বরিশাল : প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয়, তারাও মানুষ; তাদেরও সমাজে বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। এ রকমই একজন বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী কিশোরী তামান্না জাহানের কথা না বললেই নয়। রং তুলিতে তার রয়েছে জাদুর ছোঁয়া, রয়েছে সূচিকর্মেরও বেশ অভিজ্ঞতা।
তামান্না বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়নের শংকরপুর গ্রামের হতদরিদ্র পিতা ওবায়দুল কবির বিশ্বাস ও মাতা আফরোজা বেগমের একমাত্র সন্তান। তামান্না জাহানের বয়স ২১ এর কোঠায়। ছোটবেলাতেই ভয়াবহ অসুখে বাক ও শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলেন তিনি।
অসহায় পিতামাতা একমাত্র সন্তান নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করতে গিয়ে শেষ সম্বল ভিটেমাটিও হারিয়ে ফেলেছেন। তার পিতা বর্তমানে সম্পূর্ণ কর্মক্ষমতা হারিয়ে নিজেই সম্পূর্ণ অসুস্থ অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন। মা সন্তানের চিন্তায় বিভিন্ন অফিস ও মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। কারণ তাদের মৃত্যুর পরে প্রতিবন্ধী সন্তান যেন সমাজের বোঝা না হয়।
তামান্না ছোটবেলা থেকেই চিত্রকর্মে পারদর্শী। কোনো প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাগ্রহণ না করেও তামান্নার আঁকা বঙ্গবন্ধুর ভাষণসহ বিভিন্ন ছবি যেন জীবন্তরূপ ধারণ করেছে। শুধু তাই নয়, হাতের তুলির ছোঁয়ায় বিভিন্ন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য এঁকে চলছেন তিনি। উপকরণবিহীন মনোমুগ্ধকর ছবি নিয়ে বিভিন্ন লোককে দেখাতে পেরে যেন আনন্দ উল্লাসে ফেটে পড়ছে। কিন্তু এ আনন্দ যেন ক্ষণিকের আনন্দ। তামান্না জানে না তার ভবিষ্যৎ কোথায়। সামান্য প্রতিবন্ধী ভাতা দিয়েই চলছে তাদের সংসার।
তার মা আফরোজা বেগম বলেন, গরিবের সংসারে যেন একমাত্র প্রতিবন্ধী সন্তান জন্ম না নেয়। সন্তানকে কোথাও এতটুকু মাথা গোঁজার ঠাঁই, চাকরি অথবা বিয়ে দিতে পারলেই শান্তিতে মরতে পারতাম।
তিনি বলেন, প্রতিবন্ধীদের জন্য সরকার অনেক কিছু করেছে শুনেছি, আমাদের পাশে নেই কোনো বিত্তবান ব্যক্তি, নেই কোনো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, যার মাধ্যমে আমরা সাহায্য সহযোগিতা পেতে পারতাম। প্রশাসনসহ সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিদের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তামান্নার অসহায় পিতামাতা।
ভোরের আকাশ/জেএস/
মন্তব্য