-->

সিংগাইরে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি
সিংগাইরে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ

মানিকগঞ্জ : সিংগাইরে প্রধানমন্ত্রীর উপপহারের ২২৬টি ঘর নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে এসব ঘর নির্মাণে মানা হচ্ছে না সরকারি নির্দেশনা। প্রয়োজনের তুলনায় সিমেন্টের পরিমাণ কম মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ইটের গাঁথুনি। গাঁথুনির পর দেয়ালে দেয়া হচ্ছে না পর্যাপ্ত পানি। পাশাপাশি ব্যবহার করা হচ্ছে প্রাক্কলনের চেয়ে কম মিলিমিটার রড ও নিম্নমানের ইট। ফলে এসব ঘরের স্থায়িত্ব নিয়ে আশঙ্কা করছেন উপকারভোগী ও স্থানীয়রা।

 

জানা গেছে, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গৃহহীন, ভূমিহীন ও হতদরিদ্রদের মাথাগোঁজার ঠাঁই হিসেবে আশ্রয়ণ প্রকল্প নামে একটি মহতী প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। সর্বজন প্রশংসিত আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় দ্বিতীয় ধাপের ২০টি ও তৃতীয় ধাপের ২০৬টি ঘরসহ মোট ২২৬টি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে সিংগাইরের বিভিন্ন ইউনিয়নে। তড়িঘড়ি ও মাননিয়ন্ত্রণের তোয়াক্কা না করে এসব ঘরে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের ইট, বালু, সিমেন্ট, রড, খোয়া, টিন, কাঠসহ অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী।

 

তৃতীয় ধাপের প্রতিটি ঘরের জন্য ২ লাখ ৫৯ হাজার ৫০০ টাকা সরকারি বরাদ্দ রয়েছে। ১ নম্বর ইট, ভালোমানের খোয়া, ১০ ও ১২ মিলি রডসহ উন্নতমানের সব নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে ঘর নির্মাণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এসবের তদারকির জন্য একটি শক্তিশালী নির্মাণ কমিটি রয়েছে। তবে এই কমিটির অন্য কাউকে তদারকি করতে দেখা না গেলেও পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

 

সরেজমিন খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সিংগাইরের ফোর্ড নগরে ৭৫টি, ধল্লা কামুরায় ৮টি, চর চামটায় ২০টি ও চান্দহর সিরাজপুর এলাকায় ১২৩টি আশ্রয়ণের ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। বর্তমানে ৮০ শতাংশ ঘরের নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি বাকি ঘরের নির্মাণকাজ সমাপ্ত করে উপকারভোগীদের মাঝে তুলে দেয়ার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।

 

অধিকাংশ ঘরে ব্যবহার করা হয়েছে অতি নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী। গ্রেট ভিমে ১২ মিলি রডের স্থলে কোনো কোনো ঘরে ব্যবহার করা হয়েছে ১০ মিলি রড। লিংটেলে ১০মিলি ৪টি রডের  স্থলে ব্যবহার করা হচ্ছে ৩টি করে ৮মিলি রড। কলামে ৪টি ১০ মিলি রডের স্থলে একটি ১০ মিলি ও বাকি ৩টিতে ৮ মিলিমিটার রড ব্যবহার করা হয়েছে। গ্রেটভিম, কলাম ও লিংটেলে ৬ ইঞ্চি পরপর খাঁচায় রিং বাঁধানোর কথা থাকলেও ১২ থেকে ২৫ ইঞ্চি পর্যন্ত ফাঁকা রেখে রিং বাঁধানো হয়েছে।

 

এসব ঘরের চালে আলকাতরার প্রলেপ দেয়ার নির্দেশনা থাকলেও এখানে তা মানা হয়নি। অস্বাভাবিক কম ও বাংলা রড দিয়ে এসব নির্মাণ সামগ্রী উপজেলা প্রশাসন তথা নির্মাণ কমিটির মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়েছে বলে নির্মাণ শ্রমিকদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে।

 

ঘর নির্মাণ ঠিকাদার কাইমুদ্দিনের ছোট ভাই মিস্ত্রি আলমাস আলী বলেন, সিরাজপুরে ১২৩টি ঘরের মধ্যে ৪৫টি ঘর আমরা নির্মাণ করেছি। প্রতিটি ঘরের গ্রেটভিম, কলাম ও লিংটেলে ১২ ইঞ্চি পরপর খাচায় রিং বাঁধানো ও লিংটেলে ৩টি রড দেয়া হয়েছে।

 

৬ ইঞ্চি পরপর খাচায় রিং বাঁধানো ও লিংটেলে ৪টি রড ব্যবহারের নিয়মের কথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, অফিস যেভাবে বলে আমরা সেভাবেই কাজ করেছি। ফোর্ড নগরে ২৫টি ঘর নির্মাণ করেছেন সুজন মিস্ত্রি।

 

তিনি জানান, কিছু ঘরের লিংটেলে ৩ সুতা রড ও কিছু ঘরে ৪ সুতা রডের খাচা দেয়া হয়েছে। কলামে একটি ১০ মিলি ও বাকি ৩টি ৮ মিলি রড দিয়ে কাজ করা হয়েছে। এসব খাচায় ২০-২৫ ইঞ্চি ফাঁকা রেখে রিং বাঁধা হয়েছে।

 

ফোর্ড নগর আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগী চন্দ্রবান, জাহানারা, লাইলী ও রেনু বলেন, মাত্র ১৬-১৭ দিন ধরে ঘরে উঠেছি। বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে। ফ্লোর-ওয়াল ফেটে গেছে। সিঁড়ি বিচ্ছিন্ন হওয়ায় ওঠানামা করতে পারি না। জানালার ঝালাই খুলে গেছে দরজাও ঠিকভাবে লাগে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক উপকারভোগী জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুগ্রহে আমরা মাথা গোঁজার ঠাঁই পেতে যাচ্ছি।

 

ঘর নির্মাণে নম্বরবিহীন ইট, গ্রেডভিম বাঁধায়ে কম মিলি রড, লিংটেলে ৪টি রডের বদলে ৩টি রডের ব্যবহার, ঢালাইয়ে খোয়ার পরিবর্তে ‘রাবিশ’ ব্যবহার করায় ঘরগুলোর স্থায়িত্ব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তারা।

 

নির্মাণ কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবু নাছের বলেন, নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। যদি কোনো ব্যত্যয় ঘটে থাকে তাহলে পুরো ফিল্ড মনিটরিং করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

ঘর নির্মাণ কমিটির সভাপতি ও সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিপন দেবনাথ বলেন, সিডিউল অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে। নির্মাণকাজে অনিয়মের যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে তা পুরো সত্য নয়। ছবিগুলো এডিট করা।

 

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় আশ্রয়ণ-২ এর উপপ্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণে কোনো অনিয়মের সুযোগ নেই। আমি সিংগাইরে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীকে পাঠিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি।

 

ভোরের আকাশ/জেএস/

মন্তব্য

Beta version