোলা পলাশী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, কাকিনা, হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুরনা, পাটিকাপাড়া, সিংগীমারী, সিন্দুর্না ইউনিয়নের বন্যার কবলে মানুষেরা দুর্ভোগে দিন কাটাছেন।

এসব এলাকার মানুষের অধিকাংশের বাড়িঘরে পানি উঠে যাওয়া, আবার কোথাও কোথাও বাড়িঘরে পানি না উঠলেও চারদিক বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাপন।

আদিতমারী উপজেলার চর গোবর্ধন এলাকাবাসী জানান, চারদিকেই নদী আর পানি বেষ্টিত থাকায় প্রায় এক হাজার পরিবার রয়েছে চরম হতাশায়। গর্ভবতী মায়েরা সন্তান প্রসবের সময় হয়ে এলে বা অসুস্থ মানুষের নদীর ওপারে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া কোনো ক্রমেই সম্ভব হয়ে উঠবে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন এমন অবস্থায় নদী পারাপারের জন্য নৌকার ব্যবস্থা করেন- এমনটাই দাবি তাদের।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার বনগ্রামের আমেনা বলেন, সবাই আসে আর ছবি তুলে নিয়ে যায়। কিন্তু মেম্বার-চেয়ারম্যান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন, এমনকি ইউএনও-টিএনও খোঁজ নিতে আসে না।

বন্যা এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। এখনো তারা কোনো ত্রাণ সহায়তা পায়নি। কয়েকদিন ধরে পানি বন্দি থাকা এসব মানুষ চুলোয় আগুন জ্বালাতে পারছে না। তাদের অনেকেরই দু’বেলা খাবার মতো ব্যবস্থাও ফুরিয়েছে। এখন পর্যন্ত কারও কাছ থেকে কোনো খাদ্য সহায়তাও মেলেনি।

তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী জানান, গত বছরের বন্যার ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই বর্ষা মৌসুমের আগেই তিস্তা নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। এখন তিস্তা তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ঘরবাড়ি, গাছপালা, ফসলি খেতসহ অনেকের বসত ভিটা তিস্তার পেটে চলে গেছে।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান জানান, চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে জেলার কোনো বাঁধ এখনো ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে এবং তারা সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। বর্তমানে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর জানান, বন্যা কবলিতদের জন্য ইতোমধ্যেই ১৫০ মে. টন জিআর এর চাল, শুকনা খাবার ও অন্যান্য জরুরি সেবার জন্য ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। জেলার ৫ উপজেলার সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা সমন্বয়ের মাধ্যমে বন্যা কবলিতদের তালিকা তৈরি করে তা বিতরণ করবেন।

মন্তব্য

Beta version