-->
শিরোনাম
সিলেট ও সুনামগঞ্জ শহরের পানি কিছুটা কমছে

উত্তর এবং দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে অবনতির আভাস

উজানে কমছে বৃষ্টি

শাহীন রহমান
উত্তর এবং দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে অবনতির আভাস

উজানে বৃষ্টির প্রবণতা কমে এসেছে। আজ মঙ্গলবার থেকে উত্তর পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনার বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়ে আসতে পারে। তবে দেশের প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বাড়ায় উত্তরাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এছাড়া হবিগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির অবনতির পূর্বাভাসও দেওয়া হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলেন, জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে ভারতের আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরায় ভয়াবহ বৃষ্টি শুরু হয়। এর প্রভাবে দেশের ভেতরে সিলেট, সুনামগঞ্জ নেত্রকোনাও প্রবল বৃষ্টিপাত হয়। হঠাৎ এই ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে এবং উজান থেকে নেমে আসা পানিতে সিলেট বিভাগের অধিকাংশ এলাকায় ডুবে গেছে। ভয়াবহ বন্যার কারণে সেখানে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এদিকে সিলেট ও সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক জানান, বন্যার পানি নামতে শুরু করলেও এখনো লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। রাস্তাঘাটে পানি উঠে যাওয়ায় গত কয়েকদিন সুনামগঞ্জের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ ছিল।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, রাস্তা থেকে পানি কিছুটা নেমে যাওয়ায় রোববার রাতেই সিলেট থেকে কয়েকটি গাড়ি জরুরি সেবা নিয়ে সুনামগঞ্জে পৌঁছেছে। তবে অধিকাংশ জায়গায় পানি নামতে থাকলেও এখনো জেলার অনেক স্থানেই মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। এদিকে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতিরও উন্নতি হতে শুরু করেছে। সিলেটের সঙ্গে যোগাযোগ স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। সিলেট শহরের অধিকাংশ রাস্তাঘাট থেকে পানি নেমে গেছে, তবে শহরের অনেকাংশেই এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ নেই বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, উজানে ভারী বৃষ্টির কারণে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা, ধরলা ও দুধকুমারসহ সব প্রধান নদ-নদীর পানি বুধবার পর্যন্ত বাড়বে। পাশাপাশি দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। ফলে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলার নদ-নদীগুলোর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে।

তারা জানায়, গতকাল সোমবার পর্যন্ত দেশের ৯ নদীর ১৯ পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, ধরলা, ঘাঘট, সুরমা, কুশিয়ারা, খোয়াই, পুরাতন সুরমা এবং সোমেশ্বরী নদীর ১৯ পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। তবে সারিগোয়াইন, খোয়াই, পুরতন সুরমা ও কংশ নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে নেমেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থা আছে খোয়াই নদীর বাল্লা পয়েন্টের পানি। সেখানে পানি বিপৎসীমার ১১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।

এছাড়া ব্রহ্মপুত্র নদের হাতিয়া পয়েন্ট এবং পুরাতন সুরমার দেরাই পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ১০২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি অথবা ওপরে অবস্থান করতে পারে। ফলে এই সময়ে মধ্যে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর ও টাঙ্গাইল জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অতি ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলার নদ-নদীগুলোর পানি বেড়ে বন্যার অবনতি হতে পারে।

ভারতের আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার মেঘালয়ের পূর্ব খাসি হিলস এলাকার চেরাপুঞ্জিতে একদিনেই ৯০৮.৪ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। ১৯৯৮ সালের পর জুন মাসের কোনও দিনে চেরাপুঞ্জিতে কখনো এত বৃষ্টি হয়নি। মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি-মৌসিনরাম এমনিতেই পৃথিবীতে সবচেয়ে বৃষ্টিবহুল এলাকা হিসেবে পরিচিত। এবার চলতি জুন মাসেই অন্তত নয়বার চেরাপুঞ্জিতে দৈনিক ৮০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে। উজানে এই নজিরবিহীন অতিবৃষ্টি আর ব্রহ্মপুত্র, বরাকসহ বিভিন্ন নদীর বিপুল পানি ফুলে ওঠায় ভাটির দেশ বাংলাদেশে বন্যার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, সিলেট ও সুনামগঞ্জে জুন মাসে বন্যা হবে বলে ধারণা করা হলেও তার মাত্রা যে এত ভয়াবহ হবে, সেটা ভাবতেও পারেননি। ফলে এত ভয়াবহ বন্যার জন্য প্রস্তুতি নেওয়াও সম্ভব হয়নি। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া বলেন, বন্যার বিষয়ে আমরা আগে আঁচ করতে পেরেছিলাম। তবে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ যে এত বেশি হবে, সেই আইডিয়া ছিল না। ভারী বৃষ্টি যে হবে, সেই ইঙ্গিত পেয়েছিলাম। জুন মাসের শুরু থেকেই যে সতর্কতা দেওয়া হয়েছিল, সেখানে প্রতিদিনই এই ধরনের ইঙ্গিত ছিল।

তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মূল দায়িত্ব জাতীয় পর্যায়ে এ বিষয়ে সতর্কবার্তা দেওয়া, সেই দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করেছি। এর আগেও এই এলাকায় এপ্রিল ও মে মাসে দুই দফা বন্যা হয়েছিল। তবে তা ভয়াবহ হয়ে ওঠেনি। কিন্তু সেই বন্যা এবং জুন মাসের মেঘালয় ও আসামে অতিবৃষ্টি, সিলেট-সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ করে তুলেছে।

তিনি বলেন, এবার পানি সরতে পারেনি। সেই সঙ্গে মেঘালয়ে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি হয়েছে। সেসব কারণে বন্যাটা হঠাৎ করে প্রবল হয়ে গেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আতিকুল হক বলেন, বন্যা হতে পারে, অতিবৃষ্টি হতে পারে- সেই পূর্বাভাস ছিল। কিন্তু এটা একটা অস্বাভাবিক বন্যা। প্রতিবছর মে মাসের শুরুর দিকে একটা ফ্ল্যাশ ফ্লাড আমরা দেখি। এবারও আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে একটা সতর্কীকরণ দেওয়া হয়েছিল যে, উজানে অতি বৃষ্টিপাত হতে পারে। কিন্তু বৃষ্টিপাতের লেভেল কত হতে পারে, সেটা তারাও বলেনি, আমরাও প্রেডিক্ট করিনি।

মন্তব্য

Beta version