-->

‘চিড়া-মুড়ি আর ভালো লাগে না, ভাত খাইতে মন চায়’

কামরুল ইসলাম মাহি, সিলেট
‘চিড়া-মুড়ি আর ভালো লাগে না, ভাত খাইতে মন চায়’

সিলেট নগরীর চালিবন্দর এলাকার বাসিন্দা প্রভাসীনিকর। বয়স ৬০ বছর। সংসারে ছেলে, পুত্রবধূ আর দুই নাতি। অভাবের সংসার। বিভিন্ন মেসে কাজ করে মাসে হাজার তিনেক আয় করেন, তাতে দুবেলা ভাত খেয়ে কোনোরকম চলছিল জীবনের চাকা।

তবে গত চার দিন ধরে চুলায় আগুন জ্বলেনি। ক্ষুধা মেটাতে চিড়া-মুড়িতেই সীমাবদ্ধ। ভয়াল বন্যায় বুকসমান পানি উঠেছে বাসায়। ঠাঁই হয় নগরের রামকৃষ্ণ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রে।

সোমবার দুপুরে আশ্রয়কেন্দ্রে কথা হয় এই বৃদ্ধার সঙ্গে। জানান, ‘শুক্রবার রাতে হঠাৎ করে তার বাসায় পানি উঠে। সারারাত খুব কষ্টে ছিলেন। পানিতে ভেসে যায় আসবাবপত্র। জীবন বাঁচাতে আশ্রয় নেন বিদ্যালয়ে। কবে বাসায় ফিরবেন তাও জানেন না।’

তিন তলাবিশিষ্ট বিদ্যালয়টির দ্বিতীয় তলায় ঠাঁই পাওয়া এই বৃদ্ধা বলেন, ‘গত চারদিন থেকে শুধু চিড়া-মুড়ি খাইছি। স্যাররা শুধু এইগুলো দেয়। এখন আর চিড়া-মুড়ি ভালো লাগে না। একটু ভাত দেন। খেয়ে শান্তি পাব।’

সিলেটে গত বুধবার বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বৃহস্পতিবার তা ভয়াবহ রূপ নেয়। পানিতে তলিয়ে যায় জেলার সবকটি উপজেলা। দ্রুত বাড়তে শুরু করে পানি। তলিয়ে যায় সিলেট নগরের বেশিরভাগ এলাকা।

নগরীর দুর্গকুমার পাঠশালায় আশ্রয়কেন্দ্রে কথা হয় ছড়ারপাড় এলাকার বাসিন্দা লিটন মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, একদিন কেবল খাবার পেয়েছিলাম। এরপর আর কিছু পাইনি। এখানে রান্নার সুযোগ নেই। তাই খুব কষ্টে আছি। আমরা না হয় যেকোনো কিছু খেয়ে ফেললাম। বাচ্চারা তো বুঝতে চায় না।

এদিকে সিলেটের প্রায় আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেওয়া বানভাসি মানুষ ভুগছেন খাবারের তীব্র সংকটে। নগরে এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো উদ্যোগে ত্রাণ তৎপরতা শুরু হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। নগরের বাইরে সেনাবাহিনী ও প্রশাসন ত্রাণ বিতরণ করলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলে জানান ভুক্তভোগীরা।

সিলেট জেলা প্রশাসনের হিসাবে, জেলায় এ পর্যন্ত ৪৯৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এতে আশ্রিত আছেন প্রায় ২ লাখ ৩১ হাজার মানুষ ও ৩১ হাজার গবাদিপশু। আর সিলেট সিটি করপোরেশনের হিসাবে নগরে ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ছয় হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান বলেন, ‘আমরা বন্যাকবলিত মানুষদের উদ্ধার ও সহায়তায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি। সেনাবাহিনীও এ ক্ষেত্রে সহায়তা করছে। তবে নৌকা সংকট ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে অনেক দুর্গম এলাকায় পৌঁছানো যাচ্ছে না। তবে আমাদের আন্তরিকতা ও চেষ্টার ঘাটতি নেই।’

তিনি জানান, এ পর্যন্ত জেলায় ৬১২ টন চাল, প্রায় আট হাজার প্যাকেট খাবার ও ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

সিলেট বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের হিসেবেই সিলেট ও সুনামগঞ্জে পানিবন্দি আছেন প্রায় ৪০ লাখ মানুষ। সিলেটের ৭০ শতাংশ ও সুনামগঞ্জের ৯০ শতাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ মানুষকে উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হয়েছে। এর আগে শুক্রবার থেকে সিলেটে এবং শনিবার থেকে সুনামগঞ্জে বানভাসি মানুষের সহায়তায় কাজ করছে সেনাবাহিনী। শনিবার থেকে তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে নৌবাহিনীও।

এদিকে রোববার থেকে সিলেটে কমতে শুরু করেছে পানি। বৃষ্টিও থেমেছে প্রায় ১০ দিন পর। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে কিছুটা কমেছে। তবে বেড়েছে কানাইঘাটে। অন্য নদীগুলোর পানি বৃদ্ধিও অব্যাহত আছে।

মন্তব্য

Beta version